আজ সত্যজিৎ রায়ের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী: আজকের উত্তাল দিনগুলিকে কীভাবে দেখতেন তিনি?
আজ ২মে। বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী।
আজ ২মে। বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। অবশ্য শুধুমাত্র চিত্র পরিচালক বললে বোধহয় সত্যজিতের পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না কারণ তাঁর সৃষ্ট চলচ্চিত্রের অন্তিম লক্ষ্য বিনোদন ছিল না, ছিল এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া অথচ সরল সাধারণ উপায়ে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝতেও অসুবিধে হয় না।
১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিতের জীবনাবসানের পরে বাঙালি চলচ্চিত্রের যে সঙ্কটকাল আসে, তা হয়তো তার মৃত্যুর ২৭ বছর পরে গুনগত মানের দিক থেকে অনেকটা কাটানো গিয়েছে, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি এবং নৈতিকতার বিশ্লেষণে সুকুমার-পুত্র আজও অধরা বলেই মনে হয়।
সত্যজিতের ছবি নিয়ে নতুন করে এই পরিসরে আর লেখার কিছু নেই। এই লেখকের থেকে অনেক বড় পণ্ডিত মানুষেরা সত্যজিতের চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে অনেক বিশেলশন ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেনc প্রখ্যাত এই পরিচালকের জন্মতিথিতে এসে বরং মনে হচ্ছে অন্য একটি প্রশ্ন। আজকের দিনে যদি সত্যজিৎ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁর জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কী হতো?
রাজনীতির কাছে নিজের শিল্পসত্ত্বাকে বেঁচেননি সত্যজিৎ কোনওদিন
প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরটাও হয়তো অজানা নয়। কিন্তু একজন নৈতিক সৃষ্টিশীল মানুষ যদি দেখতেন আজকের দুনিয়ায় যেভাবে শিল্পীদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বা অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীরাই যেভাবে ক্ষমতাসীনের পদলেহন করতে ঝাঁপাচ্ছেন, তাহলে তাঁর প্রাণে কতটা যন্ত্রণার সঞ্চার হতো, সেকথা সহজেই অনুমেয়।
ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতেই। রাজনৈতিক অর্থে সত্যজিৎ যে কোনওদিন নিজের শিল্পসত্ত্বাকে বেঁচে দিতে রাজি ছিলেন না, সেকথা আমাদের নতুন করে জানতে হয় না। অতীতে ইন্দিরা গান্ধীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রীও যখন তাঁকে কংগ্রেস সরকারের জনমুখী প্রশাসনের উপরে চলচ্চিত্র বানানোর আর্জি জানান, সত্যজিৎ সটান তাঁকে না বলে দিয়েছিলেন কারণ শিল্পী হিসেবে তাতে তিনি কোনও মূল্য দেখেননি। আর পাননি বলেই তাঁর হাত থেকে 'হীরক রাজার দেশে'-র মতো ছবি বেরিয়েছে; তৈরী হয়েছে 'গণশত্রু'র মতো ছবি। কারণ তিনি প্রতিষ্ঠানকে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেননি, একজন প্রকৃত শিল্পীর যা মেনে নেওয়া উচিতও নয়।
আজকের শিল্পীমহলও যেখানে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, সেখানে সত্যজিৎ কীভাবে দেখতেন ব্যাপারটিকে?
আজকের দিনে যখন রাজনীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাননি শিল্পীরাও; প্রতিষ্ঠানের থেকে কিছু পাওয়ার আশায় অনেকেই সুবিধাবাদের দিকে ঝুঁকেছেন, তখন সত্যজিতের মতো মহীরুহ কী অবস্থান নিতেন তা জানতে ইচ্ছে করে আমাদের সকলেরই। পাশাপাশি, চিত্রতারকারা যেখানে ভোটের রাজনীতিতে পা রাখছেন অহরহ; দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন নিমেষে, তা নিয়েই বা সত্যজিতের কী মতামত থাকতো? তিনি একটি দলীয় দাপট দেখেছিলেন সত্তরের দশকে; সেই জরুরি অবস্থা ছিল প্রত্যক্ষ। আজকেও প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষে চলছে এক জরুরি অবস্থার মতো দাপট; কী প্রতিক্রিয়া থাকত সত্যজিতের? ইন্দিরাকে তিনি যেভাবে বলেছিলেন নিজের মতামত, আজকের দিনেও তা থেকে তাঁর বিচ্যুতি ঘটতো বলে মনে হয় না। হয়তো তাঁর পরিহাসমূলক সৃষ্টিশীলতায় কাঁচি চালাতো শাসকদল; ব্যথিত হতেন প্রবলভাবে। ধর্ম নিয়ে যিনি বারবার বুঝিয়েছিলেন নিজের অবস্থানের কথা, তিনি কি মেনে নিতে পারতেন আজকের এই ধর্মী নিয়ে হানাহানি? দেশে বা দুনিয়ায়?
কিন্তু সৎ বাধাবিপত্তিতেও নিজের প্রতিভার প্রতি কোনও অবিচার করতেন বলে মনে হয় না। কারণ তাঁর কাছে সবসময় ছিল সত্যেরই জিত।