'ওবিসি, তপশিলি ভোট যার, গদি তাঁর' খেলা জমে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। তার আগেই রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় চাপ বেড়েছে শাসক দল বিজেপির। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের আগে একদিকে যেমন বেশ কয়েকজন নেতা দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, ঠিক একই সঙ্গে কৃষক সমাজ কীভাবে বিজেপিকে কাছে টেনে নেবে তা নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। গত কয়েকদিনে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কয়েকজন নেতা দলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। বিজেপিকে যা আগামী নির্বাচনে কিছুটা ধাক্কা দিতে পারে।
ইতিমধ্যে তিনজন মন্ত্রী এবং কয়েকজন বিধায়ক বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কারণ তাঁদের অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথের সরকার দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, কৃষক, বেকার যুবক এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়।
এরা প্রত্যেকেই বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে নাম লিখিয়েছেন অথবা লেখাতে চলেছেন। এখন ঘটনা হল, পিছিয়ে সম্প্রদায় বা ওবিসি গোষ্ঠীর যে সমস্ত নেতারা রয়েছেন, তাঁদের দৌলতে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের দারুণ ফলাফল করেছিল। যোগী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া কিছুটা থাকলেও তার গতি বিশেষ ছিল না। ফলে ধরে নেওয়া গিয়েছিল যে ছত্রভঙ্গ বিরোধীদের ছত্রাখান করে এবারেও উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে সাম্প্রতিক যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে তাতে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে যোগী সরকারের কপালে।
স্বামী প্রসাদ মৌর্যের মতো বিজেপি নেতা, যার প্রভাব-প্রতিপত্তি পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ৩০ টির বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে ছিল, তিনি দলবল নিয়ে সম্প্রতি গেরুয়া শিবির ত্যাগ করেছেন। তার দেখাদেখি বেশ কয়েকজন বিধায়ক ইতিমধ্যে দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বিজেপি দলের তরফে জনসমক্ষে বিবৃতি দিয়ে এই সমস্ত নেতাদের দল না ছাড়তে আবেদন করা হয়েছিল। যদিও তাতে বিশেষ কাজ হয়নি।
২০১৪ এবং ২০১৭ সালের নির্বাচনের মতোই এবছর জয় নিশ্চিত করতে বিজেপি চেষ্টার কোনও কমতি রাখেনি। বিরোধীদের আলাদা করা, ভোটে মেরুকরণ - এই সমস্ত টেকনিক আপন করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেখানে জাতপাতের রাজনীতি সব সময় প্রাধান্য পেয়ে এসেছে, সেখানে বিজেপি চেষ্টার খামতি রাখেনি। তবে আচমকাই যেন সব হিসেব ওলট পালট হয়ে যেতে বসেছে।
গত নির্বাচনে ৪০৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করেছিল। তবে অযোধ্যা, কাশি এবং মথুরাকে প্রধান অ্যাজেন্ডা বানিয়েও এবছর বিজেপি শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। যদিও দলের তরফের দাবি করা হয়েছে এবছরের নির্বাচনে ৩২৫ টি আসন পেয়ে গেরুয়া শিবির জয়লাভ করবে।
সমাজবাদী পার্টি প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের কাছে প্রথম থেকেই যাদব এবং মুসলমানদের ভোটব্যাঙ্ক ছিল। কিন্তু সমস্যা হল - এবারের নির্বাচনে যাদব নন এমন ভোটাররা অর্থাৎ ওবিসি ভোটারদের একটা বড় অংশ অখিলেশ যাদবের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। গত বারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিল সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু এ বছর তারা কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম জোট করেনি। ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট তৈরি করেছে। এমনকী কাকা শিবপাল যাদব, যার সঙ্গে অখিলেশের বনিবনা নেই, তাঁর সঙ্গেও হাত ধরাধরি করে ভোটের ময়দানে নেমেছেন সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব।
যোগী আদিত্যনাথ ইতিমধ্যে ভোটারদের মধ্যে বিভাজনের তাস খেলে দিয়েছেন। তিনি আশি বনাম কুড়ির লড়াইকে সামনে এনেছেন। অর্থাৎ এই ২০ শতাংশ হল অ-হিন্দু ভোটার।
অন্যদিকে অখিলেশ যাদবও এক মস্ত চাল দিয়েছেন। তিনি রাজ্যের সমস্ত ওবিসি এবং তপশিলি জাতিভুক্ত ভোটারদের এক জায়গায় করার চেষ্টা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, এই দুই সম্প্রদায়ভুক্ত ভোটাররা রাজ্যের মোট ভোটের ৮৫ শতাংশ দখল করে রয়েছেন। অর্থাৎ যদি এই বিপুল ভোটের সিংহভাগ অখিলেশ যাদব নিজের দিকে ঘোরাতে পারেন তাহলে তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ হতে পারে বিজেপির।
প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে মার্চ মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত মোট সাত দফায় উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন হবে। ফলাফল ঘোষিত হবে ১০ মার্চ। যেভাবে গত কয়েকদিনে উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক হাওয়া বদল হতে শুরু করেছে, তাতে ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই তা ঝড়ের আকার নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।