ইইউতে জায়গা না পেয়ে তুরস্ক এখন চিন-রাশিয়ার জোটে ভিড়তে মরিয়া
পশ্চিমের সঙ্গে অনেক দেশেরই সম্পর্ক খারাপ হওয়াতে তারা আস্তে আস্তে চিন এবং রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। আর সেই তালিকায় এবার যোগ হল তাইপ এরদোগানের তুরস্ক
গত বছর সেনা অভ্যুত্থান এবং তার প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমের সঙ্গে বিরোধ চরমে দেখা দিয়েছিল। সিরিয়া সমস্যার প্রশ্নে আমেরিকার সঙ্গে এক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও অভুত্থানের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং তার ফলে মস্কোর সঙ্গেই তিক্ত সম্পর্ক উন্নত করতে ঘেঁষেন তিনি।
আর এখন তুরস্কের রাষ্ট্রপতি তাইপ এরদোগান বলছেন যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-র সদস্যপদ না পেলেও ক্ষতি নেই। তার পরিবর্তে যদি চিন, রাশিয়া এবং পশ্চিম এশীয় দেশগুলির জোটে নাম লেখাতে পারলেই তুরস্কের কাছে তা বড়। অর্থাৎ, পশ্চিমের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের আরও একটি খিলান খসে পড়ার উপক্রম হল।
ইইউতে প্রবেশের ছাড়পত্র পেতে নেটো সদস্য তুরস্ক এক দশকের উপরে চেষ্টা চালাচ্ছে কিনতু তার গণতান্ত্রিক ট্র্যাক রেকর্ড নিখুঁত না হওয়াতে ইউরোপের অনেক দেশই আঙ্কারাকে ইইউর সদস্য হিসেবে দেখতে রাজি নয়। এবং তুরস্কও বাকি ইউরোপের এমন আচরণকে বৈমাত্রেয়সুলভই মনে করে এসেছে।
ইইউতে প্রবেশাধিকার পেতেই হবে, তুরস্ককে এমন মাথার দিব্বি কেউ দেয়নি, এরদোগান সম্প্রতি পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তান সফর শেষ করার পরে বলেন। পরিবর্তে তাঁর প্রশ্ন: তুরস্ক কেন শাংহাই ফাইভ-এর সদস্য হতে পারে না? তিনি বলেন তিনি এ ব্যাপারে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নাজারবায়েভের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
শাংহাই ফাইভ বর্তমানের সাংহাই ইকোনোমিক কোঅপারেশন বা এসসিও-র পুরোনো নাম। চিন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান এবং তাজিকিস্তানকে নিয়ে ১৯৯৬ সালে গঠিত হয় শাংহাই ফাইভ। ২০০১ সালে উজবেকিস্তান তাতে যোগ দিলে শাংহাই ফাইভ নাম বদলে করা হয় এসসিও। এবছর জুন মাসে ভারত সহ পাকিস্তানও এই গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। তুরস্ক এই মুহূর্তে এসসিও-র অন্যতম ডায়লগ পার্টনার।
এরদোগান বলেন যদি সত্যি শেষ পর্যন্ত তুরস্ক ওই গোষ্ঠীতে একজন পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে যোগ দিতে পারে, তাহলে তা তাঁর দেশের পক্ষে ইতিবাচক হবে। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি যে ইইউতে প্রবেশ না করতে পেরে চিন এবং রাশিয়ার সাহায্য চাইছেন, তা পরিষ্কার।
তুরস্ক যদি শেষ পর্যন্ত এসসিও-তে ঢোকার ছাড়পত্র পায়, তবে তা নিঃসন্দেহে পশ্চিম এশিয়াতে পশ্চিমি শক্তিগুলির এবং নেটোর পক্ষে বেশ চিন্তার কারণ হবে।
সিরিয়ার সমস্যার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাশার আল-আসাদ-এর বিরোধীপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হচ্ছে তুরস্ক। কিনতু গত জুলাইতে তুরস্কে বিফল সামরিক অভুত্থানের পরে এরদোগান সরকার যে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে, তাতে পশ্চিম বিশ্ব প্রবল আপত্তি জানায়। কিনতু তাতে বিন্দুমাত্র না দমে এরদোগান পাল্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন তাঁর দেশে অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে।
এরপর এরদোগান রাশিয়া সফরে যান। গত বছর রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর পর মস্কোর সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। আসাদ-বনধু রাশিয়ার সিরিয়ার ব্যাপারেও তুরস্কের সঙ্গেও বিরোধ রয়েছে। কিনতু সেসব থাকা সত্ত্বেও এরদোগান পশ্চিমকে প্রবল উৎকণ্ঠায় ফেলে পুতিনের সঙ্গে বোঝাপড়ায় মন দেন।