ফিরে দেখা, নোট বাতিলের পর থেকে ঠিক কী কী হল একবছরে
নোট বাতিলের পরে গত একবছরে ঠিক কী কী হয়েছে। আসুন স্মৃতির সরণী বেয়ে হেঁটে আসা যাক।
৮ নভেম্বরের সন্ধ্যা রাত। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘোষণা করলেন, কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও জোরদার করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র সরকার। ফলে সেদিন মধ্যরাত থেকেই ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিন সকাল থেকে পুরনো নোট সব বাতিল। তারপরে গত একবছরে ঠিক কী কী হয়েছে। আসুন স্মৃতির সরণী বেয়ে হেঁটে আসা যাক।
বাঁধা হল সময়সীমা
পরের দিন থেকেই পুরনো নোট জমা করার সময় বেঁধে দিল কেন্দ্র। সেইবছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো নোট ব্যাঙ্কে জমা করার সময় দেওয়া হল। পাশাপাশি নিয়ম করা হল, ব্যাঙ্ক থেকে সপ্তাহে ৪ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। এটিএমেও একদিনে ২ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। পরে তা বাড়িয়ে সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা করা হয়েছিল।
ব্যাঙ্কের সামনে লাইন
৯ ও ১০ নভেম্বর বাদ দিয়ে ১১ নভেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি এলাকায় ব্যাঙ্কের সামনে লোকারণ্য অবস্থা। কেউ ভোর থেকে শুরু করে সারাদিন ব্যাঙ্কের টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কেউ আবার সারাদিন অপেক্ষা করেও টাকা পাননি। আবার যারা লাইনে দাঁড়িয়ে নোট হাতে পেয়েছেন, তাদের হাতে এসেছে ২ হাজার টাকার নোট। যা ভাঙাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছে।
লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু
নোট বাতিলের লাইনে দাঁড়িয়ে শুধু যে মানুষ মাসের পর মাস ধরে হয়রান হয়েছেন তা নয়, শতাধিক মানুষ সারা দেশজুড়ে মারা গিয়েছেন। আট থেকে আশি সকলকেই নোট বাতিলের জন্য ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
নোট বাতিলের কারণ বদল
প্রথমে বলা হয়েছিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানে নামতেই নোট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতির প্রসঙ্গও উত্থাপন করা হয়েছিল। তবে পরে জানানো হয়, মূলত ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতেই নোট বাতিল করা হয়েছে। ভারতকে আগামিদিনে ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ বানানোই কেন্দ্রের লক্ষ্য।
জিডিপি-র ইন্দ্রপতন
একদিকে নোট বাতিলের সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা, সঙ্গে অর্থনীতিতেও তার জোর ধাক্কা এসে লেগেছে। উৎপাদন শিল্প থেকে শুরু করে কৃষি, রিয়েল এস্টেট, আমদানি-রফতানি- সব জায়গাতেই ভাটার টান। যার ফলে জিডিপিতে অনেকটা পতন হয়েছে। ৭-৮ শতাংশের বেশি থেকে তা কমে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
কর্মহীন বহু
শুধু কি জিডিপি নেমে যাওয়া? নোট বাতিলের ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। কূটীর শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা, অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা হাজারে হাজারে নিজের রাজ্যে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবসা মার খেয়েছে নোটবন্দির কারণে।
বিরোধিতায় কংগ্রেস-তৃণমূল সহ সকলে
নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকেই বিরোধের সুর চড়া রেখেছেন বিরোধীরা। কেন্দ্রের বিরোধী দল কংগ্রেস ও এরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস একেবারে সর্বাগ্রে থেকে নোট বাতিলের বিরোধিতা করে বারবার কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেছে, রাস্তায় ধরনা দিয়েছে, জনসভা করেছে।
মুখ পুড়ল আরবিআইয়ের
নোট বাতিলের কয়েকমাস কাটতে না কাটতেই যে প্রশ্ন সবার মুখে মুখে ঘুরছিল তা হল মোট কত টাকা ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরল। মোদী সরকারের দাবি ছিল বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা নোট বাতিলের ফলে মূল অর্থব্যবস্থায় ফিরবে না। তবে নোট বাতিলের প্রায় দশমাস পর ফের মুখ পুড়ল মোদী সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। জানানো হল, মোট বাজারে থাকা টাকার ৯৯ শতাংশই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরেছে। তাহলে কালো টাকা গেল কই? সেই প্রশ্ন ফের মাথাচাড়া দিল।
জাল নোটের কারবার থামেনি
কেন্দ্র সরকারের বক্তব্য ছিল, জাল নোটের রমরমা কমবে নোট বাতিলের ফলে। তবে নোট বাতিলের পরের মাস থেকেই নানা জায়গা থেকে জাল নোট পাচারের খবর আসতে শুরু করেছে। মূল্যে তা দিনদিন বাড়ছে। পাকিস্তানের বদলে জাল নোটের রুট হয়েছে বাংলাদেশে সীমান্ত। এখন সেদেশেই জাল নোট ছাপা হচ্ছে বলে খবর।
নোট বাতিল তরজা অব্যাহত
নোট বাতিলের বর্ষপূর্তির আগেরদিন নোট বাতিলকে সংগঠিত লুঠ বলে কড়া আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সারা দেশ অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে বলে মত তাঁর। যদিও বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নোট বাতিলের ঘটনার ইতিবাচকতার উপরে জোর দিয়ে পাল্টা কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। নীতি পঙ্গুত্বে ভোগা কংগ্রেস সরকার দশবছরে কিছুই কাজ করেনি বলে দাবি করেছেন। নোট বাতিলকে বিরোধীরা কালা দিবস বলে পালন করছেন। এদিকে বিজেপি কালো টাকা বিরোধী দিবস বলে দাবি করছে।