স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কাজের সুযোগ : মোদীর মুদ্রা যোজনার অগ্রগতি কেমন? জেনে নিন
নরেন্দ্র মোদী সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভোটের সময়ে। মুদ্রা যোজনা মোতাবেক স্বনির্ভরতা তৈরি করাই অন্যতম লক্ষ্য ছিল। গত দু'বছরে এই যোজনার অগ্রগতি কতটা হয়েছে তার সুলুকসন্ধানের চেষ্টা করা হল।
দিল্লির 'সেন্টর ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং স্যোসাইটি'-র সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে ভারতীয় যুবসমাজের কাছে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল একমাত্র কর্মসংস্থান।
ফি বছরে লাখো লাখো যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নরেন্দ্র মোদী সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভোটের সময়ে। মুদ্রা (মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফিনান্স এজেন্সি) যোজনা মোতাবেক শুধু কাজের সুযোগ তৈরি করা নয়, বরং স্বনির্ভরতা তৈরি করাই অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ, নতুন উদ্যোগপতিদের উৎসাহ দেওয়া নরেন্দ্র মোদীর মুদ্রা যোজনার অন্যতম উদ্দেশ্য মনে করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এর উদ্বোধন করেন। গত দু'বছরে এই যোজনার অগ্রগতি কতটা হয়েছে তার সুলুকসন্ধানের চেষ্টা করা হল।
মুদ্রা যোজনা কী?
মুদ্রা যোজনার অধীনে মাইক্রো ফিনান্স প্রতিষ্ঠানগুলি ও নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনগুলিকে নতুন করে অর্থ জোগায় সরকার। ২০১৩ সালের এনএসএসও রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ৫ কোটির বেশি ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি এক মালিকানাধীন এবং অসংগঠিত শ্রমিক শক্তির সিংহভাগ অংশ এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই যোজনা অনুযায়ী তিন ধরনের ঋণ নেওয়া যেতে পারে।
১)
শিশু
:
৫০
হাজার
টাকা
পর্যন্ত
ঋণ
২)
তরুণ
:
৫০
হাজার
থেকে
৫
লক্ষ
টাকা
পর্যন্ত
ঋণ
৩)
মধুর
:
৫
লক্ষ
টাকার
বেশি
ঋণ
মুদ্রা যোজনার সুবিধা পাচ্ছেন কারা?
মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলি মুদ্রা যোজনায় সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে। কারণ ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য জায়গা থেকে আগে ঋণ পাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে স্থানীয় মহাজনদের থেকে কড়া সুদে টাকা ধার করতে হতো। তবে মুদ্রা যোজনার ফলে তাদের সুবিধা হয়েছে। ফল-সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে ছোট দোকানদাররা মুদ্রা ইকো সিস্টেম থেকে লাভবান হয়েছেন।
ঋণের অঙ্কে বৃদ্ধি
মুদ্রা যোজনার পরিধি গত আর্থিক বছরের তুলনায় বাড়ছে। ২০১৫-১৬ সালে যেখানে ৩.৫ কোটি ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, সেখানে ২০১৬-১৭ সালে ৪ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অঙ্কের হিসাবে গত বছরের তুলনায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকায়।
নতুন উদ্যোগপতিরাই ঋণগ্রহীতা
সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, মুদ্রা যোজনার অধীন নতুন উদ্যোগপতিরাই ঋণ নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। সেই সংখ্যাটা শতাংশের বিচারে ৩৬। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে পুরনো উদ্যোগপতিরাই ব্যবসা বাড়ানোর কাজে মুদ্রা যোজনার সাহায্য নিয়েছেন তা নয়। বহু মানুষ কাজ চাকরি ছেড়ে স্বনির্ভরতাকে বেছে নিয়েছেন।
মহিলারাই বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত
পাঁচের মধ্যে চারটি মুদ্রা ঋণেই মহিলারা সুবিধা বেশি পেয়েছেন। মহিলাদের প্রথাগত প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়ায় অনেক বাধা থাকে। ফলে মুদ্রা ঋণ তাদের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। তাই বহু মহিলা ইতিমধ্যে এর অংশ হয়েছেন। এছাড়া ঋণের সুদের হারে ২৫ বেসিস পয়েন্ট ছাড়ও অন্যতম কারণ সন্দেহ নেই।
শিশু বিভাগে ৯০ শতাংশ ঋণদান
ছোট এন্টারপ্রাইজগুলির ক্ষেত্রে এই ধরনের ঋণ বেশ কার্যকর হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে প্রথাগত ক্রেডিট সিস্টেম পৌঁছে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ক্ষেত্রগুলিতে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। ফলে এখন সরকারের উচিত যারা সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা চালাচ্ছে, তারা যাতে আরও সাফল্য পায় ও ব্যবসা বাড়াতে পারে তা নিশ্চিত করা। এর ফলে একটু একটু করে হলেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির প্রতিনিধি বেশি
মুদ্রা যোজনার অন্তর্গত ঋণ পাওয়া প্রতিনিধিদের ৩৫ শতাংশ ওবিসি, ২০ শতাংশ তপশিলি জাতি ও ৫ শতাংশ তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। ফলে এই সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে মুদ্রা যোজনার ফলে কাজের প্রচুর সুযোগ তৈরির পথ খোলা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সঠিক লোকের হাতে ঋণের অর্থ না পৌঁছলে তাতে আদতে কোনও উপকারই সাধিত হবে না।
পরিশেষে বলা যায়...
শেষপর্যন্ত উপসংহার হিসাবে বলতে হয়, মুদ্রা যোজনা স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে উৎসাহ দেওয়া ও মাইক্রো ইউনিটগুলিকে কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করতে সাহায্য করেছে। তবে এখন আশু কর্তব্য হল গোটা পদক্ষেপকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা। সঠিক লোকের হাতে ঋণ পৌঁছচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করা। সারা দেশে কর্মসংস্থান তৈরি একটি দিক হল মুদ্রা যোজনা। এমন অনেক নীতি নিয়ে আগামিদিনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।