(ছবি) সলমন খানের হিট অ্যান্ড রান মামলায় পীড়িতদের সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
গত ৬ মে ২০০২ সালে হিট অ্যান্ড রান মামলায় রায় শোনাল মুম্বইয়ের দায়েরা আদালক। আদালতের রায়ে এই ঘটনায় দোষী অভিনেতা সলমন খান। সলমনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫,০০০ টাকা জরিমানার সাজাও শুনিয়েছে আদালত।
গত কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনামে রয়েছে এই ১৩ বছরের পুরনো হিট অ্যান্ড রান মামলার রায়দান। তাই সলমনের কী সাজা হয়েছে তা এখন প্রায় সবাই জেনে গিয়েছেন। সবাই এটাই জানেন ২০০২ সালের সেই রাতে সলমন খানের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। আরও চার জন আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তার বাইরে ওই দুর্ঘটনা পীড়িতদের সম্পর্কে আর কিছু জানা আছে কি?
সলমন খান জেলে গেলে আমাদের সমস্যা মিটবে না, বললেন হিট অ্যান্ড রান মামলায় মৃতের ছেলে
যেহেতু এই ঘটনায় নাম রয়েছে সলমন খানের তাই সবাই জানতে ইচ্ছুক সলমন কী করেছেন কী করেননি, তিনি সেদিন মদ্যপ ছিলেন নাকি ছিলেন না।
আদালতের রায় সঠিক কী ভুল, সলমন দোষী কী নয়, সেবিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে সলমনের পাশাপাশি ওই ঘটনায় পীড়িতদের সম্পর্কেও আমাদের আর একটু জেনে রাখা উচিত নয় কি? যা নিয়ে আমরা এই ১৩ বছরে একবারও ভাবিনি তা ভাবার সময় কী এখনও আসেনি?
নুরুল্লাহ মেহমুদ শরিফ
নুরুল্লাহই সেদিনের দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে তাঁর আঘাত ক্রেনের ফলে হয়েছে (পুলিশের কথায়), কারণ এক ঝটকায় ভারি এসইউভি গাড়িটি ক্রেন তুলতে পারেনি এবং তা নুরুল্লাহর উপর এসে পড়ে।
ঘরছাড়া পীড়িতরা
পীড়িত ৫ জনই ঘরছাড়া থিলেন। মুম্বইয়ের বান্দ্রার শহরতলিতে একটি বেকারিতে কাজ করতেন। অন্যতম পীড়িত আবদুল্লাহ রউফ শেখ আমেরিকান এক্সপ্রেস বেকারির কর্মী ছিলেন। প্রায় ১০ বছর ধরে সেখানে কাজ করছিলেন। দুর্ঘটনার পর কাজ ছেড়ে দেন তিনি।
আবদুল্লাহ রউফ শেখ
আবদুল্লার কথায়, রাত ২-৩ টের মধ্যে আমরা একটা বিকট শব্দ শুনতে পেলাম, তারপর তাকিয়ে দেখি একটা গাড়ি আমাদের গায়ের উপরে উঠে এসেছে। স্থানীয় লোকজন চেঁচাচ্ছে 'সলমন খাননে অ্যাক্সিডেন্ট কিয়া'...এর কিছুক্ষণ পরে সলমন অটো করে চলে যায়। গাড়িটা তখনও আমাদের উপরে। আমরা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা ছিল নুরুল্লাহের।
ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা হয়নি কখনও
রউফ আরও বলেন, আমার বয়ান বদলানোর জন্য কারো কাছ থেকে কোনওরকম চাপ আসেনি আমার উপর। তারিখ হিসাবে পুলিশ আমায় ডেকেছে, আমাকে যখন ডাকা হয়েছে আমি গিয়ে বয়ান দিয়ে এসেছি। আমার বয়ান নিয়ে শব্দের বা বাক্যের কোনও রকম অদলবদল করা হয়নি। আমি যা দেখেছি, যা অনুভব করেছি তাই বলেছি। আমার উপরে কোনওরকমের চাপ ছিল না।
ক্ষতিপূরণ
রউফ শেখের কথায়, আদালতের কাছ থেকে আমি ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। যার মধ্যে আমার উকিল যিনি এই টাকা পাওয়াতে আমায় সাহায্য করেছিলেন তিনি নিয়েছিলেন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বাকি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আমি পেয়েছিলাম।
পরিচয় পত্রের অভাব
সলমনের বিরুদ্ধে আদালতে যখন ওই দুর্ঘটনায় পীড়িতরা আবেদন জানিয়েছিলেন তখন তাদের কারোর পরিচয়পত্র ছিল না। তাদের কাছে রেশন কার্ডও ছিল না। শেখ মুম্বইয়েরই হলেও মান্নু খানন এবং মুসলিম শেখ গন্ডার বাসিন্দা ছিল এবং কালিম পাঠান ছিলেন সুলতানপুরের।
মিডিয়া রিপোর্ট
টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর অনুযায়ী, ২০০২ সালের ৭ অক্টোবর জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময় আদালত সলমন খানকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ১৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকাই যাওয়ার কথা নুরুল্লাহের পরিবারের কাছে। পীড়িতরা এখনও আরও ক্ষতিপূরণের জন্য লড়াই চালাচ্ছে।
নারুল্লাহর স্ত্রী ও পুত্র
নারুল্লাহর স্ত্রী বেগম জাহান ওই দুর্ঘটনার বছর দেড়েকের মধ্যে অন্য আর একটি বিয়ে করেন। প্রথম স্বামী নারুল্লাহর থেকে ফিরোজ নামের এক সন্তান রয়েছে তাঁর। বর্তমানে তিনি ৭ সন্তানের জননী। বেগম জাহানের কথায়, আমাদের ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু এই মুদ্রাস্ফীতির সময়ে ওই কটা টাকায় আমরা কী করব?
ভ্রূক্ষেপ নেই সাজায়
রউফ শেখের কথায়, আমি ক্ষতিপূরণ পেয়েছি আদালতের কাছ থেকে। সলমন খানের থেকে নয়। সলমন খানের জন্যই আমি শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছি। আমার ভবিষ্যতের জন্য উনিই দায়ী। তাই ওর তরফ থেকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।