প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সাফল্যের অধ্যায়ে কোন পর্বগুলি জায়গা করেছে
১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে ২০০৪ সালের ২২ মে পর্যন্ত সময়কালে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হন অটল বিহারী বাজপেয়ী।
পাকিস্তানের মদতে ভারতের মাটিতে জঙ্গি আক্রমণ, কান্দাহারে বিমান অপহরণের মত একাধিক আপৎকালীন পরিস্থিতির সম্মুখে দাঁড়িয়েছে এদেশ। সেই দুঃসময় থেকে থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখা, তথা হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার রাস্তা দেখিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী।
১৯৯৬ সালে বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রিত্ব পান মাত্র ১৩ দিনের জন্য । এরপর , ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে ২০০৪ সালের ২২ মে পর্যন্ত সময়কালে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তাঁর শাসনকালে অর্থনীতি থেকে প্রতিরক্ষা, একাধিক জায়গায় বিশ্বমানচিত্রে সগৌরবে দাপট দেখিয়ে ১৩৩ কোটির এদেশ । জঙ্গি হামলার মতো বিপদ যেমন দেখেছে এই শাসনকাল, তেমনই দেখেছে শত্রুবিনাশের নয়া কৌশল। সেসময়ে দেশ পথ দেখেছে পোক্ত বিদেশনীতির। দেখে নেওয়া যাক , প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রাপ্তির অধ্যায়গুলি ।
২০০১ গুজরাতের ভূমিকম্প
২০০১ সালে ২৬ জানুয়ারির সকালে কেঁপে উঠেছিল গুজারাতে ভূজ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। রিখটার স্কেলে ৭.৭ কম্পনের মাত্রা সেদিন শেষ করে দিয়েছিল ২০ হাজার মানুষের প্রাণ। পরিস্থিতিতি সামলাতে ঝাপিয়ে পড়ে বাজপেয়ী সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝুঁকি কাঁধে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে ১.৫ ডলার বিলিয়নের ঋণ নেয় তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
[আরও পড়ুন:বাজপেয়ীর অবস্থা আরও সংকটজনক! দিল্লি যাচ্ছেন মমতা]
বিদেশ নীতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সময়ে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছতে শুরু করে। পরিস্থিতির হাল ধরেন অটলবিহারী। শুরু হয় দু'দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। ২০০০ সালে ভারতে সফরে আসেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। এর আগে , ১৯৭৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার শেষবার এসেছিলন ভারত সফরে। এদিকে, ক্লিন্টনের ভারত সফরের পর থেকে দুদেশের সম্পর্ক নতুন দিগন্ত পায়।
পাকিস্তানের সঙ্গে বিদেশনীতি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান মনে করছে , পাকিস্তানের সঙ্গে বাজপেয়ী সরকারের বিদেশনীতি , এযাবৎকালে ভারতের সবচেয়ে ভালো কূটনীতির উদাহরণ । ১৯৯৯সালের লাহোর ডিক্লারেশন, ভারত-পাক সম্পর্ককে যেমন নতুন দিশা দেখায়, তেমন বিশ্বের আঙিনায় শান্তিকামী ভারতের এক নতুন ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হন অটলবিহারী বাজপেয়ী। এই চুক্তির ফলে দুদেশের সম্পর্ক মজবুত হয় ,শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে এগোতে থাকে নওয়াজ শরিফের শাসনাধীন তৎকালীন পাকিস্তান। কিন্তু এর পরবর্তীকালে পরিস্থিতি সমস্যাসঙ্কুল করে তোলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পরভেজ মুশারফ।
[আরও পড়ুন: সঙ্কটজনক অটল বিহারী বাজপেয়ী, দেওয়া হল ভেন্টিলেশনে, হাসপাতালে মোদী ]
কার্গিল যুদ্ধ
১৯৯৯ সালের মে থেকে জুলাই মাস। ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখেছে সীমান্তের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। পাকিস্তানের মদতে, কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়তে শুরু করে পাক জঙ্গিরা। ভারতের মাটিতে প্রবেশ করতে থাকে পাকিস্তানি সেনাও। চুপ করে থাকেনি ভারত। যাবতীয় আন্তর্জাতিক ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে কড়া জবাব দেয় অটলবিহারীর ভারত। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে জয় লাভ করে ভারতীয় সেনা। গর্বের জয়ের উদাহরণ রেখে যায় '৯৯ এর কার্গিল যুদ্ধ। যা অটলবিহারী বাজপেয়ীর রীজনৈতিক জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায়।
পোখরান নিরীক্ষণ
অটলবিহারী বাজপেয়ী যে 'শক্তিশালী-সক্ষম ভারত'-এর অন্যতম রূপকার ছিলেন, তার প্রমাণ দেয় পোখরান বিস্ফোরণের অধ্যায়। ১৯৯৮ সালে রাজস্থানের পোখরানে নিরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আন্তর্জাতিক মহলকে অস্ফুটে অটলবিহারীর ভারত বার্তা দেয়.. এদেশ আত্ম-প্রতিরক্ষায় সক্ষম।
সর্বশিক্ষা অভিযান ও সামাজিক উন্নতি
অটলবিহারী
বাজপেয়ীর
আমলে
প্রবাসী
নাগরিকদের
উন্নয়নে
যেমন
কাজ
করেছে
সরকার,
তেমনই
দেশে
সর্বশিক্ষা
অভিযানের
মতো
গুরুত্বপূর্ণ
উদ্যোগ
চালু
করা
হয়।
২০০৮
সালে
অটল
বিহারী
সরকারের
শাসনকালে
পাশ
হয়
চন্দ্রায়ণ-১
-এর
প্রজেক্ট।
মহাকাশ
বিজয়ের
নতুন
স্বপ্ন
দেখতে
শুরু
করে
ভারত।
কান্দাহারে বিমান অপহরণ
১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট আইসি ৮১৪ অপহরণ করে জঙ্গিরা। নেপাল থেকে আগত বিমানটিতে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। একযাত্রীর মৃত্যু হয় জঙ্গিদের গুলিতে। এরপর আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি অটল সরকার। ৭ দিনের লম্বা টালাবাহানার পর মুক্তি পায় ওই ভারতীয় বিমান। ঘরে ফেরেন বাকি অক্ষত যাত্রী ও বিমানকর্মীরা। এই ঘটনাও অটলবিহারীর শাসনকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অধ্যায়।