ভোটের সময়ে নানা বাজে কথা বলছেন নেতা-নেত্রীরা; দেশের মেধাশক্তির মতো গম্ভীর বিষয়ে কিছু ভাবছেন কি
একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন শত্রুপক্ষের রেডারকে ফাঁকি দিতে তাঁর পরামর্শ ছিল মেঘের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাক বায়ুসেনার বিমান। সেই নিয়ে প্রবল হট্টগোল শুরু হওয়ার পরে বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো
একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন শত্রুপক্ষের রেডারকে ফাঁকি দিতে তাঁর পরামর্শ ছিল, মেঘের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাক ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান। সেই নিয়ে প্রবল হট্টগোল শুরু হওয়ার পরে বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসলেন মোদীকে। বললেন, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে তিনি ত্যাগ করেছেন নিজের স্ত্রীকেই। এর পাল্টা দিয়ে মায়াবতীকে কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বলেছেন, বিএসপি নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে এমন কথা বলে প্রমাণ করেছেন যে তিনি জনজীবনে থাকার মতো যোগ্য নন।
ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে নির্বাচনের এইগুলি হচ্ছে 'মুদ্দা'। বাচালতা, অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা, অল্পজ্ঞান নিয়ে জনসমক্ষে নিজের হয়ে ঢাক পেটানো -- এসবই চলছে অহরহ। অথচ, যেই সমস্যা নিয়ে এই নেতা-নেত্রীদের কাছে মানুষ কিছু শোনার আশা রাখে, তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। এমনকী, এই নির্বাচনের সময়েও নয়।
কী সেই সমস্যা?
দেশের মেধাশক্তির লালন নিয়ে কোনও কথা শুনছি না, এই নির্বাচনের ভরা বাজারেও
এক বড় সমস্যা হচ্ছে মেধার লালন। ভারত ভবিষ্যতের সুপারপাওয়ার ইত্যাদি নানা কথা নেতাদের গলায় শোনা গেলেও আদতে দেশের মেধাশক্তির লালনের জন্যে কতটা উদ্যোগী তাঁরা, সে বিষয়ে যতটা কম বলা যায় ততই ভালো। দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে হাল কী রকম? উচ্চশিক্ষার্থী ও গবেষকরা কি যথেষ্ট সাহায্য ও অনুদান পাচ্ছেন সরকারের তরফে? আর যদি না পেয়ে থাকেন, তাঁদের হয়ে কি কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতাকে গলা ফাটাতে শোনা যাচ্ছে?
সেই জাতীয়তাবাদ, দুর্নীতি, জাতপাত, নেই কোনও দেশ গড়ার নীলনকশা
কিছু দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে মেধাশক্তির উল্লেখ থাকলেও রূক্ষবাস্তবে তো সেই জাতীয়তাবাদ, দুর্নীতি আর জাতপাত নিয়ে কচকচানি চলছে। যেই দেশের সংবিধানে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে; দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যেখানে উচ্চশিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষের উপরে জোর দিয়েছিলেন, সেখানে আজকে��� রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কতটা ভাবিত? নাকি ব্যাপারটিকে তাঁরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞান করেন?
অর্থনৈতিক সংস্কার বা কর্মসংস্থান নিয়ে শাসকদলের কণ্ঠে এবারে বিশেষ কিছুই শোনা যাচ্ছে না কারণ তারা জানে প্রতিশ্রুতির ঢল যেভাবে নেমেছিল, আশাপূরণ হয়নি সে হারে। আর সেই কারণে ওই বিষয়গুলি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়িকেই সঠিক নীতি হিসেবে ধরা হয়েছে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার জন্যে।
দেশের মেধারাই যদি নিজেদের মেলে না ধরতে পারে, তবে দেশের ভবিষ্যৎ কী?
কিন্তু যদি এ দেশ সুপারপাওয়ার হতে চায়, তাহলে মেধাশক্তিকে অবজ্ঞা করে কতদিন চলতে পারি আমরা? উচ্চশিক্ষায় গবেষণা বা বিজ্ঞানমনস্কতাকে উৎসাহ না দিতে পারলে কী লাভ হবে আমাদের? অথচ গবেষণা ক্ষেত্রে যথেষ্ট চাকরি বা অর্থনৈতিক সুবিধে না থাকতে অথৈ জলে পড়ছেন মেধাবী গবেষক-ছাত্রছাত্রীরা। দেশকে দরিদ্র করে দিয়ে পারি দিচ্ছেন বিদেশে। আবার ফিরতে চাইলেও ফিরতে পারছেন না। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছেন না। আজকের কথাসর্বস্ব রাজনৈতিক কুশীলবরা আজীবন ঘটনার কেন্দ্রে থাকবেন না কিন্তু যেই সুদূরপ্রসারী বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার; যেই বিষয়গুলির উপরে নির্ভর করছে ভারতের সত্যিকারের সুপারপাওয়ার হয়ে ওঠা, সেগুলির থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলে শেষ অব���ি ক্ষতি কার?
নেতা-নেত্রীদের যে নয়, অন্তত সেটুকু পরিষ্কার।