গুলি বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর, ১০ রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডে শিউরে উঠেছিল বিশ্ব
গুলি বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর, ১০ রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডে শিউরে উঠেছিল বিশ্ব
পশ্চিম জাপানে একটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখার সময় দুষ্কৃতীর গুলিতে মারা যান প্রাক্তন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। দেশে সামরিক শাসনের সময় থেকে এই প্রথম জাপানের কোনও প্রাক্তন বা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। জাপানে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা বিরল। গুলিবিদ্ধ হয়ে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে হতাবাক বিশ্ব।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা শিনজো আবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। জাপানে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা বিরল হলেও, বিশ্ব একাধিকবার এই ধরনের ঘটনার সাক্ষী রয়েছে যেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বে রাজনৈতিক বিশ্বে ব্যক্তিত্বদের হত্যার ঘটনার কয়েকটি উদাহরণ-
মহাত্মা গান্ধী (ভারত)
জাতির জনক হিসেবে পরিচিত মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একটি প্রার্থনাসভায় তাঁকে গুলি করে হত্যা করে নাথুরাম গডসে। দেশ ভাগের সময় মহাত্মাগান্ধীর অনশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দেশভাগের পর মহাত্মা গান্ধী পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্যের ওপর জোর দিয়ছিলেন। যার বিরোধিতা করে গডসে এবং তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
ইন্দিরা গান্ধী (ভারত)
ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেশে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। অপারেশন ব্লু স্টারে তাঁর নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী অমৃতসরের হরমন্দির সাহিব প্রাঙ্গন থেকে জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে ও তাঁর সমর্থকদের সরিয়ে দেয়। এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরেই তিনি শিখ সম্প্রদায়ের ক্ষোভের শিকার হন। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর দেহরক্ষীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
রাজীব গান্ধী (ভারত)
ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধী সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের ২১ মে চেন্নাইয়ের কাছে শ্রীপেরামবুদুরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় রাজীব গান্ধীর মৃত্যু হয়। শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এলটিটিই এই হামলার জন্য দায়ী। রাজীব গান্ধীর ওপর এই হামলা করে থেনমোজি রাজারত্নম। তিনি রাজীব গান্ধীকে প্রণাম করতে যান। সেই সময় বিস্ফোরণ হয়। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়।
বেনজির ভুট্টো (পাকিস্তান)
২০০৭ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে পাকিস্তান পিপলস পার্টির তৎকালীন প্রধান বেনজির ভুট্টোর মৃত্যু হয়। সেই সময় তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি প্রচারে গিয়েছিলেন।
জন এফ কেনেডি (আমেরিকা)
জন এফ কেনেডি আমেরিকার ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আমেরিকা তথা বিশ্বের জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৬৩ সালে টেক্সাসে যাওয়ার সময় লি হার্ভে অসওয়ার্ল্ড নামের এক দুষ্কৃতী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর ওপর অসওয়ার্ল্ড পর পর দুটি গুলি চালায়। এর দুই দিন পরেই একটি নাইট ক্লাবে অসওয়ার্ল্ডের গুলি বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। কেনেডিকে হত্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল সেই সময় দাবি করে। তবে কিছুই প্রমাণিত হয়নি।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (আমেরিকা)
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আমেরিকার জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। মার্টিন লুথার কিং শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়েরর হত্যাকারী জেমস আর্লে রে ৪ জুন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আদালত ৯৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
কাসেম সোলেমানি (ইরান)
ইরানের সামরিক বিভাগের শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলেমানি ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। এই ঘটনার পর ইরাকে দুটো মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই হামলায় সময় ইরান ভুল করে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করে। ঘটনায় বিমানের ১৭৬ জন যাত্রী ও কর্মীর মৃত্যু হয়।
আব্রাহাম লিঙ্কন (আমেরিকা)
আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টেদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল দেহরক্ষী ছাড়া তিনি একটি নাটক দেখতে গিয়েছিলেন। সেই সময় শূন্য রেঞ্জ থেকে তাঁর মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)
মুয়াম্মর গদ্দাফি প্রথম জীবনে লিবিয়ার বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি চার দশক ধরে লিবিয়ায় স্বৈরাচারী শাসক হয়ে উঠেছিলেন। লিবিয়ায় নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ একাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে লিবিয়ার মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সিরতে যুদ্ধের সময় তাঁকে বন্দি করা হয়। এবং বন্দি অবস্থাতেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
ম্যালকম এক্স (আমেরিকা)
ম্যালকম এক্স আমেরিকার বিতর্কিত নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি দেশের মধ্যে বর্ণবাদকে প্রশ্রয় দিতেন। ১৯৬৫ সালে নেশন অফ ইসলামের সদস্যরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।