বিদ্যাসাগর এবং প্রজ্ঞা সাধ্বী কাণ্ডে বেরিয়ে পড়ল বিজেপির গেরুয়া রাজনীতির কঙ্কাল
দু'হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনের শেষটায় এসে কেমন যেন থেমে থেমে যাচ্ছে বিজেপির গাড়ি। এদিক ওদিক থেকে পরনের কাপড়ে ছিদ্র ধরা পড়ছে যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে মোটেই সুখবর নয়।
দু'হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনের শেষটায় এসে কেমন যেন থেমে থেমে যাচ্ছে বিজেপির গাড়ি। এদিক ওদিক থেকে পরনের কাপড়ে ছিদ্র ধরা পড়ছে যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে মোটেই সুখবর নয়। একে তো কলকাতায় ভোটগ্রহণের ঠিক মুখে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগে যথেষ্ট চাপে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী; আর পাশাপাশি নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমী বলে বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদিও বলেছেন সাধ্বী তাঁর মন্তব্যের জন্যে ক্ষমা চাইলেও তিনি মন থেকে তাঁকে কখনও ক্ষমা করতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর এই কথায় নির্বাচনের এই শেষ পর্বে এসে কতটা চিঁড়ে ভিজবে তা সন্দেহ রয়েছে।
বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রেও তাঁর মূর্তি ভাঙার ঘটনার জন্যে মোদী বা তাঁর দল দুঃখপ্রকাশ না করলেও প্রধানমন্ত্রী পরে একটি জনসভায় বলেন যে পঞ্চধাতুর একটি নতুন মূর্তি তৈরী করে দেওয়া হবে। যদিও তাঁর সে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা এবং গডসেকে দেশপ্রেম বলা -- এই দু'টি ঘটনাতেই ব্যথিত হয়েছে উদার ভারতের মনন এবং বিদ্যাসাগরকে নিয়ে সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়ে এবং গডসের প্রসঙ্গে সাধ্বীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে স্বয়ং মোদী সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া চেষ্টা করেছেন।
মোদী এক মাস আগে সাধ্বীর হয়ে সওয়াল তুলেছিলেন; আর এখন তাঁকেই ক্ষমা করতে পারছেন না?
ঘটনা হল, তাতে কি আদৌ উদার ভারত গেরুয়াবাহিনীর রাজনীতিকে ক্ষমার চোখে দেখবে?
সাধ্বী প্রজ্ঞার মতো কলঙ্কিত একজন হিন্দুবাদীকে গত এপ্রিল মাসে খোদ মোদী দলের নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে দাঁড়ানো সাধ্বীর প্ৰাৰ্থীত্ব নিয়ে চতুর্দিকে শোরগোল পড়লেও প্রধানমন্ত্রী তা মেনে নেন নির্দ্বিধায়। তাই নৈতিক সমর্থন দেওয়ার পরে এখন সাধ্বীর মন্তব্যকে যদি মোদীর অনৈতিক মনে হয়, তাহলে সেই অবস্থানের মাথা মুন্ডু কিছু থাকে বলে তো মনে হয় না।
বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানোর পরে পরেই তাঁর রচনা নিয়ে বিজেপির অজ্ঞতা বেরিয়ে পড়ল
বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রেও একই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা যায়। বিজেপির দুই প্রধান নায়ক মোদী এবং তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ যতই মমতার তৃণমূলকে গালিগালাজ করুন নিজেরাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বলে, জনসমক্ষে যে এই ঘটনা বিজেপিকেই বাঙালি সংস্কৃতি-বিমুখ বলে প্রতিপন্ন করবে সেটা গেরুয়াবাহিনীর নেতৃত্ব ভালোই জানেন। আর তাই প্রধানমন্ত্রী আরও দামী মূর্তি বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও যখন রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন যে বিদ্যাসাগরের রচিত "সহজপাঠ", তখন ফের নগ্ন হয়ে পড়ে বিজেপির ফাঁপা বুলি।
পাঁচ বছর আগে এই ভারতকে দেখতে চায়নি দেশের মানুষ
২০১৪ সালে মোদী যখন নির্বাচিত হন, তখন দেশের মানুষ তাঁর উপরে ভরসা করেছিল নতুন আশা-আকাঙ্খা নিয়ে; সেই আশা-আকাঙ্খা ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। দেশের উদারবাদী ঐতিহ্যটি দুমড়ে যাবে, এমন আশঙ্কাও ছিল না। কিন্তু পাঁচ বছর পরে দেখা যাচ্ছে মোদী ঠিক তাই সাধন করেছেন। সংকীর্ণতা এবং সাম্প্রদায়িক বিষে ঢেকে যাচ্ছে দেশের আকাশ বাতাস; আঘাত করা হচ্ছে উদারবাদের ভিতের উপরেই।
এই প্রবণতা কি মানুষ মেনে নেবে? জানা যাবে আগামী ২৩ মে।