দ্বিতীয় পৃথিবী কি সৌরজগতেই লুকিয়ে আছে? শনির কাছাকাছি ‘ক্লু’ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
সৌরজগতের এক স্বতন্ত্র গ্রহ হল পৃথিবী। মহাবিশ্বে তার জুড়ি মেলা ভার। এমন আর একটি গ্রহের হদিশ মিলছে না মহাবিশ্বে। তবে সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দাবি করেছেন, এই সৌরজগতের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দ্বিতীয় পৃথিবী। আকর্ষণীয় সেই গ্রহের সন্ধান মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে মহাকাশপ্রেমীদের মধ্যে।

টাইটানকে দেখতে প্রায় পৃথিবীর মতো
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি শনির সিস্টেমের মধ্যে এমন একটি জ্যোতিষ্কের সন্ধান পেয়েছে, যাকে হামেশাই তুলনা করা যায় আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে। শনি ৮২ টি চাঁদ দ্বারা বেষ্টিত। শনি গ্রহের সিস্টেমটি নিজেই একটি ছোট সৌরজগতের মতো। শনির এই ৮২টি চাঁদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল টাইটান। এই টাইটানকে দেখতে প্রায় পৃথিবীর মতো।

শনি গ্রহের বৃহত্তম চাঁদ হল টাইটান
নতুন গবেষণায় শনির চাঁদের পৃষ্ঠে প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। শনি গ্রহের বৃহত্তম চাঁদ হল টাইটান। এই টাইটানে রয়েছে নদী, হ্রদ এবং সাগর। ভরা বৃষ্টি আর ঘন বায়ুমণ্ডলের প্রকাশও পর্যবেক্ষণ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এই হ্রদগুলি পৃথিবীর থেকে ভিন্ন উপাদানে ভরা।

তরল মিথেন স্রোত টাইটানে
তরল মিথেন স্রোত টাইটানের বরফের পৃষ্ঠকে স্ট্রিক করে এবং নাইট্রোজেন বাতাস হাইড্রোকার্বন বালির টিলা তৈরি করে। এখন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভূতাত্ত্বিক ম্যাথিউ ল্যাপোত্রের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল তথ্য প্রকাশ করেছে যে, কীভাবে টাইটানের স্বতন্ত্র টিলা, সমভূমি এবং গোলকধাঁধা ভূখণ্ড গঠিত হতে পারে।

রহস্যময় জগৎ, পৃথিবীর মতো বৈশিষ্ট্য
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত, গবেষণাটি দেখায় যে, কীভাবে ঋতু চক্র চাঁদের পৃষ্ঠের উপর তার চলাচলকে চালিত করে। ঋতুভিত্তিক তরল পরিবহণ চক্রের সঙ্গে পৃথিবীর মতো বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই রহস্যময় জগতের প্রশংসা করেছেন।

টাইটানের উপর টিলা কীভাবে তৈরি হয়?
এখন প্রশ্ন, টাইটানের উপর টিলা কীভাবে তৈরি হয়? পৃথিবীর টিলাগুলি সিলিকেট শিলা এবং খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পলির দানায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বাতাস এবং স্রোতের মধ্য দিয়ে চলে গিয়ে পলির স্তরগুলিতে জমা হয়, যা অবশেষে চাপ, ভূগর্ভস্থ জল এবং কখনও কখনও তাপের সাহায্যে আবার পাথরে পরিণত হয়।

পৃথিবী, মঙ্গল এবং শুক্রের মতো টাইটানের বৈশিষ্ট্য
টাইটান সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন, অনুরূপ প্রক্রিয়াগুলি টিলা, সমভূমি এবং গোলকধাঁধা ভূখণ্ড তৈরি করেছে। কিন্তু পৃথিবী, মঙ্গল এবং শুক্রের মতো টাইটানের পললগুলি কঠিন জৈব যৌগ দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বোঝার চেষ্টা করছেন, কীভাবে টাইটানের মৌলিক জৈব উপাদানগুলি স্বতন্ত্র কাঠামো তৈরি করে।

ভারসাম্য বজায় রাখার প্রক্রিয়া
"বায়ু শস্যকণা পরিবহন করার সময়, দানাগুলি একে অপরের সাথে এবং পৃষ্ঠের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষগুলি সময়ের সাথে সাথে শস্যের আকার হ্রাস করতে থাকে। এই প্রক্রিয়া যা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং বালির দানাগুলিকে সময়ের মধ্যে একটি স্থিতিশীল আকার বজায় রাখতে সক্ষম করতে পারে বলে লাপোত্রে জানান।

পৃথিবীর মতো টাইটানেও দেখা যায় যে ঘটনা
গবেষক দলটি এই রহস্যের উত্তর খুঁজে পেয়েছিল পৃথিবীর পলল বিশ্লেষণ করে, যাকে বলা হয় ওয়েড। এই ওয়েড ছোট ও গোলাকার। প্রায়শই বাহামার চারপাশে অগভীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রে পাওয়া যায় ওয়েডগুলি। এই পললগুলি তৈরি হয় ক্যালসিয়াম কার্বনেট থেকে। কোয়ার্টজের মতো শস্যের চারপাশে স্তরগুলিতে সংযুক্ত হয় সেগুলি। পৃথিবীর মতো টাইটানেও দেখা যায় এই ঘটনা।

শনির উপগ্রহ টাইটানে বৃষ্টি, নদী, হ্রদ ও সমুদ্র
নাসা এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেই ভিডিএ-তে টাইটানের কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নাসা ব্যাখ্যা করেছে, পৃথিবীর মতো শনির উপগ্রহ টাইটানে বৃষ্টি, নদী, হ্রদ ও সমুদ্র- সব কিছুই আছে। গ্রহ হিসেবে সৌরগজতের মধ্যে শুধু পৃথিবীতেই নয়, শনির উপগ্রহে রয়েছে সেই সব।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আগ্রহ শনির উপগ্রহ নিয়ে
পৃথিবীর মতোই টাইটানের নীচে একটি মহাসাগর লুকিয়ে রয়েছে। সুদূর ভবিষ্যতে উপনিবেশ হিসেবে মঙ্গলের পর শনির চাঁদ টাইটান সম্পর্কেও আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে। অন্তত টাইটানের বৈশিষ্ট্য সেই আভাস দিয়েছে। পৃথিবীর মতো বৈশিষ্ট্য থাকা কোনও গ্রহ বা উপগ্রহ নিয়ে যে বেশি হবে তা বলাই যায়।