10 Years of 26/11: মুম্বই হামলায় জঙ্গি নিধনে স্পেশাল ফোর্স গঠন করেছিল আমেরিকা
মুম্বই হামলায় ১৬৬ জন সাধারণ মানুষ এবং ৯ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। মৃত সাধারণ মানুষের মধ্যে কয়েক জন আমেরিকানও ছিল।
মুম্বই হামলায় ১৬৬ জন সাধারণ মানুষ এবং ৯ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। মৃত সাধারণ মানুষের মধ্যে কয়েক জন আমেরিকানও ছিল। বাণিজ্য নগরী মুম্বই-এ লস্কর-ই-তইবার এই সংঘটিত জঙ্গি হামলার মোকাবিলায় তৎপর হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বুশ প্রশাসন। তৈরি করা হয়েছিল স্পেশাল ফোর্স-এর একটি দল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশের সই করা নির্দেশিকায় ভারতের কাছাকাছি থাকা কোনও আমেরিকান আর্মি বেস থেকে এই স্পেশাল ফোর্স-কে উড়িয়ে আনার কথাও বলে দেওয়া হয়েছিল। মুম্বই হামলার একদশক পূর্তিতে এমনই তথ্য জানালেন আনিস গোয়েল নামে এক মার্কিন নিরাপত্তা আধিকারিক।
মুম্বই হামলার সময়ে আনিস হোয়াইট হাউসে কাজ করতেন এবং হোয়াইট হাউস মুম্বই হামলার জন্য যে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ তৈরি করেছিল তার শীর্ষনেতা ছিলেন তিনি। বর্তমানে আমেরিকান সরকারেরই একটি নিরাপত্তা উইং-এর দায়িত্বে আছেন আনিস।
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, স্পেশাল ফোর্স আর মুম্বই-এ পৌঁছয়নি কারণ ততক্ষণে ভারতীয় কমান্ডোরাই জঙ্গি নিধন অভিযানে শেষ করে দিয়েছিল।
১০ বছর আগের ঘটনা হুবহু খেয়াল রাখাটা যে কঠিন তাও জানিয়েছেন আনিস। তাঁর মতে পুঙ্খনুপুঙ্খ তথ্য তাঁর খেয়াল না থাকলেও মোটামুটি ঘটনাটা কী হয়েছিল তা এখনও তাঁর কাছে স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন সরকারই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুম্বইয়ে স্পেশাল ফোর্স কমান্ডোদের পাঠাতে চেয়েছিল। এর জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে কথাও হয়। বিশেষ করে হোটেলে ঢুকে থাকা জঙ্গিদের মারতে এই স্পেশাল ফোর্স প্রচণ্ডরকমের দক্ষ। মুম্বই হামলা যে সময় হয়েছিল সেই সপ্তাহে খ্রিস্টানদের থ্যাঙ্কস গিভিং সেরেমনি চলছিল। এমনকী আমেরিকা শুরুতেই বিশেষভাবে দক্ষ একটি ফরেনসিক দলও পাঠাতে চেয়েছিল। যাদের কাজ হল ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন স্যাম্পেল সংগ্রহ করে বলে দেওয়া যে এই হামলার পিছনে কারা রয়েছে এবং এদের উদ্দেশ্য কী। কিন্তু ভারত সরকার এতে চূড়ান্ত কোনও সম্মতি না দেওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। আনিস গোয়েলের মতে, ভারত সরকার আসলে বুঝতে পারেনি যে স্পেশাল ফোর্স-কে মুম্বই-এ নামার অনুমতি দিলে অভিযানের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে। ভারত সরকারের ধারনা হয়েছিল যে অভিযানের নিয়ন্ত্রণ হয়ে আমেরিকার স্পেশাল ফোর্স নিয়ে নেবে। সেই আশঙ্কাতেই হয়তো স্পেশাল ফোর্স-কে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মুম্বই হামলা যে একটি সুচতুর এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তা বুঝে উঠতেই ভারত সরকার অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছিল। আনিস জানিয়েছেন ১০ বছর আগের এই হামলার ঘটনা নিয়ে তাঁর একটা স্মৃতি মনে পড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, হামলার সময় ওয়াশিংটনে গাড়ি চালিয়ে বাবা-মা-র সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন আনিস। তাঁর ব্ল্যাকবেরির মেসেজ বক্সে যে মেসেজের বন্যা বয়ে গিয়েছে তা বুঝতেই পারেননি। বাবা-মা-র কাছে পৌঁছে মোবাইল চেক করতে গিয়ে মুম্বই হামলা নিয়ে একের পর এক মেসেজ দেখতে পান। মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সি এবং গোয়েন্দাদের পাঠানো এই বার্তায় আনিস নাকি জানিয়েও দিয়েছিলেন এটা একটা সংঘটিত জঙ্গি হামলা।
বাবা-মা-এর বাড়ি থেকেই উইকএন্ডের ছুটির মধ্যেও সমানে ব্ল্যাকবেরি থেকে নাকি ঘটনার যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করছিলেন আনিস। এই পরিস্থিতিতে তৎকালীন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টেপেনি হেডলি একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ তৈরির নির্দেশ দেন এবং সকলকে দ্রুত ওয়াশিংটন-এ পৌঁছতে বলেছিলেন বলেও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আনিস।
আনিস জানিয়েছেন, সংবাদপত্রে যেভাবে হামলার বিভিন্ন তথ্য বের হচ্ছিল তার থেকে বেশি তথ্য তাদের কাছে ছিল না। ফলে তথ্য সংগ্রহ করাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সঙ্গে ঠিক করা হয় যে আগে বুঝতে হবে এই হামলার পিছনে কারা? আরও একটি বিষয় ঠিক করেছিল ক্রাইসিস ম্য়ানেজমেন্ট যে ভারত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শান্তির পরামর্শ দেওয়া। আনিস দাবি করেছেন, আমেরিকার চেয়েছিল যাতে এই হামলাকে ঘিরে যেন উপমহাদেশীয় অঞ্চলে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি না হয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গিদের খতম করা নিয়েই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বেশি করে সচেতন ছিল বলেও জানিয়েছন আনিস।