এই মুহূর্তে ভারত-পাক পরমাণু যুদ্ধ বাঁধলে কী ক্ষতির মুখে পড়বে গোটা বিশ্ব!
যদি এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে তাহলে তা ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু দুটি দেশের মানুষের জীবন বিপন্ন হবে এমন নয়, গোটা বিশ্বেই চার বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কীভাবে পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাল ভারতীয় সেনা, জেনে নিন বিস্তারিত
মনে করা হচ্ছে এর ফলে অন্তত কয়েক কোটি মানুষ সরাসরি মারা যাবে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর উপরের বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরে অপূরণীয় ক্ষতি হবে, নেমে আসবে 'নিউক্লিয়ার উইন্টার' (পরমাণু বিস্ফোরণের পরে হঠাৎ করে নেমে আসা ঠান্ডা ও ধোঁয়ার চাদরে চারপাশ কালো করে আসাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার উইন্টার)। এছাড়া বর্ষার হেরফের হয়ে চাষবাসের নিদারুণ ক্ষতি হবে।
বুধবার রাতে ভারতীয় সেনা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়ে এসেছে। মোট ৭টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে অন্তত ৩৫-৪০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা গিয়েছে, এবং ২০০ জন জঙ্গির সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢোকা ভেস্তে দেওয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের হামলা নিয়ে কী বললেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ!
জবাবে মৌখিক আক্রমণ শানিয়েছে পাকিস্তানও। ভারতকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতেই উঠে আসছে পরমাণু যুদ্ধের প্রসঙ্গ। দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে ঠিক কী হতে পারে, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে 'সার্জিক্যাল অ্যাটাক' ভারতীয় সেনার
বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিবৃতি দেন, পরমাণু হামলা হলে ভারতের হয়ত ১০ কোটি মানুষ মরবে, তবে বদলে গোটা পাকিস্তানটাই ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে। তবে আদতে সেটাই কি আসল চিত্র? একেবারেই নয়। পরিস্থিতি আসলে আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সীমান্ত পেরিয়ে সেনার জঙ্গি দমনের খবর আসতেই সেনসেক্সে ধস, সূচক নামল ৫০০ পয়েন্ট
পরমাণু হামলা হলে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত কয়েক কোটি মানুষ মারা যাবে। ধীরে ধীরে বিকিরণের প্রভাব এতটাই মারাত্মক হবে যে সারা পৃথিবীর অন্তত ২০০ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। বলতে গেলে গোটা মানবসভ্যতাই অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। বেশ কয়েক বছর ধরে করা মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কী? কীভাবে এটি সম্পন্ন করে ভারতীয় সেনা? জেনে নিন
বিশ্বজনীন নিরস্ত্রীকরণ সংস্থার তথ্য বলছে, পাকিস্তানের কাছে ১১০-১৩০টি পর্যন্ত ক্ষেপনাস্ত্র টর্পেডো রয়েছে। ভারতের কাছেও ১১০-১২০টি টর্পেডো রয়েছে। উরিতে হামলার পরই দু'পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় সেনা বলছে, জঈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে এসে এই হামলা চালিয়েছে।
ভারতের 'সার্জিক্যাল অ্যাটাক' : টুইটারে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় ট্রেন্ডিং #ModiPunishesPak
ভারত আক্রমণ শানাতে পারে জেনে পাল্টা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা এম আসিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে ভারতও ছেড়ে কথা বলবে না। পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার করতে পাকিস্তান দেরি করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের বালিস্টিক মিসাইল
তথ্য বলছে, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৮৬টি মাটিতে থাকা বালিস্টিক মিসাইল। ভারতের কথা মাথায় রেখে এখনও মিসাইল বানানো বন্ধ করেনি পাকিস্তান।
পাকিস্তানের বালিস্টিরক মিসাইলগুলি ভারতের চারটি মূল শহর নয়াদিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে আঘাত হানতে পারে। যুদ্ধ শুরু হলে সেভাবেই ব্যবস্থা করতে পারে পাকিস্তান। এছাড়া উত্তর ও পশ্চিমের শহর দিল্লি, জয়পুর, আহমেদাবাদ, মুম্বই. পুনে, নাগপুর, ভোপাল, লখনৌও পাকিস্তানের মিসাইলের সীমার মধ্যে রয়েছে।
পাকিস্তানের দখলে এমন ক্ষেপনাস্ত্র রয়েছে যা ২৫০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতাতেও আঘাত হানতে পারে। অর্থাৎ যুদ্ধ বাঁধলে পাকিস্তানের হামলায় গোটা ভারতই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। তবে এর পাশাপাশি এটাও ঠিক যে পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করতে ভারতের অনেক কম সময় লাগবে।
ভারতের শক্তি
ভারতের কাছে রয়েছে পৃথ্বী, অগ্নি সিরিজের বালিস্টিক মিসাইল যা আঘাত হানলে পাকিস্তান নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কারণ এই পরমাণু অস্ত্রগুলির যা ক্ষমতা তাতে পাকিস্তানের সমস্ত প্রদেশ ও শহর এর আওতায় চলে আসে। ভারত হামলা চালালে লাহোর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিণ্ডি, মূলতান, পেশোয়ার, করাচি, কোয়েট্টা সহ কোনও এলাকাই ধংসের হাত থেকে বাদ যাবে না।
তবে সবশেষে বলা চলে, যুদ্ধ বাঁধলে গোটা এশিয়া যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, তেমনই সামগ্রিকভাবে গোটা পৃথিবীর জনজীবনই বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই যুদ্ধ নাকি শান্তি, তা ঠিক করতে হবে দুই দেশকে মিলেই।