For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

ভোরের চা খাওয়া হয়নি গঙ্গাধরের, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছেলের কথা ভেবে গর্ব বোধ করেন শিখা

১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৬। স্থান উরি-র আর্মি ক্যাম্প। রাতের অন্ধকার কাটিয়ে সকালের আলো ফোটার সময় হয়ে এসেছে। ক্যাম্পে থাকা বেশিরভাগ বাসিন্দাই গভীর ঘুমে। গঙ্গাধর তখন সবে ডিউটি সেরে তাবুতে ঢুকেছেন।

  • By Adrija Sen
  • |
Google Oneindia Bengali News

১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৬। স্থান উরি-র আর্মি ক্যাম্প। রাতের অন্ধকার কাটিয়ে সকালের আলো ফোটার সময় হয়ে এসেছে। ক্যাম্পে থাকা বেশিরভাগ বাসিন্দাই গভীর ঘুমে। গঙ্গাধর তখন সবে ডিউটি সেরে তাবুতে ঢুকেছেন। ভোররাতে এমনভাবে ডিউটি সেরে ফিরলে একটু চা-খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে গঙ্গাধরের। তাই অভ্যাসবশত তাবুর ভিতরে চা বসিয়েছেন তিনি।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

হঠাৎ কান ফাটানো গুলির আওয়াজ। কী হয়েছে দেখতে চটজলদি নিজের তাবু থেকে বেরিয়ে এসেছিল বছর একুশের গঙ্গাধর। বাইরে এসে তিনি দেখেন অন্ধকারের মধ্যে চার জন হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাবুগুলোকে গুলিতে ঝাঝরা করে দিচ্ছে। তাবুর ভিতর থেকে গুলিবিদ্ধ ঘুমন্ত জওয়ানদের গোঙানির আওয়াজ যেন আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

এমন পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য চকিতে ঠিক করে ফেলেছিলেন গঙ্গাধর। কারণ তার তাবুর পরিণতিও যে কিছুক্ষণের মধ্যে এমন হবে তা সে বুঝতে পারছিল। লোকগুলো কে তা যাচাই করার সময় ছিল না তার কাছে। তবে, ঘাতক চারজনের সঙ্গে জঙ্গিদের আচার-আচরণের যে বহু মিল রয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি গঙ্গাধরের। তবে, এদের শরীরে সেনাবাহিনীর উর্দি থাকায় প্রথমে একটু অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গঙ্গাধর তার একটি বন্দুক থেকেই চার আততায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন।

এভাবেই উল্টোদিকে থাকা চার জনের সঙ্গে সমানে লড়াই করতে থাকেন গঙ্গাধর। কিন্তু, একসময় গঙ্গাধরের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। গুলিও প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। শেষমেশ চার আততায়ীর ছোঁড়া গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় গঙ্গাধরের শরীর। গঙ্গাধরের সঙ্গে সেদিন উরি ক্যাম্পে শহিদ হন বিশ্বজিত ঘড়াই। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

গঙ্গাধর দলুই ছুটছে। কারণ হতদরিদ্র পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতার আনার দায় তাঁর কাঁধে। আঠারো পেরিয়ে গিয়েছে যমুনা বালিয়া গ্রামের গঙ্গাধর। কলকাতা থেকে এই গ্রামের পৌছতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। এই বয়সে ভালো কাজ পাওয়ার আদর্শ ঠিকানা যে সেনাবাহিনীতে নাম লেখানো তা বুঝতে পেরেছিলেন গঙ্গাধর। তাঁর গ্রাম এবং আশপাশের গ্রাম থেকেও বহু ছেলে সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

গ্রামের মাঠে রাত-দিন দৌড়ত গঙ্গাধর। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই তাঁর মা গঙ্গা ও তাঁর ভাইকে খেলাধূলোয় উৎসাহ দিতেন। এর ফলে ছোট থেকেই গঙ্গার মধ্যে শরীর চর্চা নিয়ে একটা সচেতনতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনীর যোগ পরীক্ষা যতই কাছে আসছিল ততই শরীর চর্চার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গঙ্গাধর। এই নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষ কটাক্ষও করতে ছাড়ত না। মনখারাপ করে থাকা গঙ্গাকে এমন সব কটাক্ষে কান না দিতেই মানা করতেন তাঁর মা শিখা। তিনিও চাইতেন ছেলে যাতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। কারণ গঙ্গাধরের মতো সিধে-সাধা গ্রামের ছেলের পক্ষে দেশসেবাই আদর্শ বলে মনে করতেন তিনি।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

সেনাবাহিনীর কাজে যে প্রাণের ঝুঁকি আছে তা তিনি ভালোই বুঝতেন। কিন্তু, নিদারুণ গরিবীর মধ্যেও তিনিও চাইতেন সন্তানরা যেন সৎপথে থাকে। আর দেশের সেবা করার সুযোগ পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। তাতে যদি মরণও আসে সে তো যথেষ্টই গৌরবের। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমনই ধ্যান-ধারনা রেখে চলেন গঙ্গাধরের মা। বলতে গেলে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগদানে গঙ্গাধরকে যিনি সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছিলেন তিনি হলেন তাঁর মা শিখা।

