এনএসজি-র বদলা? দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে এবার চিনকে চাপে ফেলতে মরিয়া ভারত
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের অবৈধ নির্মাণ ও অধিকার ফলানোর চেষ্টাকেই হাতিয়ার করেছে ভারত। এক্ষেত্রে ভারত পাশে পেয়েছে জাপানকে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যতই প্রতিবেশী দেশ হিসাবে চিনের অথবা তার রাষ্ট্রপতি জি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে সৌহার্দ্যের বার্তা দিন না কেন, ভারত-চিন সম্পর্কের শৈত্য কিছুতেই কাটছে না। আর তার জন্য ভারত নয়, বহুলাংশে দায়ী চিনই।
ভারত যাতে নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ বা এনএসজিতে ঢুকতে না পারে তার জন্য সর্বাগ্রে বাধা দিয়ে আসছে চিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বাকী দেশগুলি ভারতের বিষয়ে ইতিবাচক হয়েও একা বেঁকে বসে রয়েছে চিন। আর তাই এখনও এনএসজি-র সদস্যপদ পায়নি ভারত।
এছাড়া পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জঈশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার, যে সংসদে হামলা ও এবছরের শুরুতেই পাঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা চালিয়েছে, তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও চিন নিরাপত্তা পরিষদে বাধা দিয়ে আসছে। একমাত্র তাদের ভেটো (বিশেষ ভোটদানের ক্ষমতা) ব্যবহারের কারণেই ভারতের এই ন্যায্য দাবি আটকে রয়েছে। [দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে এত লড়াই কেন? কী এর প্রেক্ষাপট, জেনে নিন]
এই দুটি ঘটনার বদলা নিতেই এবার কূটনৈতিক স্তরে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে ভারত। আর সেক্ষেত্রে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের অবৈধ নির্মাণ ও অধিকার ফলানোর চেষ্টাকেই হাতিয়ার করেছে ভারত। প্রথমে সিঙ্গাপুরকে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে যৌথ বিবৃতির কথা বললেও সিঙ্গাপুর ভারতের দাবি না মেনে পিছিয়ে গিয়েছে। প্রথমত দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে লড়ে সিঙ্গাপুরের সেভাবে লাভ হবে না। আর তাছাড়া দেশটি ছোট হওয়ায় চিনের সঙ্গে কোনওদিক থেকেই পেরে উঠবে না। [দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের একার অধিকার নেই, জানাল ট্রাইব্যুনাল]
সিঙ্গাপুর মুখ ফিরিয়ে নিলেও ভারত পাশে পেয়েছে জাপানকে। গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের দখলদারিকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই দক্ষিণ চিন সাগরের চারপাশের দেশগুলিকে একজোট করে চিনকে প্যাঁচে ফেলতে নয়া কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েছে ভারত। আর এক্ষেত্রে জাপান, ভিয়েতনামের মতো দেশ নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে। [পৃথিবীর গভীরতম 'সিঙ্কহোল'-এর খোঁজ মিলল দক্ষিণ চিন সাগরে!]
ভারত যে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা যথার্থ বলে জানিয়েছে জাপান। তার পিছনে শিনজো আবে সরকারে স্বার্থ হল, পূর্ব চিন সাগরে সেনকাকু দ্বীপে জাপানের আধিপত্যকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বেজিং। [মার্কিন জাহাজের আনাগোনা দেখেই দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক অনুশীলন শুরু করছে বেজিং]
এই অবস্থায় ভারত পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি সহ নানা বিষয়ে জোট তৈরি করে চিনকে চাপে ফেলতে চাইছে। এক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলিকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত দেশ মূলত দক্ষিণ চিন সাগর ঘিরে চিনা আগ্রাসনের শিকার তাদেরকে একজোট করে এগোতে চাইছে নয়াদিল্লি। তবে তাতে কি আদৌও চাপ অনুভব করবে বেজিং? সময়ই তার উত্তর দেবে।