মোদীকে অনবরত আক্রমণ করে রাহুল গান্ধী নিজের সময় নষ্ট করছেন
কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে "জওয়ানদের রক্ত নিয়ে দালালি করার" অভিযোগ তুলে আক্রমণ করলেন। নয়াদিল্লির একটি সভায় বৃহস্পতিবার (অক্টোবর ৬) রাহুল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিককালে তাঁর তীব্রতম আক্রমণটি শানালেন।
কয়েকদিন আগেই অবশ্য তিনি তাঁর মা সোনিয়া গান্ধীর মতো মোদীকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার জন্য। কিনতু যেই দেশ জুড়ে বিরোধীরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন, অমনি রাহুলও নেমে পড়লেন অক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়।
রাহুল গান্ধী হয়তো বাকিদের মতোই উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে মোদী-বিরোধী কথা বলে ফায়দা লুটতে চাইছেন। জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় ভর করে যদি বিজেপি দাদরি এবং দলিতকাণ্ডের পরেও উত্তরপ্রদেশে বৈতরণী পার হয়ে যায়, কংগ্রেস নেতৃত্ত্বের ভয় সেটাই। কিন্তু সেই ভয়ের মোকাবিলা করতে গিয়ে রাহুল গান্ধী নিজের দলের উপকারের থেকে অপকারই বেশি করছেন।
রাহুল ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেন না
প্রথমত, রাহুল ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেন না। এর আগে তাঁর মা মোদীকে তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কম আক্রমণ করেননি। ২০০৭ এর গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের পর 'মৌত কা সওদাগর' বলেও খোঁচা দেন। কিনতু তাতে মোদীর বিজয়রথ থামেনি। ২০০২ দাঙ্গার পরেও পরপর তিনটি নির্বাচনে জিতে হ্যাটট্রিক করেন মোদী এবং ২০১৪ সালে কংগ্রেসের অসংখ্য নেতার নানা কুভাষণকেও টেক্কা দিয়ে দিল্লির মসনদে আসীন হন। সোজা কোথায়, কংগ্রেসের প্রতিটি বাক্যবাণ ফিরে এসে বেঁধে তাঁদেরই গায়ে। কিনতু রাহুলের সেসব মাথায় আছে বলে মনে হয় না। ওঁর একটাই কৌশল: যত পারো মোদীকে গালাগালি দাও, তাতেই কংগ্রেসের হারিয়ে যাওয়া আসন আবার ফিরবে।
কিনতু রাহুলের এই কৌশল কোনওদিনই কাজে আসবে বলে মনে হয় না। তার সবচেয়ে বড় কারণ, রাজনীতিবিদ হিসেবে রাহুল গান্ধীর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও তৈরি হয়নি দেশের মানুষের কাছে। আর তার সবচেয়ে বড় কারণ: কোনও প্রশাসনিক স্তরে তিনি আজ অবধি কোনও কাজ করে দেখাননি।
রাহুল হয়তো ভাবেন যুগটা এখনও তাঁর ঠাকুমা-বাবার মতোই। তাঁরা বংশপরম্পরায় পূর্বপুরুষের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন কিনতু আজকের ভারতের রাজনীতি আমূল বদলে গিয়েছে। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর কংগ্রেস এদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব খুইয়েছে অনেকটাই। গান্ধীদের সেই রমরমাও আর নেই। রাজনৈতিক গণতন্ত্র আরও গভীরে প্রবেশ করেছে যেটা নেহেরু স্বয়ং চেয়েছিলেন।
গণতান্ত্রিক ভারতের শিকড় আরও গভীরে গিয়েছে, কংগ্রেস শিকড় খুইয়েছে
আর অন্যদিকে, কংগ্রেস নিজের শিকড় খুইয়েছে যেটা নেহরুর কন্যা ইন্দিরা করে দেখিয়েছিলেন। তাই আজ রাহুল গান্ধীকে সেই স্বপ্নের জায়গাতে ফিরে যেতে শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। অন্যথা, মোদী-মমতা-নীতীশ-কেজরিওয়ালদের ভিড়ে তাঁর নিজের জায়গা এমনি এমনি তৈরি হওয়া যথেষ্ট কঠিন।
রাহুল, আগে প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করুন
তাহলে রাহুলের কী করণীয়? আমাদের মতে, রাহুলকে সবার আগে কাজ করে দেখাতে হবে। আর তার জন্য চাই একটি প্রশাসনিক পদ। যদিও এই কাজ রাহুলের বহু বছর আগেই করা উচিত ছিল কিনতু তিনি তা উপেক্ষা করে গিয়েছেন। আর তিনি যত দেরি করেছেন, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের মতো নতুন নেতারা উঠে এসেছেন। এতে রাহুলের কাজ আরও কঠিন হয়েছে। আজকালকার দিনে ভোটাররা নেতাদের কর্ম অভিজ্ঞতার ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ। মনমোহন সিংহ পণ্ডিত ব্যক্তি হলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হালে পানি পাননি কারণ ওই -- প্রশাসক হিসেবে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল না। রাহুল সেই ভুল থেকে শিখতে পারতেন কিন্তু সে পথে তিনি যাননি।
মোদীকে যতই গাল দেবেন, ততই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়বে
শুধু মোদীকে গাল পেড়ে রাহুল বেশীদূর এগোতে পারবেন না। কারণ একের পর এক রাজ্য হারিয়ে কংগ্রেসের এখন যা অবস্থা, তাতে নিজের ঘর না সামলে লোকের ঘরে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা ব্যর্থতারই নামান্তর। আর রাহুল নিশ্চই ভালো করেই জানেন যে মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়ে এসেও মোদীর জনপ্রিয়তা বিশেষ কমেনি, কারণ মানুষ জানেন এই মুহূর্তে তাঁদের সামনে আর কোনওই বিকল্প নেই। অর্থাৎ, এতো হৈ-চৈ করেও রাহুলের ভাঁড়ার শূন্যই। তাহলে কি কৌশল বদলানো প্রয়োজন নয়?
অহঙ্কার ত্যাগ করে রাজ্যস্তরে লড়ুন, জিতুন আর তারপর প্রশাসক হিসেবে মোদীকে চ্যালেঞ্জ করুন
রাহুল, আপনি এক্ষুনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদের জন্যে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে লড়ুন। সামনে থেকে লড়াই করে জিতে দেখান আর সেই রাজ্যটির উন্নয়নের জন্য কাজ করুন -- তা সে যেই রাজ্যই হোক না কেন। যদি তা করে দেখতে পারেন, তাহলেই মানুষের মনে দাগ কাটতে সফল হবেন আপনি।
যেভাবে মোদী একটি প্রদেশ থেকে দিল্লিকে চ্যালেঞ্জ করে সফল হয়েছেন, আপনিও তাই করুন মোদীর বিরুদ্ধে। কারণ, হাওয়ায় কথা বলে আজকাল আর জনসাধারণের প্রসাদ পাওয়া যায় না। আশাকরি, আপনি এদেশের কমিউনিস্টদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন।
ঠাকুমা-বাবার নস্টালজিয়াতে আর ভুগবেন না প্রিয় রাহুল। সেইদিন চলে গিয়েছে। আজকের এই উদার ভারতে আর পাঁচজন পরিশ্রমী নাগরিকের মতোই খেতে নিজেকে প্রমাণ করুন। অনবরত প্ৰধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে নেহাতই সময় নষ্ট করছেন আপনি।