ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর কী হবে কেউ জানে না; তাই তৈরি হচ্ছে সব দেশই
ক্ষমতা হস্তান্তরের আরও দু'টি মাস। আর তার মধ্যেই নানাভাবে তৈরি থাকছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র সবাই। কে জানে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কেমন হবেন?
গত ৮ নভেম্বর তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জেতার পরে নানা মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কিন্তু মার্কিন মুলুকের অভ্যন্তরে যত না প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবীর নানা দেশে কী প্রভাব পড়েছে। ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যভার নিতে এখনও মাসদুয়েক রয়েছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্পর্ক এমন অনেক রাষ্ট্রই ইতিমধ্যে তাদের নীতিতে ট্রাম্পের শাসনকালে কী হতে পারে ভেবে আঁটঘাঁট বেঁধে নেমে পড়েছে।
যেমন ধরা যাক রাশিয়ার কথা। যদিও ট্রাম্পের জয়তে রুশ নেতৃত্ব বেশি খুশি (হিলারি জিতলে তাঁরা তা হতেন না) কিনতু পাশাপাশি মস্কো সিরিয়াতে নিজে সামরিক অভিযান বলবৎ রেখেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি ট্রাম্পের জয়ে উচ্ছাস জানিয়ে আমেরিকা তাঁর দেশের "সহজাত বনধু" বলে অভিহিত করেছেন যা নিঃসন্দেহে রাশিয়াকে একটু হলেও ভাবাবে।
অপরদিকে, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে রাশিয়া চাইছে যত তাড়াতাড়ি সিরিয়া সমস্যা শেষ করে দেওয়া যায় এবং ট্রাম্প সরকারিভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে দুই দেশের মধ্যে সিরিয়া নিয়ে আর কোনও মতবিরোধের সম্ভাবনা না থাকে।
অন্যদিকে, যে মেক্সিকোকে ট্রাম্প অহোরাত্র আক্রমণ করেছেনা তাঁর প্রচারের সময়ে তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মেক্সিকান নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ১১-দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, যেই দেশটির সঙ্গে আমেরিকার এখন সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই চিনও তাদের কোণঠাসা করতে নতুন বাণিজ্যিক জোট তৈরির মতলব করছে।
পশ্চিম এশিয়ায় জঙ্গি সংগঠন আইএসও ইরাকি সেনার কাছে কোনঠাসা হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টের সবরকম বিরোধিতা করতে প্রস্তুত। সব মিলিয়ে, সরকারিভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করার পর ট্রাম্পকে যে বিদেশনীতিতে প্রচুর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, সে বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়টি সেদেশের প্রশাসনের কাছে বরাবরই মাথাব্যথার কারণ। এই সময়েই স্তিতিশীল মার্কিন রাজনীতিতে সবথেকে অস্থির সময়। ১৮৬০-৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠেছিল এই হস্তান্তরের সময়েই। এই সমস্যা গিয়ে শেষ হয় গৃহযুদ্ধে এবং এব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বে মার্কিন 'যুক্তরাষ্ট্র' হিসেবে স্থায়ী হয়।
এবারের সমস্যা অবশ্য ঘরের থেকেও বেশি বাইরে। ট্রাম্প বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত বিদেশনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁর নিজের রিপাবলিকান দলের বিরুদ্ধেও তিনি এব্যাপারে অবস্থান নিয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। আর মার্কিন বিদেশনীতিতে ব্যক্তি ট্রাম্প বাস্তবে কী মূর্তি ধারণ করবেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে, তার কোনও তল এখনও বিশেষ পায়নি কেউই। আর তাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের তৎপরতা আরও বেড়েছে।
ট্রাম্পের আমেরিকা কীরকম হবে তা নিয়ে সন্দিহান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রগুলিও। ওয়াশিংটনের পুরোনো মিত্র জাপানের প্রধানমন্ত্রী যেমন এই সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন নিউ ইয়র্কে তাঁর বাসস্থানে। উদ্দেশ্য, মিত্রদেশগুলিকে ট্রাম্প কীভাবে দেখছেন, সেটা বুঝতে। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরে আবে যদিও আস্বস্ত বোধ করেছেন কিন্তু খুব বেশি দেশ এখনও সেই বিশ্বাস দেখাতে পারেনি বারাক ওবামার উত্তরসূরীর প্রতি।