সিরিয়া নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীরা এত কিছু বলেছেন, কিন্তু ইয়েমেন নিয়ে তো কিছু শুনছি না?
পশ্চিম এশিয়ায় ইয়েমেনে যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে, তার বিন্দুমাত্র উচ্চারণও শোনা যাচ্ছে না মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে।
এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে কিংবা পদপ্রার্থীদের বিতর্কসভায় বেশিরভাগই শোনা যাচ্ছে সে-দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা। বিদেশনীতির কথা যখন উঠছে, কথাবার্তা রাশিয়া, সিরিয়া, চিন এবং মেক্সিকোর বাইরেও খুব একটা যেতে দেখা যাচ্ছে না।
অথচ পশ্চিম এশিয়ায় ইয়েমেনে যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে, তার বিন্দুমাত্র উচ্চারণও শোনা যাচ্ছে না মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশনীতি সম্পর্কে কতটা কী জানেন তা তিনিই জানেন আর অন্যদিকে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবাদে মার্কিন বিদেশনীতির ব্যাপারে বক্তব্য রাখছেন খুব মেপেজুকে।
গত ৮ই অক্টোবর, মার্কিন নির্বাচনের ঠিক একমাস আগে, ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক জোট হাউদি বিপ্লবীদের উপর আক্রমণ করার লক্ষ্যে একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের উপর হামলা চালায় এবং তাতে ১৪০জন মানুষের মৃত্যু ঘটে।
আহত হয় প্রায় ষাটজন। ইয়েমেনের অবদ্রাবুহ মানসুর হাদি সরকারের সমর্থনে সৌদি আরবের জোট গত দেড় বছর ধরে সেখানকার হাউদি বিপ্লবীদের সঙ্গে অন্তহীন লড়াইতে লিপ্ত এবং প্রায় সাত হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন এই বিরামহীন সংঘর্ষে। আহত হয়েছে প্রায় ৩৫,০০০ মানুষ।
অথচ, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই দুর্ভাগ্যজনক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে (পরে বলা হয়, ভুল তথ্যের ফলেই ওই হামলা হয়) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারে একটি কোথাও শোনা গেল না। পশ্চিম এশিয়াতে সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় মিত্র দেশ আর তাই সানার ওই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে প্রাণঘাতী হামলার পরে আশা করা গিয়েছিল ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিভিন্ন মহল থেকে চাপের মুখে পড়ে আমেরিকা একটি পদক্ষেপ নেয় ঠিকই কিন্তু তা নেহাতই শুকনো, রসকষহীন। "সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা শর্তসাপেক্ষ," বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এর কিছুদিন পরে তাঁদের লক্ষ্য করা হয়েছে এই দাবি তুলে পাল্টা আক্রমণ করে হাউদিদের লক্ষ্যে।
ইয়েমেনের ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নানা আলাপচারিতায় কেন সে-দেশটির কথা একবারও শোনা যাচ্ছে না, তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞই অবাক।
পশ্চিম এশিয়ারই আরেকটি দেশ সিরিয়াকে নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে এবং সেইসব আলোচনায় বৈরী রাশিয়াকেও তুলোধোনা করা হচ্ছে (ট্রাম্প অবশ্য রাশিয়ার পক্ষে না বিপক্ষে বোঝা যাচ্ছে না) সিরিয়াতে শান্তিপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগ তুলে। অথচ ইয়েমেনে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তাদেরই কাছ থেকে কেনা অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, তা নিয়ে ভাবিত নয় কেউই।
তবে এই মুহূর্তে সুবিধামতো ইয়েমেনের পরিস্থিতি এড়িয়ে গেলেও রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার উত্তরসূরি হয়ে যেই হোয়াইট হাউসে আসুন না কেন, ওয়াশিংটনের সানা নীতি নিয়ে তাঁকে ভাবনাচিন্তা করতেই হবে।
ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা কী তা রহস্যই কিন্তু হিলারিরও এই ব্যাপারে অবস্থান কতটা বদলাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গত জুন মাসে জর্ডনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা একটি খবরে জানায় যে এবারের নির্বাচনে সৌদি আরব হিলারির প্রচারের পিছনে বড় অর্থ ব্যয় করেছে। যদিও সেই প্রতিবেদন পরে মুছে দেওয়া হয় কিন্তু তার আগেই বিভিন্ন মহলে সে খবর চাউড় হয়ে যায়। এমনকি, শোনা গিয়েছে যে বিতর্কিত ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে অনুদান পেয়েছে।
অতএব, এখন যদি হিলারির কণ্ঠে রিয়াধের বিরুদ্ধে ইয়েমেন অভিযান নিয়ে কোনও আওয়াজ না শোনা যায়, তাতে খুব একটা অবাক হওয়ার নেই।
যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণ সিরিয়ার মানুষের জন্য কাঁদছে, সেই তারাই ইয়েমেন-এর ক্ষেত্রে অন্য অবস্থান নিয়ে চলেছে। এই চক্ষুলজ্জাহীন দ্বিচারিতা কি মার্কিন জনগণের চোখে পড়েও পড়ে না?