গুজরাতি মন তো, বলে দিলেন পঞ্চধাতুর মূর্তি তৈরী করে দেব! অপমানের ঘা কিন্তু তাতে শুকোবে না
কলকাতার সংঘর্ষের পরে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলেননি মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গে।
এই তো গুজরাতির মুখে খই ফুটেছে। মঙ্গলবার উত্তর কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের প্রচারসভা চলাকালীন বিদ্যাসাগর কলেজে অগ্নিসংযোগ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙচুরের পরে রাজনৈতিক আবহাওয়া তপ্ত হয়ে ওঠার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন বৃহস্পতিবার, ১৬ মে। কলকাতার সংঘর্ষের পরে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলেননি মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের মাউতে প্রধানমন্ত্রী টেনে আনলেন মূর্তি ভাঙার বিষয়টি এবং বললেন ওই ঘটনার পিছনে হাত রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস-আশ্রিত গুন্ডাদের। তিনি বলেন বিদ্যাসাগরের জীবনদর্শনের প্রতি দায়বদ্ধ তাঁর সরকার মহামনীষীর মূর্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন পঞ্চধাতু দিয়ে ওই মূর্তি তাঁরা তৈরী করে দেবেন।
মূর্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বদলে উত্তরপ্রদেশে মুখ খুললেন কেন মোদী?
এই প্রশ্ন এখানে ওঠে যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গে মোদী পশ্চিমবঙ্গে কিছু না বলে উত্তরপ্রদেশে মুখ খুললেন কেন? উত্তরটা আসলে রয়েছে ধুরন্ধর মোদীর রাজনৈতিক চালের মধ্যে। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি জানিয়েছিলেন যে বিজেপি অন্য রাজ্য, যেমন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। যেহেতু ওই তিনটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে গেরুয়া দল -- একা বা জোটে -- তাই তাঁর পক্ষে এই অভিযোগ তোলা সহজ হয়েছে। আর উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদী তাকেই হাতিয়ার করে স্থানীয়দের খেপিয়ে মহাজোটের সম্ভাবনাকে বানচাল করার চেষ্টা করেছেন। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী কলকাতার ঘটনার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করার পরে মোদী একহাত নিয়েছেন বিএসপি নেত্রীকে।
মমতার কথা টেনে মহাজোটের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টাও করলেন প্রধানমন্ত্রী
মোদী বলেন তিনি ভেবেছিলেন মমতা উত্তরপ্রদেশের মানুষকে বহিরাগত বলার পরে মায়াবতী তাঁর সমালোচনা করবেন কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। লোককে খেপাতে এর চেয়ে বেশি কার্যকরী দাওয়াই আর কী হতে পারে?
সবচেয়ে হতাশাজনক ঘটনা হচ্ছে যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি টুকরো টুকরো হওয়ার পরেও বিজেপির তরফ থেকে কোনও দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি। তারা এই বলতেই ব্যস্ত যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলবল তাদের উপরে হামলা চালিয়েছে আর মূর্তি তারাই ভেঙেছে। মূর্তি যেই ভেঙে থাকুক, দু'টি রাজনৈতিক দলের কেউই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নৈতিক দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। বিজেপি যদি সত্যিই বঙ্গের মন জিততে চায়, এমন ঘটনায় তাদের অবস্থান নরম করতেই হবে। পঞ্চধাতুর বা অষ্টধাতুর মূর্তি বানিয়ে দিলেই বাঙালির মনে এই অপমানের ঘা শুকোবে না।
কিন্তু গুজরাতি মন তো, হয়তো ধাতুর চিন্তাটাই আগে আসে।