মৃত্যুদিনেও পাতে ছিল ইলিশের ঝোল, এক নজরে দেখে নিন ভোজনরসিক বিবেকানন্দের অজানা গল্প
৪ঠা জুলাই সারা দিনব্যাপী দেশ তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হল স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুবার্ষিকী। আজ স্বামী বিবেকানন্দের ১১৮তম প্রয়াণ দিবস। গোটা বিশ্বে হিন্দু ধর্ম ও দর্শন প্রচার সন্ন্যাসী দেহ রাখেন মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর জন্ম হয় । স্বামী বিবেকানন্দ সন্ন্যাস জীবন নেওয়ার আগে নরেন্দ্র নাথ দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন। এদিকে আর পাঁচজন বাঙালীর মতো খাদ্য-রসিক ছিলেন স্বামীজি।

রান্না করতেও বিশেষ পছন্দ করতেন স্বামীজি
ভোজনপ্রিয় স্বামী বিবেকানন্দের কথা সর্বজনবিদিত না হলেও তার পরিবার, শিষ্য ও ঘনিষ্ঠ মহলে একথা জানতেন অনেকেই। খাবার পাশাপাশি রান্না করতেও বেশ ভালবাসতেন তিনি। এমনকি তাঁর চায়ের নেশার কথাও অনেকেরই জানা। ২০০৩ সালে বাঙালী উপন্যাসিক শঙ্কর ‘জানা অজানা বিবেকানন্দ বলে একটি বই লেখেন।' যেখানে স্বামীজির ভোজনবিলাসের কথা অনেকটাই বিশদে লেখার চেষ্টা করেন তিনি।

পছন্দের তালিকায় ছিল মাংসের নানা পদও
বিবেকানন্দের উপর লেখা প্রায় ২০০টিরও বেশি বইয়ের তথ্যাদি ও স্বামীজির লেখা বেশ কিছু চিঠির পর্যালোচনা করেই শঙ্কর ওই বই লেখেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে কালে বইটি ‘দ্য মঙ্ক অ্যাস ম্যান' নামে ইংরেজিতে অনুবাদও করে পেঙ্গুইন পাবলিশার্স। অনেকেই মনে করেন স্বামীজি নিরামিষাশী ছিলেন। যদিও এ কথা সত্য নয়। তিনি মাছ-মাংস খেতেও যথেষ্ট পছন্দ করতেন বলে জানা যায়। রামকৃষ্ণ মিশনে থাকাকালীন সময়েও তিনি শুধু নিরামিষ আহার গ্রহণ করতেন না।

খাওয়াদাওয়া শেষে ধূমপান ছিল অতি আবশ্যক
মিষ্টির দোকানের শিঙারা ছিল তাঁর অতি পছন্দের একটি খাবার। খেতে পছন্দ করতেন রসগোল্লা এবং আইসক্রিমও। আমেরিকায় থাকাকালীন সময়েও স্বামীজির প্রাতঃরাশের তালিকাও ছিল বেশ লম্বা। প্রথমেই খেতেন কমলালেবু এবং আঙুর। তারপর খেতেন ডবল ডিমের পোচ। তারপর দুই পিস টোস্ট এবং ক্রিম ও চিনি সহকারে দুই কাপ কফি। পাশাপাশি প্রত্যেকবার খাওয়াদাওয়া শেষে ধূমপান ছিল অতি আবশ্যক। শোনা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে স্বামীজির শিষ্য এলিজাবেথ ডাচার তাকে একবার তাদের কটেজে আমন্ত্রণ জানান। নিউইয়র্ক শহর থেকে প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার দূরে সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে ওয়েলেসলি দ্বীপে ছিল সেই কটেজ। ১৮৯৫ সালের ১৮ জুন সুনির্বাচিত দশজন শিষ্যকে নিয়ে কটেজে আসেন বিবেকানন্দ। সেখানেও লেকচার শেষে তিনি তাঁর শিষ্যদের নিজের হাতে রান্না করে বাঙালী খাবার রান্না করে খাইয়েছিলেন বলে জানা যায়।

স্বামীজির কচুরি প্রেম
বাঙালি মানেই ভোজনরসিক। সেই তালিকায় মধ্যে রয়েছেন বহু মনিষীও। বাদ পড়েননি বিবেকানন্দও। অনেকের মুখেই শোনা যায় স্বামীজির কচুরি প্রেমের কথা। কলকাতার বিভিন্ন দোকান থেকে তিনি কচুরি আনিয়ে খেতেন বলেও জানা যায়। বিদেশে থাকাকালীন বাড়ির বেসমেন্টে বসেই বানিয়ে ফেলতেন কচুরি । শিকাগো যাত্রার আগে তৎকালীন বোম্বাইতে স্বামীজি ১৪ টাকা খরচ করে এক হাঁড়ি পোলাও রান্না করেন শিষ্যদের খাইয়েছিলেন। কই মাছের তাঁর প্রিয় খাবারের আরও একটি। মৃত্যুর দিনেও স্বামী বিবেকানন্দ দুপুরে ভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল খেয়েছিলেন বলে জানা যায়।