মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে নীতীশ বোঝালেন তিনি কাঁচা খেলোয়াড় নন
২০১৪ সালের ফলের পর নীতীশকুমার বুঝেছেন যে শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে মোদীকে হারানো সহজ নয়। আগে মোদীর মতো নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
২০১৪ সালের ফলের পর নীতীশকুমার বুঝেছেন যে শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে মোদীকে হারানো সহজ নয়। আগে মোদীর মতো নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
এমনিতে তাঁকে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী নেতা হিসেবেই ধরা হয়। গত লোকসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে বিজেপি তথা এনডিএতে মোদির উত্থান সহ্য না করতে পেরে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে তিনি এনডিএ-র সঙ্গে প্রায় দু'দশকের সম্পর্ক ত্যাগ করেন।
অবশ্য তার খেসারতও তাঁকে দিতে হয় পরবর্তী লোকসভা ভোটে। নিজের রাজ্য বিহারেই তাঁর দল জেডিইউ মুখ থুবড়ে পড়ে। কিনতু, নীতীশকুমার যে সহজেই হেরে যাওয়ার পাত্র নন, তা তিনি যখন ২০১৫ সালের বিহার নির্বাচনে। লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেও নীতীশকুমার আবার পাটনার গদিতে ফেরেন গত বছর, শত্রু থেকে মিত্রতে পরিণত হওয়া লালুপ্রসাদের সঙ্গে জোট বেঁধে। ২০১৪-র হারের সুমধুর প্রতিশোধ নেন দেড় বছরের মধ্যেই।
কিনতু সেই নীতীশ প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিতর্কিত নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেন কেন? যেখানে আর সমস্ত বিরোধী দল এই বিষয়টিকে কেন্দ্র মোদীর মুণ্ডুপাত করতে ব্যস্ত, সেখানে নীতীশ তাঁর প্ৰতিদ্বন্দীকে সমর্থন জানালেন কী কারণে?
পোড়খাওয়া প্রশাসক নীতীশ জানেন রাস্তায় নামলেই সমর্থন পাওয়া যায় না
আসলে নীতীশ হচ্ছেন পোড়খাওয়া প্রশাসক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশাসক হিসেবে যতটা অভিজ্ঞ, নীতীশ তার চেয়ে অনেকটাই বেশি। আর তাই, হুটহাট বিরোধিতার জন্য রাস্তায় নামেন না তিনি। এমনকি, নিজের দল বিরোধিতা করলেও নয়।
নীতীশ এর আগে মোদীর ঝটিকা লাহোর সফর বা মাসকয়েক আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর পক্ষে কথা বলেন। অনেকে বলেছেন নীতীশ আস্তে আস্তে মোদীর দিকে হেলছেন। কিনতু আসল কারণ সেটা বলে মনে হয় না।
নিজের রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করে প্রশংসিত হন নীতীশ
নীতীশ তাঁর নিজের রাজ্য বিহারে সম্প্রতি মদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপান। আচমকা এই সিদ্ধান্তে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পরে যায়। প্রথমে কিছু নেশাগ্রস্ত মানুষ এর ফলে মারা পড়লেও শেষ অবধি নীতীশেরই নৈতিক জয় হয়। চারদিক থেকে তাঁকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সাধুবাদ দেওয়া হয়। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের পক্ষ থেকে।
মোদীর নোট বাতিলের আচমকা সিদ্ধান্তকেও তিনি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন স্বল্পমেয়াদে তা ক্ষতিকর মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ফল ভালোই হবে। নীতীশ জানেন নিজে আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদীর ক্ষেত্রে বিরুদ্ধাচরণ করলে তা দ্বিচারিতা মনে হবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে নীতীশ কথায় কথায় মোদীর বিরোধিতা করেন না। আর করেন না কারণ তিনি জানেন সেটা করলে আগামী দিনে বড় পরীক্ষায় কল্কে পাওয়া যাবে না। ২০১৪ সালে সেটা তিনি চাক্ষুষও করেছেন। আবার ২০১৫ সালে বিহারেই দেখেছেন যে মোদী তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে শত বাণ নিক্ষেপ করেও তাঁকে শেষ পর্যন্ত হারাতে পারেননি। অতএব, বুদ্ধিমান বিরোধিতা সবসময় আক্রমণাত্মক পথেই হয় না।
মোদীকে হারাতে গেলে মোদীর মতোই রাজনীতি করতে শিখতে হবে
নীতীশকুমার জানেন বর্তমান ভারতে 'ভালো' রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে গেলে নরেন্দ্র মোদীর মতো রাজনীতি করতে হবে। এমন তার ধরন হবে যাতে সাপও মরে, আবার লাঠিও না ভাঙে। নীতীশকুমার এখন দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ প্রশাসকদের মধ্যে অন্যতম এবং জাতীয় স্তরে বড় ভূমিকা পালনের স্বপ্নও দেখেন।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও জানেন যে মোদীর বিকল্প নেতা হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বেশ কিছু নেতা-নেত্রী। মমতা, কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধী... তালিকাটা কম বড় নয়। আর তাই ভিড়ের থেকে আলাদা হতে গেলে আলাদা রাজনীতি করতেই হয়। তাই তিনি আদর্শগতভাবে মোদীর বিরুদ্ধাচরণ করলেও বাস্তববাদী রাজনীতিতে সেই মোদীর থেকেই কৌশল ধার নিয়ে এগোচ্ছেন। চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রীর মতোই একজন 'মডার্ন' রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার।
এদেশে বিকাশপুরুষদের বেশ নাম হয়েছে এখন
এদেশের রাজনীতিতে 'বিকাশপুরুষ'দের বেশ নাম আছে। অটলবিহারি বাজপেয়ির সময়কাল থেকে বিকাশপুরুষের গুরুত্ব বেড়েছে। ২০১৪ সালেও এই বিকাশপুরুষ-এর ভাবমূর্তি নিয়েই মোদী নির্বাচনী বৈতরণী পার হন বেশ দাপটের সঙ্গেই। নীতীশ-মুলায়মরা অন্যদিকে চিহ্নিত হন জাতপাতের নেতা হিসেবে। বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ নীতীশ এখন তাই নিজের ভাবমূর্তি সেই পথেই বদলাচ্ছেন।
মোদী সরকারের সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তান নীতি বা অর্থনীতির বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিচ্ছেন দেশে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। অন্যান্য বিরোধী নেতারা হয়তো এর মধ্যে নীতীশের দু-মুখো দিকটি দেখতে পাচ্ছেন কিনতু আদতে কিনতু নীতীশ একমুখী কৌশল নিয়েই এগোচ্ছেন।