জোটের প্রশ্নে শুধু বিরোধীদের নয়, বিজেপির অবস্থাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক; নেহাত মোদীর জন্যে তা চোখে পড়ছে না
চলতি লোকসভা নির্বাচনকে অনেকেই বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বনাম মহাজোট-এর লড়াই। অর্থাৎ, একদিকে মোদীর ব্যক্তি নেতৃত্ব ও অন্যদিকে সম্মিলিত নেতৃত্ব।
চলতি লোকসভা নির্বাচনকে অনেকেই বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বনাম মহাজোট-এর লড়াই। অর্থাৎ, একদিকে মোদীর ব্যক্তি নেতৃত্ব ও অন্যদিকে সম্মিলিত নেতৃত্ব। অনেকটা ১৯৭৭ সালের ইন্দিরা বনাম বাকিদের লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেবারে ইন্দিরাকে জনতা জোট হারালেও তিন বছরের বেশি সেই অ-কংগ্রেসি সরকার টেকেনি; স্বমহিমায় ফিরেছিলেন জওহরলাল-তনয়া।
কিন্তু খোলা চোখে এবারের লড়াইটা একের বিরুদ্ধে অনেক মনে হলেও এর মধ্যে বেশ কিছু সমীকরণ রয়েছে। যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে তা হল মোদীকে হারাতে বিপক্ষ জোটের মধ্যে নানা ধরনের অনৈক্য, অসঙ্গতি। কোথাও জোট হচ্ছে তো কোথাও হচ্ছে না; কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভালো। এক উত্তরপ্রদেশে দু'টি প্রধান আঞ্চলিক দলের জোট ছাড়া সামগ্রিকভাবে নড়বড়ে, অনিশ্চিত বিরোধী ঐক্য নিয়ে কি বিজেপিকে হারানো যাবে? প্রশ্ন উঠছে।
শুধুমাত্র বিরোধীদের জোটই দাঁড়াচ্ছে না, তা কিন্তু নয়
কিন্তু যেই বিষয়টি বিরোধীদের অনৈক্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে, তা হচ্ছে খোদ বিজেপির জোটের অবস্থা। গেরুয়া শিবিরের সমর্থকরা ধরেই নিচ্ছেন যে মোদী একাই বিজেপিকে জিতিয়ে দেবেন, ঠিক পাঁচ বছর আগের মতো। জোটের প্রয়োজনই পড়বে না। কিন্তু প্রদীপের নিচেই অন্ধকারের মতো এটাও সত্যি যে বিজেপির নিজস্ব জোট এনডিএ-এর অবস্থা যে খুব ভালো সে কথা বলা চলে না।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি অর্কর গঠনে প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যার থেকে কম পেলে কী করবে জাতীয় প্রশ্ন প্রথমে উঠলেও পরে দেখা যায় অনেক দলই মোদীর বিতর্কিত অতীতকে ভুলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত জোটসঙ্গীর প্রয়োজন বিশেষ পড়েনি কারণ বিজেপিও একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।
বিজেপির যদি এবারে জোটসঙ্গীর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে কী?
এবারে সেই প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা জেতার প্রসঙ্গটি ফের প্রাসঙ্গিক। যদিও বিজেপি এখন জাতীয় স্তরে অনেক বিস্তৃত দল, কিন্তু ভুলে চলবে না যে মোদী এবারে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়ছেন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবারে যদি না আসে তাহলে বিজেপির 'প্ল্যান বি' কী?
এই 'প্ল্যান বি'-র কথা উঠলেই এসে পড়ে জোটের কথা। আর একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে বিজেপির বেশ কিছু জোটসঙ্গীর সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক ভালো নয়। আবার বেশ কিছু দল ইতিমধ্যে এনডিএ ছেড়ে চলেও গিয়েছে যার ফলে বিজেপির আঞ্চলিক রাজনীতির উপরে নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়েছে।
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির হাত ছেড়েছে নানা দল
গত বছর অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের তকমা দেওয়ার প্রসঙ্গে বিজেপির উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে এনডিএ ত্যাগ করেন তেলুগু দেশম পার্টি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু। বিহারে উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টিঅ এনডিএ ছেড়েছে আসন রফার বিষয়ে অনৈক্যের কারণে।
দক্ষিণে ভাইকোর এমডিএমকে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছু মাস পরেই এনডিএ ত্যাগ করে; অভিযোগ ছিল মোদীর কেন্দ্র সরকার তামিল মানুষের স্বার্থ নিয়ে যথেষ্ঠ তৎপরতা দেখাচ্ছে না। উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীরে আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি সেখানকার পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেও শেষ পর্যন্ত গণেশ উল্টানো রুখতে পারেনি বিজেপি। হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস বা সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির মতো ছোট দলও থাকেনি বিজেপির সঙ্গে। উত্তরপূর্বে নাগরিকপঞ্জির ইস্যুতেও বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে; আসামের অসম গণ পরিষদ ইতিমধ্যেই এনডিএ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমে শিবসেনা বিজেপির সঙ্গ না ছাড়লেও এনডিএ-র এই দুই বড় শরিকের মধ্যে আকচা-আকচি প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়াও আরও ছোটখাটো অনেক দল রয়েছে যারা নানা সময়ে বিজেপিকে ছেড়ে চলে গিয়েছে কারণ তাদের মতে, গেরুয়া দল সেভাবে জোটধর্ম পালন করছে না। এখন দেখার এই বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরে যদি বিজেপির আসনের প্রয়োজন পড়ে, তবে সেই পরিস্থিতি তারা কীভাবে সামাল দেয়।