নোট বাতিলের সুযোগ নিয়ে কীভাবে কিছু ব্যাঙ্ক কর্মী আর্থিক তছরুপ করতে পারেন, জেনে নিন
শহুরে এলাকায় বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরা নিজেদের স্বার্থে কালো টাকা তছরুপের কাজে জড়াতে পারেন। বড় বড় ফান্ডে নয়ছয় করে গোলমাল পাকাতে পারেন।
নভেম্বরের শুরুতেই ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের পরে সারা দেশে আয়কর দফতর সবমিলিয়ে মোট ২০০টি জায়গায় হানা দিয়েছে। সবমিলিয়ে ১৭.২ কোটি টাকার নতুন নোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে যে শহুরে এলাকায় বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরা নিজেদের স্বার্থে কালো টাকা তছরুপের কাজে জড়াতে পারেন। বড় বড় ফান্ডে নয়ছয় করে গোলমাল পাকাতে পারেন। এদিকে সরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা এই একই ধরনের কাজ করতে পারেন গ্রামীণ এলাকাগুলিতে।
পরিচয়পত্র চুরি
গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে পুরনো নোট বদলে নতুন নোটে টাকা বদলানোর সময়ে প্যান কার্ড সহ অন্য পরিচয়পত্রের কপি ব্যাঙ্কে দেখিয়েছেন অথবা জমা রেখেছেন। সেগুলিকেই অসৎ কাজে লাগানো হতে পারে। এই পরিচয়পত্রগুলি দিয়ে অবৈধ লেনদেন করতে পারেন অসাধু ব্যাঙ্ককর্মীরা।
মোডাস অপারেন্ডি
একবারের বেশি কোনও গ্রাহক একই ব্যাঙ্কের শাখায় পুরনো নোট বদল করতে এলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বলা হবে, নতুন নোটের যোগান কম। ফলে গ্রাহক ফিরে গেলে তার জমা করা নানা পরিচয়পত্র বেআইনি পথে নতুন নোটে বদলে ফেলার চেষ্টা করা সম্ভব।
নোট বাতিলের পরে এখনও একমাস কেটে গিয়েছে। ৫০ শতাংশ এটিএম অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকী এটিএমগুলিতে কখনও নগদ থাকছে তো কখনও থাকছে না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারা জানতে পেরেছেন, এটিএমের জন্য যে নগদ পাঠানো হচ্ছে তা কালো টাকা কারবারিদের পকেটে চলে যাচ্ছে। কারণ তাতে ব্যাঙ্ক কর্মীদের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। আউটসোর্স করা নিরাপত্তারক্ষী, সার্ভিস এজেন্সির লোকজন যারা এটিএম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে তাদের এতে হাত রয়েছে।
জনধন অ্যাকাউন্ট
কেন্দ্রীয় হিসাব বলছে প্রতিটি ব্যাঙ্কের ১০-১৫ শতাংশ জনধন অ্যাকাউন্টকে কালো টাকা বদলের ক্ষেত্রে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এতেও ব্যাঙ্ককর্মীদের হাত রয়েছে বলে সিবিআই আন্দাজ করেছে।
মোডাস অপারেন্ডি
বেঙ্গালুরুর বিজয়নগরের একটি ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা পড়ে ছিল। নোট বাতিলের ঘটনার পরে তাতে জমা পড়েছে ২ লক্ষ টাকা। যার অ্যাকাউন্ট তিনি যখন নিজের ৫০০ টাকা তুলতে আসেন, তখন তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে তাঁর অজান্তে অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ টাকা ফেলা হয়েছিল।
ডিমান্ড ড্রাফ্ট
তদন্তকারীরা দেখেছেন, এই ডিমান্ড ড্রাফ্ট দিয়েই কালো টাকাকে সবচেয়ে সহজে সাদা টাকায় বদলে ফেলা সম্ভব।
মোডাস অপারেন্ডি
পুরনো নোট দিয়ে ভুয়ো নামে একটি ডিমান্ড ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে তারপর তা বাতিল করে টাকা ফেরত নিয়ে নিলেই কালো টাকা একেবারে সাদা হয়ে যাবে। যদি টাকার পরিমাণ ৪৯ হাজার টাকার কম হয় তাহলে কেউ কোনও প্রশ্ন করবে না।
খাজাঞ্চিদের কমিশন
এই ধরনের ছলচাতুরি সাধারণত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে বেশি করে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরিব ও নিরক্ষর মানুষদের ঠকিয়ে অনেকে নতুন নোটে টাকা লুঠছেন।
মোডাস অপারেন্ডি
খাজাঞ্চি পুরনো নোট বদলে নতুন নোটে টাকা ইস্যু করার পরে টাকা লেনদেন হলেও তার থেকে কমিশন নেওয়ার ফন্দি করেছে ব্যাঙ্কাররা। কিছু নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং ছোট মূল্যের নোটগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাল অ্যাকাউন্ট
কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পরিচয়পত্র যা জমা রাখা হয়েছে তা দিয়ে ব্যাঙ্ককর্মীরা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে নগদ নয়ছয় করতে পারেন।
মোডাস অপারেন্ডি
এই ধরনের অ্যাকাউন্টে পুরনো নোট জমা করে পরে নতুন নোটে পুরো টাকা তুলে নেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ এর ফলে পুরনো নোট জমা দিয়ে পুরোটা তুলে নিলে অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা না থাকলে অ্যাকাউন্টটি অকেজো হয়ে পড়বে।
মাইক্রো ফিনান্স ও কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে নয়ছয়
মাইক্রো ফিনান্স এজেন্ট যারা ১ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানদার ও কর্মীদের কাছ থেকে জমা করেন, সেখানেও নয়ছয় হতে পারে। এছাড়া যে ধরনের কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে কম্পিউটার পরিচালিত রেকর্ড নেই, সেখানে পুরনো তারিখ লিখে টাকা নয়ছয় হতে পারে।
মোডাস অপারেন্ডি
মাইক্রো ফিনান্স এজেন্টরা নতুন নোটে টাকা কালেকশন করছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। অথচ কালো টাকার কারবারিদের থেকে টাকা নিয়ে তা সেলফ-হেল্প গ্রুপের অ্যাকাউন্টে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। পরে তা তুলেও নেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও এই বিষয়টি সম্পর্কে খোলসা করেছেন। ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে থাকা কিছু লোক এতে জড়িত বলেও তিনি জানিয়েছেন। গোটা দেশে যেভাবে নতুন নোটে কোটি কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হচ্ছে, তাতে পুরো বিষয়টি নিয়েই জোরকদমে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি।