ক্রমবর্ধমান দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে একাধিক মারণ ব্যাধি
ইতিমধ্যেই বিশ্বের সব থেকে দূষিত শহরের তকমা পেয়েছে দিল্লি। পিছিয়ে নেই তিলোত্তমা কলকাতাও। বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা স্কাইমেটের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত শহরের তালিকায় কলকাতা রয়েছে পাঁচ নম্বরে। পাশাপাশি দূষণের বাড়বাড়ন্তের নিরিখে বাণিজ্য নগরী মুম্বই রয়েছে ৯ নম্বরে।
এবার অত্যধিক বায়ুদূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে পৃথিবীর আবহাওয়ার মানচিত্রেও দেখা দিচ্ছে বড়সড় পরিবর্তন। একই সঙ্গে মানব শরীরেও দেখা দিচ্ছে একাধিক মারণ ব্যাধি। বায়ুদূষণ ও ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি এই বিষয়ে ল্যান্সেট নামক একটি গবেষণা সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ল্যান্সেটের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ুর যে ভাবে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে তার ফলে তা বর্তমানে সদ্যজাত কোনও শিশুর শরীরের উপর আজীবন প্রভাব ফেলবে। আজ পৃথিবীর বুকে জন্মগ্রহণকারী কোনও শিশুর বয়স যখন ৭১ হবে তখন ১৭০০ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্বব্যাপী শিল্পায়নের আগের সময়ের থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
ভারতীয় শিশুরা, যারা ইতিমধ্যে খারাপ বাতাসের সংস্পর্শে রয়েছে এবং অপুষ্টির শিকার তাদের শরীরে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলবে এই জলবায়ু পরিবর্তন। ল্যান্সেটের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনায় শিশুরা সহজেই একাধিক সংক্রামক ব্যাধিরও শিকার হবে। ল্যান্সেটের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ডায়রিয়ার সংক্রমণের জন্য দায়ী ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে।
একইভাবে, পরিবর্তিত আবহাওয়ার জন্য নিদর্শনগুলি ভিব্রিও কলেরা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশও তৈরি করছে হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত ধরে ১৯৮০ এর দশকের গোরার দিক থেকে বর্তমানে এই জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে এই রোগের পরিমাণ প্রতি বছর ৩শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জলবায়ু ক্রম পরিবর্তন এর বৃদ্ধিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।
ল্যান্সেটের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে জেরে বর্তমানে ডেঙ্গু বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মশা বাহিত রোগে পরিণত হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। রেকর্ড বলছে, সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু হয়েছে এমন দশটি বছরের মধ্যে নয়টিই ২০০০ সালের পর এসেছে। এর জেরে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ল্যান্সেটের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বর্তমান সময়ে জন্মগ্রহণ করা একটি শিশু তার কৈশোরে ও যৌবনকালে একাধিক শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার সম্মুখীন হবে। যার ফলে পরবর্তী জীবনে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি হাঁপানির প্রবণতাও বাড়বে। একই সাথে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে একাধিক জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ২.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা শিশু ও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কয়লা থেকে জ্বালানি সরবরাহও ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।