চিন ব্রহ্মপুত্রের জল আটকালে সমস্যায় পড়তে পারে ভারত!
সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ভারত কড়া মনোভাব ব্যক্ত করতেই পাকিস্তানের বন্ধু দেশ চিন আসরে নেমে পড়েছে। সরাসরি পাকিস্তানের পাশে না দাঁড়ালেও ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে নানা কৌশলী পদক্ষেপ করছে চিন।
সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ভারত কড়া মনোভাব ব্যক্ত করতেই পাকিস্তানের বন্ধু দেশ চিন আসরে নেমে পড়েছে। সরাসরি পাকিস্তানের পাশে না দাঁড়ালেও ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে নানা কৌশলী পদক্ষেপ করছে চিন। তার মধ্যেই অন্যতম হল, ব্রহ্মপুত্র নদীর উপরে বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা। [সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে জেনে নিন বিস্তারিত]
চিন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ইয়ারলাঙ্গ ঝাঙ্গবো (তিব্বতে এই নামেই পরিচিত ব্রহ্মপুত্র নদী) নদীর উপনদীর উপরে বেজিং একটি বাঁধ তৈরি করবে। লালহো নামে এই প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্রের উপনদী জিয়াবুকুকে আটকে বাঁধ গড়ছে বেজিং। বলা হচ্ছে, লালহো প্রকল্পই চিনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার।
জানা গিয়েছে, বাঁধ যেখানে তৈরি হচ্ছে, তিব্বতের সেই জিগাজে শহর সিকিমের অদূরে। সীমান্ত পেরিয়ে এখান থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদী ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে পড়ছে। ফলে জিয়াবুকুর জল আটকানোর প্রভাব ভারতের উপর পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুধু ব্রহ্মপুত্রের উপনদের উপরে লালহো প্রকল্প করে ক্ষান্ত থাকাই নয়, চিনের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রের মূল প্রবাহে আরও তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ফলে ভারতকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতেই হবে।
কিন্তু কেন ভারতের আশঙ্কার কারণ রয়েছে?
ভারত-চিনের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক জলচুক্তি নেই। চিন মনে করছে, ব্রহ্মপুত্রের উপরে বাঁধ তৈরি করতে পারলে অরুণাচল প্রদেশের উপরে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করতে আর এক কদম এগিয়ে যাবে বেজিং।
এদিকে এর ফলে ভারতের মতে, তিব্বতে নদীর উপরে চিনের জলপ্রকল্প বা বাঁধ তৈরি হলে আমাদের দেশে জলের প্রবাহ হ্রাস পাবে। বাঁধ, খাল অথবা জলপ্রকল্প যাই হোক না কেন তা রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হবে যা ভবিষ্যতে দু'পক্ষ হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে।
ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রভাব ভারতের উত্তর-পূর্বে ব্যাপকভাবে রয়েছে। এছাড়া তা বাংলাদেশের জলের যোগানেরও অন্যতম উৎস। এর জল নিয়ে কাটাছেঁড়া করার অর্থ হয় বন্যা অথবা এর অববাহিকা এলাকায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া।
২০১৩ সালে চিনের জলপ্রকল্প নিয়ে ভারত অভিযোগ করেছিল। ২০০৮ ও ২০১০ সালে ভারত-চিন দুটি চুক্তি সই করেছিল যার ফলে জল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভারতকে সরবরাহ করতে বাধ্য চিন। জলের মাত্রা ও বৃষ্টিপাত নিয়ে ভারতকে তথ্য জানায় চিন।
তবে ভূটান ও সিকিমের অদূরে তিব্বতে ২০১৪ সালে লালহো জলপ্রকল্প চিন তৈরি করার পর থেকে ভারত চাপে রয়েছে সন্দেহ নেই। আর ফলে সিন্ধু নিয়ে ভারত যেমন পাকিস্তানকে চাপে রাখতে পারে, তেমনই চিন ব্রহ্মপুত্র নিয়ে ভারতকে বিব্রত করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।