তিন তালাকের বিরোধিতা করে নুসরত জাহান কিছু ভুল বলেননি; কিন্তু দলতন্ত্রের ভূত তাঁকে গিলে ফেলল গপ করে
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান জনসভায় সবসময়ে গম্ভীর থাকলে চলে না, মাঝে মাঝে হাসতেও হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান জনসভায় সবসময়ে গম্ভীর থাকলে চলে না, মাঝে মাঝে হাসতেও হয়। আর সেই হাসানোর প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শনিবার, ১১ মে, বসিরহাট কেন্দ্রের হাসনাবাদে দলের স্থানীয় লোকসভা প্রার্থী নুসরত জাহানকে পাশে নিয়ে বললেন যে অভিনেত্রীর মতো তিনি দেখতে সুন্দর নন।
অবশ্য, সৌন্দর্য্য নিয়ে বক্তব্য রাখার আগে মমতা বোঝাতে চেয়েছেন যে নুসরতের ধর্ম মুসলমান এবং তিনি নিজে হিন্দু হলেও তাঁদের মধ্যে অন্য কোনওরকম পার্থক্য নেই -- দুজনের রক্তের রঙ এক, চোখ, হাত, পা-এর সংখ্যা একই।
এছাড়াও নুসরতের 'তিন তালাক' বিরোধিতার কথা পরোক্ষে টেনে এনে মমতা বলেন যে অভিনেত্রী প্রার্থীর কথায় দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই কারণ নুসরত ছোট মেয়ে, রাজনীতির কিছু বোঝেনা। দলের এই বিষয়ে একটি অবস্থান রয়েছে আর সেটাই প্রার্থীর অবস্থান। সম্প্রতি নুসরত 'তিন তালাক' আইনের বিরোধিতা করলে মুসলিম সমাজের কট্টরপন্থীদের রোষানলে পড়েন এবং সেই আগুনে জল ঢালতেই মমতার এই বার্তা বলে মঞ্চে রাজনৈতিক মহল।
মমতা বলেন: "আমি জানি নুসরতের একটা বক্তব্য নিয়ে কারও কারও দুঃখ আছে। কিছু মনে করবেন না। ছোট্ট মেয়ে। ও কি সব বোঝে? আমার পার্টির তো একটা স্ট্যান্ড আছে। পার্টির স্ট্যান্ড ছাড়া ও কখনও কিছু বলবে না। এটুকু মাথায় রাখবেন।"
দেখতে সুন্দর কিন্তু বোঝেন না অনেক কিছুই
মমতার এই দুটি বক্তব্যের মধ্যেই একটি তাৎপর্য রয়েছে। একটি ব্যক্তিস্তরে এবং দ্বিতীয়ত রাজনৈতিকস্তরে। তৃণমূল নেত্রীর দু'টি বক্তব্য মিশিয়ে পরিবেশনা করলে যেটা দাঁড়ায় তা হচ্ছে তাঁর লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী সুন্দরী, এমনকী সুপ্রিমোর থেকেও, কিন্তু তিনি ছোট মেয়ে, অনেক কিছুই বোঝেন না। "ও বেচারা সাবজেক্টটাই জানে না। আর আমাদের দলের সিস্টেমটা হচ্ছে আমরা সাবজেক্টটা বলে দিই," বলেছেন নেত্রী।
তাহলে কি নেতারা শুধু মুখ দেখিয়ে ভোট চাইছেন?
তা হলে কি ধরে নিতে হবে যে তৃণমূল কংগ্রেস জেনেবুঝেই এমন সমস্ত মানুষকে নির্বাচনী রাজনীতিতে নিয়ে আসছেন যাঁরা গ্ল্যামার-সর্বস্ব এবং কোনও কিছুর গভীরেই কিছু জানেন না? যদি তাই হয়ে থাকে -- অর্থাৎ স্রেফ মুখ দেখিয়ে ভোট জেতার তাগিদ -- তাহলে আমাদের রাজ্যের বা দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কঠিন প্রশ্ন ওঠে। সাধারণ মানুষকে কী দেখিয়ে ভোট চাইছেন জননেত্রী? অন্তঃসারশূন্যতা? যদি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নুসরত কিছুই জানেন না বিশেষ, তবে তাঁকে প্রার্থী করা কেন?
একজন আধুনিক মহিলা হয়ে নুসরত তিন তালাকের বিরোধিতা করে অন্যায় কিছুই করেননি
দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষিত আধুনিক নারী হিসেবে যদি নুসরত তিন তালাক-এর বিরোধিতা করে থাকেন, তাতে অন্যায়ের কিছু নেই আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তা নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আসলে তিনি দলতন্ত্রের লাগাম ধরে রয়েছেন যেখানে তাঁর নিজের জন্য ছাড়া ব্যক্তিস্বাধীনতার বা মতামতের স্বাধীনতার কোনও স্থান নেই। তৃণমূল ক��গ্রেসের কাছে সংখ্যালঘু ভোট তোষণ একটি বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার আর সেখানে একজন কমবয়সী ব্যক্তি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি একটি যুগপোযোগী মতামত রাখেন, তাহলে নিমেষে দলের ভূত তাঁকে গিলে খায়। বসিরহাটের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রে তো নুসরতের ব্যক্তিমতামতকে গ্রাহ্য করলে আরও সর্বনাশ। এই দৃশ্য আমরা অতীতে দীনেশ ত্রিবেদীর ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করেছিলাম, আর এবারে দেখলাম নুসরতের ব্যাপারে।