নোট বাতিল: আর সবাই যখন হল্লা করতে ব্যস্ত, বুদ্ধিমান নীতীশ নিজের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন হিসেব করে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ৮ নভেম্বর তাঁর বিতর্কিত নোট বাতিলের ঘোষণা করার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বিরোধীপক্ষ। তাঁদের কাছে এ যেন কুড়িয়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। কিনতু কীভাবে মোদীর এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করা হবে সে বিষয়ে কিন্তু কোনও ঐক্য নেই বিরোধীদের মধ্যে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আম আদমি পার্টি নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল যেখানে পথে নেমে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব, সেখানে আরেক মোদী-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার কিনতু হেঁটেছেন উল্টোপথে। তিনি মোদীর এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেছেন একটু কষ্ট হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যেখানে ভাবছেন নীতীশের এই বেঁকে বসা বিরোধী শিবিরকে দুর্বল করছে, জেডিইউ নেতা নীতীশ কিনতু ভাবছেন অন্য কথা। ডিমনেটাইজেশন নয়, নীতীশ হিসেব করে পা ফেলছেন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবে।
এই মুহূর্তে দেশে মোদীর বিকল্প নেতা কেউই নেই বিশেষ। তাও যদি নিতান্ত খুঁজতেই হয়, তাহলে সবার আগে আসবে নীতীশের নাম। প্রশাসক হিসেবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত নীতীশকে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীর সাথেই তুলনা করা হতো এবং বিজেপি তথা এনডিএ-তে মোদীর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে উত্থানকে মেনে না নিতে পেরে এনডিএ-র থেকে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা আর নেই দেখেই তিনি সে কাজ করেছিলেন বলে অনেকের অভিমত।
আর মোদী-বিরোধী নেতৃত্বের তালিকায় দ্বিতীয় নাম আসবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্য প্রশাসনে তাঁর অভিজ্ঞতা নীতীশের থেকে কম হলেও জনভিত্তির জোরে তিনি কম যান না। নিজের রাজ্যে তাঁর আর নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই আর তাই তিনিও এই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে পথে নেমেছেন পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই। নীতীশের সরকারে থাকা লালুপ্রসাদের দিকেও তিনি বিরোধী ঐক্যের জন্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আর এখানেই নীতীশের এই বিরোধিতায় নাম না লেখানোর কারণ লুকিয়ে রয়েছে। নীতীশ-লালুর সরকারে গত একবছরের মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। দুই নেতার মধ্যে ব্যবধান আবার বাড়তে শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে নানা মহলে। আর তাই যেখানে লালু-মমতারা মোদীর বিরোধিতা করে নিজেদের গুরুত্ব বোঝাতে চাইছেন, নীতীশকুমার খেলছেন অন্য খেলা। মোদী এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বুঝেই তিনি জাতীয় স্বার্থে কোনও বাধাবিঘ্ন তৈরি করতে চাইছেন না।
বরং, তিনি যে নেহাত আঞ্চলিক নেতা নন, তাঁরও চিন্তাভাবনা জাতীয় পর্যায়ের এবং সুযোগ পেলে তিনি একজন "সেকিউলার মোদী" হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন, সেটা দেখাতেই নীতীশ এই পর্যায়ে মোদীকে সমর্থন জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে মমতা-কেজরিওয়ালদের মোদী বিরোধিতা অনেক মানুষই ভালো চোখে দেখছে না। বলছে নিজেদের দলের দুর্নীতি নিয়ে অথৈ জলে পড়েছে বলেই তাঁদের এই বিরোধিতা।
নীতীশ সে জন্যে ওই পথে যাননি। তিনি বরং কথা বলছেন একজন 'দেশপ্রেমী' প্রশাসকের ভাষায় কারণ তিনি জানেন মোদীকে মাত দিতে হলে মোদীর মতো করেই খেলা খেলতে হবে। বিরোধীদের জোটজটের প্রহসনের মধ্যেও আর থাকতে চাইছেন না। ভারতীয় রাজনীতিতে যে নতুন ব্যক্তিকেন্দ্রিক 'প্রেসিডেন্সিয়াল প্যাটার্ন'-এর সূচনা হয়েছে, তাতেও নিজের ব্র্যান্ডকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন নীতীশ।
মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দীর্ঘ মেয়াদে কতটা ভালো তা জানা নেই কিন্তু ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ নীতীশের কৌশল যে খুব খারাপ নয় তা মানতে দ্বিধা নেই।