সমুদ্রের জলস্তর আর এক ফুট বাড়লেই বন্যার গ্রাসে শহর, জলবায়ু পরিবর্তনে অশনি সংকেত
সমুদ্রের জলস্তর আর এক ফুট বাড়লেই বন্যার গ্রাসে শহর, জলবায়ু পরিবর্তনে অশনি সংকেত
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পড়তে চলেছে প্রকৃতির উপর। নাসা এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলির একটি নতুন মূল্যায়ন বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলগুলির একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে৷ নাসার মূল্যায়নে দেখা গিয়েছে, পরবর্তী ৩০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। যার ফলে আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীর ভূখণ্ড বিরাট সমস্যার মুখে পড়তে চলেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে
নাসা, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এনওএএ এবং অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চতর প্লাবন এবং উপকূলীয় বন্যা হবে। তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ লুইসিয়ানার কিছু অংশ-সহ মার্কিন উপকূলের বিপরীতে সমুদ্রের জলস্তর ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি বেশি হবে। এবং টেক্সাসে জলের স্তর দেড় ফুট বা ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে বিপদ
নোয়ার ন্যাশনাল ওশান সার্ভিসের ডিরেক্টর নিকোল লেবুউফ সম্প্রতি জানিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী আমরাই। আমাদের উপরই দায় বর্তায়। সমুদ্রের জলস্তরের অনুমানিত এই বৃদ্ধি বিশেষত উদ্বেগজনক। বিংশ শতাব্দী থেকে এই প্রবণতা বেড়েছে। আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল বরাবর সমুদ্র উচ্চতা বাড়িয়েই চলেছে ২০০০ বছর ধরে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে
এই গবেষণায় বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, "এই প্রতিবেদনটি পূর্ববর্তী গবেষণাকে সমর্থন করে। আমরা যা দীর্ঘদিন ধরে জেনেছি বা বুঝেছি তাও নিশ্চিত করেছে এই প্রতিবেদন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সম্প্রদায়গুলিকে বিপন্ন করে তুলছে৷ চটজলদি জলবায়ু সংকট প্রশমিত করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ না নিয়ে ভয়াবহ বিপদ আসতে চলছে।"
হিমবাহ বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে আরও জল যোগ করবে
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক উইলিয়াম সুইট অবশ্য বলেন, অ্যান্টার্কটিকা এবং গ্রিনল্যান্ডে বরফের চাঁই গলে দীর্ঘমেয়াদী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ২১০০ সালের পর থেকে হবে না। তবে উষ্ণ জল প্রসারিত হয়ে বরফের চাদরকে গলিয়ে দেবে এবং হিমবাহ বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে আরও জল যোগ করবে।
হিমবাহ এবং বরফের চাদর গলে সমুদ্রস্তর বাড়ছে
নাসা বলেছে, হিমবাহ এবং বরফের চাদর গলানোর পাশাপাশি মহাসাগর, ভূমি এবং বরফের মধ্যে জটিল মিথস্ক্রিয়া তৈরি করবে। তার ফলেও সমুদ্রের উচ্চতা প্রভাবিত হবে। এনওএএ প্রশাসক রিক স্পিনরাড বলেন, "এটি বিশ্বকে জাগরিত করার ডাক। আমেরিকানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এখন কাজ করার প্রয়োজন। আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের কোন শহরগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
জলবায়ুর এই পরিবর্তনের ফলে আমেরিকায় অনেক শহরই বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। যেমন ফ্লোরিডার মিয়ামি বিচ, মেরিল্যান্ডের আনাপোলিস এবং ভার্জিনিয়ার নরফোক উচ্চ জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসে বন্যার মুখে পড়তে পারে। মাঝারি বন্যা সম্পত্তির ক্ষতি লেগেই থাকবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
২০৫০ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ যে সব এলাকা
এমন সব এলাকাতেও বন্যা হবে, যেখানে আগে বন্যা হয়নি। পূর্ব উপকূল সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে মেক্সিকো উপকূলের পশ্চিম উপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি হবে। মেক্সিকোর পূর্ব উপসাগরে ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে রৌদ্রোজ্জ্বল বন্যা হবে এলাকায় এলাকায়।
ভারত সম্পর্কে কী অভিমত
জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির অধীনে আইআইটি খড়গপুরের সমুদ্র প্রকৌশল ও নৌ স্থাপত্য বিভাগের গবেষকদের একটি দল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ চিন সাগর এবং দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের অঞ্চলগুলিতে ভবিষ্যতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটতে পারে। তার ফলে ভারতেও বন্যার আশঙ্কা থাকছে।