বিচ্ছেদের ৭২ বছর পর 'হঠাৎ দেখা', অমলিন সেই ‘প্রেম-গাথা’ মন ছুঁয়ে যাবে আপনারও
কত যুগ কেটে গিয়েছে, মন থেকে হয়তো মুছে গেছে সবই। হঠাৎ আবার দেখা, সেই আপনার চেয়ে আপন যে জনের সাথে। তাও ৭২ বছর পর।
"আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!/আবার বছর কুড়ি পরে-'' জীবনানন্দ দাশের সেই অমর কবিতার প্রসঙ্গই ভেসে ওঠে এ গল্পে। এ এমনই এক কাহিনি যে, মন ছুঁয়ে যাবে আমার, আপনার, সবারই। কত যুগ কেটে গিয়েছে, মন থেকে হয়তো মুছে গেছে সবই। হঠাৎ আবার দেখা, সেই আপনার চেয়ে আপন যে জনের সাথে। তাও ৭২ বছর পর।
বয়স তখন ৯০ ছাড়িয়ে ১০০-র কোঠায়। দেখা হল দুজনের। না, নতুন করে শুরু করার আর সময় নেই। কিন্তু আজও মনে আছে সেদিনের সব কথা। সে কথা আজকের নয়। স্বাধীন হয়নি তখনও দেশ। ১৯৪৬-এর ডিসেম্বর। ওঁরা জুটি বেঁধেছিলেন। তাও মাত্র আটমাসের জন্য। প্রথম প্রেম, প্রথম বিয়ে বলে কথা। তা কি ভোলা যায়!
দীর্ঘ ৭২ বছর কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখেননি। দেখার উপায়ও ছিল না। ১৯৪৬ সালের যখন বিয়ে হয়েছিল নারায়ণ ও সারদার, তখন ওঁদের বয়স যথাক্রমে ১৮ ও ১৩। তারপর সাত দশকেরও বেশি সময়ে পেরিয়ে গিয়েছে। নারায়ণনের বয়স ৯১ আর সারদার ৮৬। দুজনের জীবনেই নেমে এসেছে পড়ন্ত বিকেল।
চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। মুখে অজস্র রেখা। সাদা ধবধবে মাথার চুল। দৃষ্টিশক্তি কমেছে। এতদিন পর যখন দেখা হল দুজনের, প্রথম দর্শনেই একে অপরকে ঠিক চিনতে পেরেছিলেন। কেমন আছো, কেমন চলছে সংসার, তা বলারও উপায় ছিল না। তাই প্রথম দেখায় একে অপরের দিকে চেয়েছিলেন দুজনে, অনেকক্ষণ। বেশ খানিক পর কথাও হল, ফিরল পুরনো দিন।
যাওয়ার সময়ে নারায়াণন বললেন, আজ তাহলে চলি। তখন সারদাদেবী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঝের দিকে, বাকহীন। বাস্তবের এ কাহিনির ইতি এখানেই। কিন্তু নেপথ্যে রয়েছে এক করুণ কাহিনি! তখন ব্রিটিশের শাসন চলছে। নারায়ণন ছিলেন বিপ্লবী। কেরলের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সেনানি তিনি। সামন্তবাদীদের বিরুদ্ধে প্র্তিবাদী আন্দোলনে নেমেছিলেন তিনি।
বিয়ের ঠিক পরেই মালাবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন নারায়ণন। নববধূকে ছেড়ে আট বছরেরও বেশি সময় কাটে কন্নুরের সংশোধনাগারে। মুক্তি পান ১৯৫৪ সালে। তখন দেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছে। স্বাধীন ভারতের সংবিধানও রচনা হয়ে গিয়েছে। বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যখন তিনি ফিরে এলেন, দেখলেন স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরে তিনিও দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসারী হলেন। এখন তিনি সাত সন্তানের পিতা।
আর এই পড়ন্ত বিকেলে যখন তাঁরা স্মৃতি নিয়েই হাতড়াতে পছন্দ করেন, তখনই নারায়ণন ও সারদার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা স্থির করলেন তাঁদের দেখা করার বন্দোবস্ত করে দেবেন তাঁরাই। সেইমতোই কন্নুর জেলার ভার্গাবান শহরে সারদার বাড়িতে এসে সাক্ষাৎ করলেন নারায়ণন। একেবারে সিনেমার মতো।
এখানেই শেষ নয়, নারায়ণ-সারদার সিনেমার মতো জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে উপন্যাসও রচিত হয়েছে। নারায়ণনের ভাইঝি সান্তা কাকার জীবনের এই কাহিনি মলাটবন্দি করেছেন। নারায়ণন ও সারদার এই'পুনর্মিলন'ও স্থান পেয়েছে তাঁর উপন্যাসে। বিচ্ছেদের ৭২ বছর পর এই সাক্ষাতেই মধুরেন সমাপয়েৎ হয়েছে উপন্যাসের।