টেটের কাউন্সেলিংয়ে চূড়ান্ত অস্বচ্ছতা, কেন বারবার কাঠগড়ায় পর্ষদ ও রাজ্য সরকার?
রাজ্যে দিন দিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এমতাবস্থায় বামফ্রন্ট আমলের মতো নিয়মিত টেট হওয়া জরুরি। গত ছ’বছরে তা হয়নি।
কলকাতা, ৯ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যে দিন দিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এমতাবস্থায় বামফ্রন্ট আমলের মতো নিয়মিত টেট হওয়া জরুরি। গত ছ'বছরে তা হয়নি। যাও বা দু-একবার হল, তাতে এত অস্বচ্ছতা যে রাজ্য সরকারকে বারবার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। এবারও সদ্য প্রকাশিত রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল ঘিরে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ কাউন্সেলিং নিয়েও।[টেট পরীক্ষায় পাস করেও মেলেনি চাকরি, জাতীয় সড়ক অবরোধ চাকরিপ্রার্থীদের]
বিপুল সফল পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, চাকরিগুলো লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন শাসকদলের নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রীরা। তাই তালিকায় নাম থাকলেও তারা কাউন্সেলিং-এ ডাক পাচ্ছেন না। আবার মোবাইল বার্তা (এসএমএস) পেয়ে কাউন্সেলিং-এ গিয়ে দেখছেন তালিকা থেকে নাম বাদ। এই নিয়ে প্রতিদিন সংবাদপত্র ও চ্যানেল নানারকম খবর প্রকাশ করছে, তারপরও শিক্ষামন্ত্রী নীরব, নীরব মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে যা অবস্থা, তাতে আদালতের নির্দেশে যে কোনও সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের জীবন অন্ধকারে ডুবে যাবে।[প্রাথমিক টেটের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, প্রথম দফায় ১২ হাজার সফর প্রার্থীর তালিকা]
রাজ্য
প্রথমিক
শিক্ষা
পর্ষদের
ওয়েবসাইটে
সফল
প্রার্থীদের
তালিকা
প্রকাশ
না
করার
জেরেই
নিয়োগে
অস্বচ্ছতার
অভিযোগ
উঠেছে।
সফল
প্রার্থীদের
এসএমএস
এবং
ইমেল
করে
ইন্টারভিউয়ে
ডাকা
নিয়েও
জল্পনা
আরও
বৃদ্ধি
পেয়েছে,
টেট
পরীক্ষার্থীদের
বক্তব্য,
ওয়েবসাইটে
ফলপ্রকাশ
হলে
তাতে
অনেকটা
স্বচ্ছতা
থাকে।
কিন্তু
ইমেল
বা
এসএমএসে
ডাকা
হলে-
কে
ডাক
পেল,
কে
পেল
না-
পুরোটা
অন্ধকারে
রয়ে
যাচ্ছে।
জানা
যাচ্ছে
না
যোগ্য
প্রার্থীকে
বাদ
দিয়ে
কম
যোগ্যতা
সম্পন্ন
প্রার্থীকে
কাউন্সেলিংয়ে
ডাকা
হচ্ছে
কি
না।
অভিযোগকারীদের
বক্তব্য,
ওয়েবসাইটে
তালিকা
থাকলে
সকলেই
সহজে
সব
জানতে
পারত।
স্বচ্ছতা
নিয়ে
প্রশ্ন
উঠত
না।
এখানে
বোঝা
যাচ্ছে
কোথাও
একটা
লুকোছাপা
চলছে।
ই
পরিষেবা
চালু
হওয়ার
পর
সারা
বিশ্ব
এই
ধরনের
ফল
প্রকাশে
ওয়েবসাইটে
ব্যবহার
করে।
এক্ষেত্রে
বছরের
পর
বছর
অপেক্ষায়
থাকা
চাকরিপ্রার্থীদের
স্বার্থে
ওয়েবসাইটে
ফলপ্রকাশ
শ্রেয়
ছিল।
পর্ষদ
যে
সাইবার
জালিয়াতি
সম্ভাবনার
সাফাই
দিয়েছে,
তা
আদপে
ধোপে
টেকে
না।
তেমন
হলে
ভুয়ো
ওয়েবসাইট
প্রকাশকারী
প্রতারককে
গ্রেফতার
করার
সুযোগ
থাকছে,
সাইবার
ক্রাইম
বিভাগ
সে
জন্য
বসে
রয়েছে।
সাইবার
বিশেষজ্ঞদের
মতে,
জাল
ওয়েবসাইটের
সঙ্গে
আসল
ওয়েবসাইটের
কোনও
যোগ
নেই।
ফলে
ওয়েবসাইটের
ব্যবহার
বন্ধ
করার
কোনও
কারণ
নেই।
পর্ষদ
সভাপতি
যে
যুক্তির
অবতারণা
করেছেন
তা
অসার।
তার
যুক্তি
ওয়েবসাইটে
ফল
দিতে
হলে
তা
এত
লম্বা
হত
যে
পর্ষদ
অফিস
থেকে
করুণাময়ী
পর্যন্ত
চলে
যেত।
প্রশ্ন
হল,
তাহলে
মাধ্যমিকের
ফল
কীভাবে
ওয়েবসাইটে
প্রকাশ
হয়?
সেখানেও
তো
লক্ষ
লক্ষ
পরীক্ষার্থী
থাকে?
পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসবই পর্ষদ সভাপতির অসার কু-যুক্তি। আসলে ব্যাপক হারে অনিয়ম করার পথ প্রশস্ত রাখা হয়েছে। এতে নেতা ধরে যারা টাকা দিতে পেরেছে, তাদের ডাকা হচ্ছে বা হবে। সরকারিভাবে প্রকাশ্যে ফল ঘোষণা না হওয়ায় কেউ জানতেই পারছে না সে কোন র্যাঙ্কে রয়েছে। ফলে দাবি করতে বা অভিযোগ জানাতে পারবে না। এই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি?
এই সরকারের আমলে এর আগে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক ও প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের, অস্বচ্ছতার, স্বজনপোষণের ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছিল। মামলা হয়েছিল। ধরনা, বিক্ষোভ,মিছিল, অনশন -সবই হয়েছিল। ফলে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগের সারবত্তা নেই বলা যায় না। এবারও বিক্ষোভ হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে সেই বিক্ষোভ ভাঙা হচ্ছে। অথচ তাদের দাবি বা বিক্ষোক্ষের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অপরাধ একটাই নেতা ধরে টাকা দিয়ে তারা চাকরি পাকা করতে পারেনি। সফল পরীক্ষার্থীদের এই অভিযোগ সত্য হলে, রাজ্যের তরুণ প্রজম্নকে কি সরকার বিরোধী করে তোলা হবে না?
প্রাথমিকের নিয়োগ গত ছ'বছরে একবারই হয়েছিল। তাতে নেতামন্ত্রীদের পরিবার পরিজন, নেতাদের গাড়ি ড্রাইভার, আত্মীয়-স্বজন ঢালাও চাকরি পেয়েছিল। এবার কম যোগ্যতার বা অযোগ্যরা ৭-৮লাখ টাকার বিনিময়ে পাচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের এরপর প্রশ্ন, তহলে পড়াশোনা করে টেট বসে লাভ কী? চুরি-ডাকাতি-প্রতারণা, পণ নিয়ে সেই টাকায় চাকরি কেনাই তো দস্তুর হয়ে উঠবে। তাতে শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।