মোদী জমানায় দলিত, আদিবাসীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও তার বিপুল অংশই অব্যবহৃত, জানাচ্ছে প্রতিবেদন
মোদী জমানায় দলিত, আদিবাসীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও তার বিপুল অংশই অব্যবহৃত, জানাচ্ছে প্রতিবেদন
২০১৪ সালের ঐতিহাসিক সেই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্ৰাৰ্থী নরেন্দ্র মোদী কেরলের এক প্রচারসভায় নিজেকে "অস্পৃশ্যতার শিকার" বলে অভিহিত করে জানিয়েছিলেন পরবর্তী দশকটি হবে দেশের দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণীর।
সেই দাবির পর নর্মদা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বিপুল ভোট জিতে তিন দশক পরে একটি সংখ্যাগুরু সরকারের নেতৃত্বে এখন মোদী। এবং সেই প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতোই এনডিএ সরকার ২০১৪-১৫ সালের বাজেটে দলিত এবং তফসিলি জাতি/উপজাতির উন্নয়ন খাতে পঁচিশ শতাংশ বেশি অর্থবরাদ্দ করে।
কিনতু, সেই বরাদ্দ হওয়া অর্থের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় তেত্রিশ হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃতই পড়ে থাকে ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে, জানিয়েছে ইন্ডিয়াস্পেন্ড-এর একটি প্রতিবেদন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হওয়া এই প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম বছরেই এই অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (২৫০ শতাংশ!)। বা আরেকটু তথ্য যোগ করলে বলা চলে, কেন্দ্র সরকারের কাছে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত এই তিন বছরের তথ্যই রয়েছে। অর্থাৎ মোদী সরকার যতটা না অর্থ বরাদ্দ করেছে দলিত এবং আদিবাসীদের জন্য, তার দশগুণ বেশি অর্থ বাস্তবে খরচ করেনি।
পনেরো বছর পরেও রিপোর্ট হাতে আসেনি?
অবশ্য, এই উদাসীনতার শুরু এখানেই নয়। ইন্ডিয়াস্পেন্ড-এর মতে, ১৯৯৭ এবং ২০০২ সালে বিহার সরকার দলিতদের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করে কিনতু যখন তথ্যের অধিকার বলে জানার চেষ্টা করা হয় যে গত দেড় দশকে এই বরাদ্দ অর্থের কত শতাংশ দিনের আলো দেখেছে, উত্তর আসে: "এবিষয়ে এখনও পূর্ণ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।কাজ চলছে।" মানে, ১৫ বছর পরেও দলিত শ্রেণীর জন্য প্রদত্ত অর্থের সদ্ব্যবহারের কোনও প্রমাণ নেই।
দলিত এবং আদিবাসীদের খাতে অর্থবরাদ্দের রীতি চালু হয় সাড়ে তিন দশক আগে কিনতু প্রায় কোনও সরকারই এনিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা দেখায়নি অতীতে। এই দুই খাতে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সজাগ এমন একটি সংস্থার পক্ষ থেকে ইন্ডিয়াস্পেন্ডকে জানানো হয় যে সরকার শুধু পয়সা বরাদ্দ করেই দায় সেরে ফেলে কিনতু প্রকৃত অর্থে তার সদ্ব্যবহার নিয়ে মাথা ঘামায় না। এর ফলেই বছরের পর বছর এই অব্যবহৃত অর্থের পাহাড় জমছে অথচ কোনওপক্ষ থেকেই কোনও হেলদোল নেই।
দলিত এবং তফসিলি জাতি/উপজাতির উন্নয়নের অর্থব্যয়ের চিত্রটি এত করুণ কেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইন্ডিয়াসপেন্ড দু'টি কারণের কথা বলেছে। প্রথমত, এই উন্নয়নের খাতে অর্থব্যয়ের জন্য কোনও আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নেই। আর দ্বিতীয়ত, তৃণমূল স্তরে কী কী প্রয়োজন রয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে স্থানীয় কমিটি গঠন করে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অকার্যকর থেকে যায়। উদ্যোগ নেওয়া বা প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করা -- সেসবের কোনও বালাই না থাকতে মার খেয়ে যাচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটিই।
রাজ্যগুলি কেন্দ্রকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে না
ইন্ডিয়াস্পেন্ড-এর প্রতিবেদনটিতে আরও আশ্চর্যজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অথচ এই দলিত/পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের উন্নয়নার্থে বরাদ্দ অর্থ সম্পর্কে আয়োগ কিছুই জানে না কারণ সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি তাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করে না।
যোজনা কমিশনের সময়ে রাজ্যগুলিকে তাদের নিজের নিজের প্রস্তাব পাঠাতে হতো কারণ কমিশন সরাসরি নজর রাখত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির উপরে। দেখা গিয়েছে, এই উন্নয়ন বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বহু রাজ্যের কাছেই ঠিকঠাক হিসেবে নেই। বা থাকলেও তা আয়োগের তথ্যের সঙ্গে মেলে না।
ইন্ডিয়াস্পেন্ড এও জানিয়েছে যে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হলেও তা হাতে এসে পৌঁছয় অনেক দেরি করে আর তার ফলে তা আর ঠিকঠাকভাবে খরচ করা হয় না।