'বিটিফিকেশন' থেকে 'ক্যানোনাইজেশন', সন্ত হতে যে পথ পেরলেন মাদার টেরেসা
সারা বিশ্বের কাছে ফের একবার ভারতবর্ষ তথা কলকাতার নাম সবার উঁচুতে তুলে ধরলেন 'ভারতরত্ন' মাদার টেরেসা। তিনি পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে 'সন্ত' হিসাবে ঘোষণা করলেন। অর্থাৎ তিনি হয়ে গেলেন ভগবানের একেবারে কাছের মানুষ। [মাদার টেরেসার 'অ্যাগনেস' থেকে 'সন্ত' হওয়ার কাহিনি]
এর আগে অনেকেই সন্ত উপাধি পেয়েছেন। তবে মাদারকে সম্মাননা জানাতে পেরে বোধহয় আপ্লুত হল ভ্যাটিকান সিটিও। এই মহান রোমান ক্যাথলিক মানুষটিকে যেভাবে বরণ করা হল সেইন্টহুড উপাধিতে তা এককথায় অভূতপূর্ব। [অ্যাগনেস-সিস্টার-মাদার থেকে 'সন্ত' হলেন টেরেসা, সাক্ষী মুখ্যমন্ত্রী মমতা]
ঠিক কেমন ছিল এই প্রক্রিয়া? আসুন মাদার টেরেসা থেকে সন্ত মাদার টেরেসা হয়ে ওঠার বিবরণ জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
সেইন্টহুড বা সন্ত উপাধি পেতে গেলে তার সর্বপ্রথম ধাপ হল বিটিফিকেশন। যাঁকে সন্ত ঘোষণা করা হবে মনে ক্যাথলিক সমাজ ও আমজনতা মনে করছে তাঁর নামে গির্জায় প্রার্থনা সভায় প্রথমে প্রস্তাব পেশ করা হয়। স্থানীয় বিশপ বা আর্চ বিশপ গির্জার সেই প্রার্থনায় নেতৃত্ব দেন এবং তারপরে সেই প্রস্তাব পাঠানো হয় ভ্যাটিকানে বিবেচনার জন্য।
তবে ভ্যাটিকানে প্রস্তাব পাঠানো হলেই যে তা বিবেচ্য হবে এমন নয়। যার নামে প্রস্তাব রয়েছে তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী কিনা তার প্রমাণ পাঠাতে হয়। কী ঘটনা এমন হয়েছে তার উল্লেখ করতে হয়।
এরপরে গোটা বিষয়টির তদারকি হয় ভ্যাটিকানে পোপের তত্ত্বাবধানে। এর সঙ্গে বাস্তবতা বা সত্যতা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। যদি প্রমাণিত হয় যে এমন ঘটনা ঘটেছে তাহলে যার নাম সন্ত হওয়ার জন্য প্রস্তাবিত তাঁকে 'ব্লেসড' অর্থাৎ ভগবানের বিশেষ আশীর্বাদধন্য বলে গণ্য করা হয়।
এই ঘটনাকে বলে বিটিফিকেশন। এর পরে আসে আর একটি ধাপ। যার নাম ক্যানোনাইজেশন। মাদার যেভাবে এত তাড়াতাড়ি সন্ত উপাধি পেলেন এত তাড়াতাড়ি কেউ এটি লাভ করেন না। এটি দীর্ঘসময়ের ব্যাপার।
মাদারের প্রয়াণ হয় ১৯৯৭ সালে। ২০০২ সালে তাঁর প্রথম মিরাক্যালটি সামনে আসে। এরপরে ২০০৩ সালে তিনি 'ব্লেসড' ঘোষিত হন। এবং তার মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে মাদারের ক্যানোনাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে তিনি সন্ত হলেন।
এবার আসা যাক এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে। ২০০২ সালে মাদারের করা প্রথম মিরাক্যালটি সামনে আসে। জানা যায়, ১৯৭৮ সালে অলৌকিকভাবে তিনি মনিকা বেসরা নামে এক তপশিলি মহিলার পেটের টিউমার সারিয়ে তোলেন। এরপরই ২০০৩ সালে মাদারকে বিটিফাই করে ভ্যাটিকান সিটি।
এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মাদারের দ্বিতীয় অলৌকিক ক্রিয়াটি সামনে আসে। জানা যায়, ব্রাজিলের এক বাসিন্দার মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছিল। মাদারের সাহায্যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এটি জানার পরই ভ্যাটিকান সিটি মাদারের ক্যানোনাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সন্ত উপাধি দেবে বলে ঘোষণা করে।
অর্থাৎ প্রথম অলৌকিক ঘটনার পরে হয় বিটিফিকেশন এবং দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনার খোঁজ ও সেটা পাওয়ার ধাপকে বলে ক্যানোনাইজেশন। এই দুটি ধাপ সফলভাবে পূর্ণ করার পরই মাদার টেরেসা হয়ে গেলেন সন্ত মাদার টেরেসা।