কেন হিলারি ক্লিন্টন হারলেন এই নির্বাচন?
সবক'টি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীর ভোটাররাই হতাশ করেছে হিলারিকে আর তাই তিনি হেরেছেন, বলছে বিশ্লেষণ
এত কিছুর পরেও হেরে গেলেন হিলারি ক্লিন্টন, যাঁর কাছে সবসময়ে 'হার' শব্দটিই হার মেনেছে। আর হারলেন কী না যে প্রতিপক্ষের কাছে যাঁর সম্পর্কে মানুষের ধারণা দিন দিন আরও নিম্নগামী হচ্ছিল।
তবে কী করে হারলেন হিলারি? অনেকের কাছেই রহস্যটা যেন কিছুতেই পরিষ্কার হচ্ছে না ।
কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকান, ল্যাটিনো এবং কমবয়সীরা আশানুরূপভাবে ভোট দেননি
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো এবং কমবয়সী ভোটারদের সমর্থনের দিকে হিলারি এবং তাঁর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাকিয়ে ছিল এই নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য, তাঁরা এবার যথেষ্ট সংখ্যায় ভোট না দেওয়ার ফলেই এই বিপর্যয় । বা ঘুরিয়ে বললে, বারাক ওবামার সময়ে যাঁরা ডেমোক্র্যাটদের ভরসা ছিলেন, তাঁরা এবার সেভাবে সাড়া দেননি হিলারির ডাকে। এর ফলে যে সমস্ত রাজ্যে হিলারি ভালো করবেন বলে ভাবা হয়েছিল সেগুলোতেও তিনি ডুবেছেন।
বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, বারাক ওবামার তুলনায় বেশ খারাপ ফলই করেছেন ক্লিন্টন, এমনকি মহিলা ভোটাদের ক্ষেত্রেও, জানিয়েছে সিএনএন। অথচ নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের একের পর এক মহিলা-সংক্রান্ত বিতর্ক বাসা বাধার সময়ে মনে হচ্ছিল এই একটি ইস্যুতেই হিলারি ট্রাম্পকে হারিয়ে দেবেন।
সিএনএন এও বলেছে যে ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মিট রোমনির তুলনাতেও কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনোদের ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প। এবং পেয়েছেন তাঁদের সম্বন্ধে নানা অবমাননাকর মন্তব্য করেও। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা নির্বাচনী প্রচারে বারংবার এই দুই গোষ্ঠীর কাছে আবেদন রাখেন হিলারিকে ভোট দেওয়ার জন্য কিনতু তাতে যে চিঁড়ে বিশেষ ভেজেনি, তা পরিষ্কার।
কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকানদের
ভোট
পরিসংখ্যানের
দিকে
তাকালে
দেখা
যাবে
কৃষ্ণাঙ্গ
আমেরিকান
ভোটারদের
প্রায়
৮৮
শতাংশ
এবছর
হিলারিকে
ভোট
দেন
আর
মাত্র
৮
শতাংশ
ভোট
দেন
ট্রাম্পকে।
ব্যবধানটা
বিশাল
হলেও
গতবারের
তুলনায়
(ওবামা
৯৩
শতাংশ,
রোমনি
৭
শতাংশ)
কম।
এবারের
কৃষ্ণাঙ্গ
মার্কিনি
ভোটারের
সংখ্যা
মোট
ভোটার
সংখ্যার
১২
শতাংশ
ছিল,
যা
আগের
বারের
তুলনায়
১
শতাংশ
কম।
সিএনএন-এর
মতে,
এই
ফ্যাক্টরটা
বড়
পার্থক্য
গড়ে
দেয়
অন্তিম
ফলাফলে।
ল্যাটিনোদের ভোট
ল্যাটিনো ভোটারদের ক্ষেত্রেও হিলারি আশানুরূপ সাড়া পাননি, এমনকী ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশ আটকাতে বড় পাঁচিল তুলে দেওয়ার হুমকির পরেও না। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল এবারের ল্যাটিনোদের মধ্যে মতদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা গিয়েছে এবং তাঁর ফলে হিলারি সুবিধে পাবেন।
কিনতু অন্তিম ফলাফলে দেখা গিয়েছে হিলারি মাত্র ৬৫ শতাংশ ল্যাটিনো ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন, যা ২০১২ সালের ওবামার প্রাপ্ত ৭১ শতাংশের থেকে অনেকটাই কম। অন্যদিকে, ট্রাম্প পান ২৯ শতাংশ ভোট যা আগেরবার রোমনির পাওয়া ২৭ শতাংশ থেকে দুই অঙ্ক বেশি, জানিয়েছে সিএনএন।
শ্বেতাঙ্গ ভোট
আর শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা তো হিলারিকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে। ওবামা গতবার এই গোষ্ঠীর ৩৯ শতাংশ ভোট পকেটে পুরেছিলেন আর সেখানে হিলারি পেয়েছেন মাত্র ৩৭ শতাংশ। অবশ্য ট্রাম্প হিলারির চেয়ে শ্বেতাঙ্গ ভোট বেশি পেলেও (৫৮ শতাংশ) গতবারের জিওপি প্রার্থী রোমনির থেকে ১ শতাংশ কম ভোট পান।
এশীয় ভোটাদের মত
এশীয় ভোটারদের মধ্যেও হিলারি কম ভোট পেয়েছেন। ২০১২ সালে ওবামা এশীয় সম্প্রদায়ের ৭৩ শতাংশ ভোট পান কিন্তু হিলারি তাঁদের থেকে পান মাত্র ৬৫ শতাংশ।
কমবয়সীদের ভোট
ডেমোক্র্যাট শিবিরেই কমবয়সী ভোটাররা প্রথম থেকেই হিলারির দলীয় প্রতিপক্ষ বার্নি স্যান্ডার্স-এর দিকে ঝুঁকেছিল। আর তাই ২০১২ সালে এই কমবয়সী ভোটারদের ৬০ শতাংশ ওবামাকে ভোট দিলেও এবার হিলারিকে তাঁদের মাত্র ৫৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। রিপাবলিকানরা অবশ্য ২০১২ এবং ২০১৬ - এই দু'বছরেরই ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
মহিলাদের ভোট
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে হিলারির প্রাপ্ত ভোট ৫৪ শতাংশ। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। ২০১২ সালে ওবামা ৫৫ শতাংশ মহিলা ভোটারের সমর্থন পেয়েছিলেন। অর্থাৎ, ট্রাম্প মহিলাদের বিরুদ্ধে তির্যক মন্তব্য করলেও হিলারি বাস্তবে তার কোনও ফায়দাই লুটতে পারেননি, বলছে সিএনএন।