মেধাবী বলেই গ্রামে পরিচিতি ছিল গঙ্গাধরের। কিন্তু, গরিবীতে যে পড়াশোনা যখন-তখন বন্ধ হয়ে যেতে পারে তা ভালোই বুঝতেন যমুনা বালিয়া গ্রামের দলুই পরিবারের বড় ছেলে। ইটের কঙ্কালসার দেওয়ালের শ্যাওলা বলে দিত এই পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা। ঘরের উপরে ছাউনি থাকলেও বৃষ্টি এলে সেখান দিয়ে অঝর বারিপাত। এমন পরিস্থিতিতে দাঁতে দাঁত কষে লড়াই করতেন গঙ্গাধর।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলেজের ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীর চাকরির খবরটা এসেছিল। পত্রপাট পিঠে ঝোলা ঝুলিয়ে সেনা ক্যাম্পের উদ্দেশে বেরিয়ে গিয়েছিলেন গঙ্গাধর।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

যমুনা বালিয়া গ্রামেরই বাসিন্দা সুজিত মাইতি। গঙ্গাধরের এক সময়ের গৃহশিক্ষক। তিনি বছরখানেক আগে জানিয়েছিলেন, দলুই পরিবারের আর্থিক কষ্ঠ দেখে যে কেউ দুঃখ পাবে। পড়াতে বসে ফুঁটো ছাদ দিয়ে জল এসে পড়ত। সুজিতের মতে, গঙ্গাধর যেন এক অসম পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছিল সে সময়। কিন্তু, এর জন্য কোনও দিনই তাঁকে হতাশ দেখায়নি। গঙ্গাধরের বাবা বছর ষাটেরে ওঙ্কারনাথ এর-ওর জমিতে জন খেটে রোজগার করতেন। এই রোজগার সংসার চালানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

সেনাবাহিনীতে গঙ্গাধরের চাকরিতে যেন একটু আশার আলো দেখেছিল এই পরিবার। চাকরিতে গঙ্গাধরের নিয়োগ হয়েছিল ৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টে। উরি ক্যাম্পে শহিদ হওয়ার দিন কয়েক আগে বাড়িতে ফোন করেছিলেন গঙ্গাধর। মা-কে জানিয়েছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে ফের ফোন করবেন তিনি। কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। ছেলের সেই ফোন করার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শিখা।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল গঙ্গাধরের। ভাঙাচোরা বাড়িটাকে নতুন করে গড়ে তোলা। মা-কে নতুন নতুন শাড়ি কিনে দেওয়া। আরও অনেকই স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু উরি সেনা ক্যাম্পে জঙ্গি হামলা গঙ্গাধরের সেই স্বপ্নকে কেড়ে নিয়েছে। যমুনা বালিয়ার বাড়িটা সত্যি সত্যি নতুন করে হয়েছে। তাতে রঙের প্রলেপও লেগেছে। বাড়ির নাম গঙ্গাধর দলুই ভবন। অলক্ষে আজও গঙ্গাধরের মা-এর চোখে জলে আসে। সারাটা জীবন এই চোখের জল যে মুছবে না তা তিনি জানেন। কিন্তু তা বলে ছেলের মৃত্যু নিয়ে কোনও আপশোস তিনি পুষে রাখেননি। কারণ তিনি তো চেয়েছিলেন যাতে তাঁর ছেলের কীর্তিতে দেশ গর্বিত বোধ করে। সেই কারণে এখনও শিখা দলুই সকলকে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলো করতে পরামর্শ দেন। বলেন খেলাধূলো করলে শক্তি বাড়বে। আরও একটা কথা বলেন শিখা- সেটা হল যেদিন দেশের প্রতিটি মানুষ যেদিন প্রতিটি সন্তানের কথা ভাবতে শিখবে সেদিন ভারত জগৎসভায় শ্রেষ্ট আসন নেবে।

মা ও পুত্রের এমন কাহিনি যাতে চোখে জল চলে আসবে

(অদ্রিজা সেন- শহিদদের পরিবার নিয়ে কাজ করেন তিনি। 'দেশ' নামে একটি প্ল্যাটফর্মের অন্যতম কারিগর অদ্রিজা। বান্ধবী অনসূয়া মিত্র-র সঙ্গে কলেজ জীবনে এই প্ল্যাটফর্মটি খুলেছিলেন। ফেসবুকে বর্তমানে 'দেশ'-এর সদস্য সংখ্যা ৮,০০০ বেশি। আদ্রিজা ও অনসূয়ার সঙ্গে 'দেশ'-এর কাজে হাত মিলিয়েছেন বিকাশ নামে এক ব্যক্তি। কার্গিলে শহিদ ক্যাপ্টেন কণাদ ভট্টাচার্যের কথা পড়তে পড়তে এবং কার্গিলে শহিদ হওয়াদের কাহিনি রোজ সংবাদপত্রে পড়তে পড়তে অদ্রিজা 'দেশ'-এর জন্য প্রাণ দেওয়া সেনাদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। একটা সময় নিজেও সেনাবাহিনীতে নাম লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার অদ্রিজা। বর্তমানে শহিদদের পরিবারকে মনোবল জোগানো ও সহায়তার কাজ করছেন। )

English summary
Gangadhar dului who laid down his life in Uri Army camp in 2017 while fighting with the terrorist. Sikha Dului who always encourged son Gangadhar to be a great patriot.
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X