পাশে শিখণ্ডী অমিত শাহকে বসিয়ে মোদীর প্রেস কনফারেন্স লোক হাসানো ছাড়া কিছুই নয়
শুক্রবার, ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবারের জন্যে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন। ক্ষণটি ঐতিহাসিক তাতে কোনওই সন্দেহ নেই কিন্তু মোদী যেভাবে ব্যাপারটিকে সাঙ্গ করলেন, তা বেনজির এবং হাস্যকরও বটে। পাশে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সভাপতি অমিত শাহকে পাশে বসিয়ে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন প্রথমে দু'চার আনুষ্ঠানিক কথা বলে। বিষয়গত যা কথা বলার অমিত শাহই বললেন। মাঝে এক সাংবাদিক মোদীকে বিশেষভাবে প্রশ্ন করলে তিনি ঘুরিয়ে অমিতকে দেখিয়ে বললেন যে দলের সভাপতির সামনে তিনি এক নিয়মনিষ্ঠ সৈনিক মাত্র।

যে মানুষটি কথায় কথায় পাকিস্তানকে ধুইয়ে দেন, নিজের সরকারের সাফল্য নিয়ে জয়গান গাইতে থাকেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে তাঁকে এমন কুঁকড়ে থাকতে দেখলে অবাক লাগে বইকি। আপামর ভারতবাসীর তা লেগেছেও। কিন্তু কেন এমন লোকহাসানো কান্ডটি করলেন ভারতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধানমন্ত্রী যাঁকে অনেকে বলছে জিতেই গিয়েছেন এই চলতি লোকসভা নির্বাচন?
মোদী প্রবল চাপে রয়েছেন; রাহুলের ঘন ঘন সাক্ষাৎকারও তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে
আসলে মোদী শেষের কয়েকটি দিনের ঘটনায় চাপে রয়েছেন। একে তো প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা রাহুল গান্ধী একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন, এমনকী জনসাধারণের মধ্যে বসেই। এবং নিজের এজেন্ডা থেকে একবিন্দু সরছেনও না। বারবার তাঁর কথায় উঠে আসছে রাফালে-নোটবন্দি-বেকারত্বের-এর কথা। মোদীকে প্রায় রোজই চ্যালেঞ্জ করে বলছেন তাঁর সাথে সামনাসামনি বিতর্কে বসতে। অন্যদিকে, মোদীর এবারের সাক্ষাৎকারগুলি নিয়ে বিতর্কই বেশি হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাঁর সব সাক্ষাৎকারই সাজানো কারণ আগে থেকে সব প্রশ্নোত্তর পর্ব ঠিক করে ফেলার পরেই প্রধানমন্ত্রী মাঠে নামেন।
দ্বিতীয়ত, মোদীর কয়েকটি সাক্ষাৎকারে তিনি আম খান কি না বা পকেটে মানিব্যাগ রাখেন কি না -- এই সব অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেও লোক হাসানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের যখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন চলছে, তখন মোদী অরাজনৈতিক কথাবার্তা বলার নামেই আসলে বড় ইস্যুগুলি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই অপবাদ কাটাতে তাই তিনি শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে এলেন, যদিও মুখ খুললেন না।
গডসে বিতর্কের পরে মোদীর বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে
দ্বিতীয়ত, বিজেপির ভোপাল থেকে দাঁড়ানো বিতর্কিত প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞার বিতর্কিত "গডসে দেশপ্রেমিক" উক্তিতে যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। মোদী প্রজ্ঞার প্ৰাৰ্থীত্ব মেনে নিলেও তাঁর মন্তব্যকে মানতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন যদিও পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস, দেশের উদারবাদী হিন্দুদের ক্রোধ থেকে বাঁচতেই এমন কথা বলেছেন মোদী। আর মেয়াদকালের শেষ লগ্নে এসে একটি প্রেস কনফারেন্স করে, যদিও তা দায়সারা, তিনি বোঝাতে চাইলেন সাধ্বীর ঘটনায় তিনি বদলে যাননি; তাঁর মাটির সঙ্গে যোগাযোগ এখনও আগের মতোই রয়েছে। অর্থাৎ, নিজের প্রার্থীর থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতেই ব্যস্ত।
মোদী কি আঁচ করছেন নির্বাচনের ফলাফল?
তৃতীয়ত, মোদী গত পাঁচ বছরে মিডিয়ার সঙ্গে বিশেষ দেখা করেননি কারণ কেন্দ্রে তাঁর একার সরকার চলেছে। এবারে যদি কোনওভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফস্কায় এবং মোদীকে জোটসঙ্গী খুঁজতে হয়, তখন মিডিয়ার সঙ্গে জনসংযোগ গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা নেবে। হয়তো তিনি সে পথও পরিষ্কার করে রাখছেন আগেভাগে।
অথচ, এই সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার মোদী করতে পারতেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানেন যে পাঁচ বছরে তিনি এবং তাঁর দল যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে ঘটনাবলী এগোয়নি। নোটবন্দি বা দলিত দমন নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন এলে তা নিয়ে সদুত্তর কতটা তাঁরা দিতে পারবেন, সে ব্যাপারে তাঁরা নিজেরাও আত্মবিশ্বাসী নন। তাই শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে মিডিয়ার সামনে যাও কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকো।
মনমোহন সিংকে নিয়ে কটাক্ষ কম শোনা যায়নি পূর্বে। কিন্তু তিনি তো না হয় সহজাত-মৌনী। মোদীর মতো ঢাক-পেটানো নেতাকেও যদি পাঁচ বছর পরে সেই একই অবতারে দেখতে হয়, তাহলে 'আচ্ছে দিন' কোথায় এল?