আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের ভোটের কোনওই গুরুত্ব থাকবে না, মনে করছেন অর্ধেকের বেশি আমেরিকান
একটি সাম্প্রতিক জনসমীক্ষায় জানা গিয়েছে এই হতাশাজনক প্রতিচ্ছবি; শেষ কথা বলবে প্রভাবশালীরাই, মত আম নাগরিকের।
ঠিক এটাই চাইছিলেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প? মঙ্গলবার (অক্টোবর ২৫) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিআরআরআই (পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট) সংস্থার প্রকাশিত একটি জনসমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে সে-দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত।
এদিন নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে মার্কিন ভোটারদের বেশিরভাগেরই ভয় আগামী ৮ই নভেম্বর তাঁরা যাঁকেই ভোট দিন না কেন, প্রভাবশালীদের দাপটে তাঁদের মতদানের বিশেষ গুরুত্ব থাকবে না।
ভরসা হারিয়েছেন মার্কিন জনতা
অর্থাৎ, এই বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে আমেরিকা দ্বিধাবিভক্ত। যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদনে এবং রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই নির্বাচনে কারচুপি ঘটার কোনও কারণ দেখা যায়নি, মার্কিন নাগরিকরা তাতেও নিশ্চিত হতে পারছেন না। রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বার বার এবারের নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার দাবি তুলেছেন বিভিন্ন মঞ্চে, মনে করা হচ্ছে তাই সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব ফেলেছে।
অবশ্য, এই আশঙ্কা প্রকাশ যে এখনই প্রথম হচ্ছে, তা নয়। অগাস্টে একটি জনসমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন যে এই নির্বাচনে কারচুপি একটি বড় সমস্যা হবে, জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস। পাশাপাশি এও বলে যে ২০০৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ২৪ শতাংশ।
পিআরআরআই-এর মুখ্য আধিকারিক রবার্ট পি জোন্স নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এবারের নির্বাচনে কোনটি বেশি বড় ইস্যু -- কারচুপি না ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া -- সেই প্রশ্নে বিভক্ত।
জনসমীক্ষাটিতে জানা গিয়েছে ৪১ শতাংশ মানুষ যেখানে মনে করেন ভোটারদের প্রভাবিত করাটাই এবারের নির্বাচনের আসল সমস্যা, ৩৭ শতাংশ মানুষের মতে কারচুপিটাই আসল সমস্যা।
পার্সেপশনে সমস্যা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
জোন্স বলেন যদিও ভোটে কারচুপি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কাজনক কিছু দেখা যায়নি, কিনতু মানুষের মনে একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে। "সমস্যাটা পার্সেপশনের," নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন তিনি।
অন্যদিকে, ৪৩ শতাংশ মানুষ বলেন যে তাঁরা এখনও মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থার উপরে পূর্ণ আস্থা রাখেন। কিনতু বাকি ৫৭ শতাংশ এবং নির্দলদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন যে বিত্তবান এবং প্রভাবশালীরাই নির্বাচনে শেষ কথা বলে থাকেন। সুতরাং, তাঁরা ভোট দিলেন কি না তাতে বিশেষ ফারাক পড়বে না।
আশাবাদী নয় তরুণ ভোটাররা
এই সমীক্ষায় এও জানা গিয়েছে যে আমেরিকার তরুণ ভোটারদের ৬৬ শতাংশ তাঁদের ভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি হতাশ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে এটি মোটেই ভালো বিজ্ঞাপন নয়, বলেন জোন্স।
ট্রাম্প বা হিলারি - ভরসা নেই কারও উপরেই
এবারের নির্বাচনের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ -- ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটদের হিলারি ক্লিন্টন সম্পর্কেও ভোটারদের ধারণা খুব উজ্জ্বল নয়। দু'পক্ষেরই সমর্থকরা জানিয়েছেন যে তাঁরা এবারের নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে নয়, বরং ভোট দিচ্ছেন বিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
পিআরআরআই-এর এই সমীক্ষাটি সেপ্টেম্বর মাসের ১-২৭ তারিখের মধ্যে করা হয়।
তবে ট্রাম্প খুব একটা অখুশি হবেন না
তবে আর কেউ খুশি হোক বা না হোক, ট্রাম্প এতে খুব একটা অখুশি হবেন না। কারণ, যখন একের পর এক বিতর্কে তিনি কোনঠাসা এবং রিপাবলিকান দলের মধ্যে চূড়ান্ত অশান্তি, সেই সময়ে বার বার নির্বাচন "রিগড" বলে সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করার কৌশলটি যথেষ্ট কার্যকরী।
এতে প্রচুর সংখ্যক ভোটার, যাঁরা হয়তো ট্রাম্পের নানা 'কুকান্ড' দেখে মনে মনে ঠিক করেছিলেন হিলারিকে ভোট দেবেন, তাঁরা হয়তো আর বিরক্ত হয়ে ভোট দেবেনই না। আর সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে আসাও সহজ হবে। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এরপর হারলেও তিনি বলতে পারবেন যে "দেখো, আমাকে জোর করে হারানো হল।"
রাজনীতিতে সবই সম্ভব।