মমতাদেবী, বিজেপিকে ঘৃণা করলেই ভোটে জিতবেন, এমন ভাবার কারণ নেই; এ মোদী আর সে মোদী নেই
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তেই।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তেই। বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে ঘরছাড়া তৃণমূল সমর্থকদের ফেরানোর উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী যে বিক্ষোভ অবস্থান করেন সেখানে তিনি গর্জে উঠে দু'টি কথা বলেন যা তাৎপর্যপূর্ণ। এক, তিনি বিজেপির মতো দলকে ঘৃণা করেন এবং দুই, হারানো কেন্দ্রগুলি তিনি পরের বিধানসভা নির্বাচনেই জিতে দেখিয়ে দেবেন। বিপক্ষ বিধানসভায় একটি আসনও পাবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য রাজনীতিতে বহু লড়াইয়ের সাক্ষী। ভোটবাক্সের লড়াই তো বটেই, মারামারি-হেনস্থার রাজনীতিও তিনি কম করেননি। একসময়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবল দাপুটে বামেদের বিরুদ্ধে তিনি এক বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই যুদ্ধে জিতেওছিলেন।
কিন্তু এবারে তাঁকে যেন কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছে। এবং সেই দৌর্বল্য ঢাকতে তিনি আরও মরিয়া হয়ে আক্রমণ করছেন বিজেপিকে। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা ভালো করেই জানেন যে যেভাবে তাঁর নিজের তৈরী ঘর ভাঙছে তাতে দু'বছরের মধ্যে তা মেরামতি করা সহজ কাজ হবে না। দু'হাজার ষোলোতে অতবড় জয়ের তিন বছরের মধ্যে অবস্থা যে এমন বিপরীতে চলে যাবে তা তৃণমূল নেত্রী স্বপ্নেও ভাবেননি।
অযথা বিজেপির বিরুদ্ধে নৈতিক লড়াইয়ের অবস্থান নিচ্ছেন মমতা
বিজেপির উপরে যে তাঁর যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়বে তা স্বাভাবিক। কিন্তু মমতা যেখানে বড় ভুল করছেন তা হল বিজেপির বিরুদ্ধে একটি নৈতিক অবস্থান নিয়ে। একদা বামেদের বিরুদ্ধে তিনি নৈতিকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক লড়াইও লড়েছিলেন কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর কোনও রাজনৈতিক লড়াইয়ের নীলনকশা এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি একটি সাম্প্রদায়িক অভিযোগের ভিত্তিতেই লড়ছেন কিন্তু এটা বুঝতে চাইছেন না যে নরেন্দ্র মোদী ২০০২ থেকে অনেকটা দূর এসে গিয়েছেন। গুজরাত দাঙ্গা,মুসলিমবিরোধী ইত্যাদির মধ্যে থেকে মোদীকে আজ আর হারানো সম্ভব নয়। যাকে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করেন, সেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষও এখন আর এই মোদী-বিরোধিতার তত্ত্ব মানতে নারাজ। অতএব, বিজেপিকে ঘৃণা করার কৌশল নিলে তৃণমূল নেত্রীকে আরও কোনঠাসা হতে হবে আজকে।
একসময়ে দীনেশ ত্রিবেদীকেই হেয় করেছিলেন মমতা, এখন তাঁর হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন
অন্যদিকে, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীর পক্ষে মমতা কথা বলছেন ঠিকই, হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন যে হারানো কেন্দ্র তিনি ফের ফেরত আনবেন দলের কাছে, কিন্তু এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে একসময়ে রেলমন্ত্রীর দায়ভার পেয়ে দীনেশবাবুই যখন দলকে সঠিক অর্থনৈতিক পথ দেখাতে চেয়েছিলেন, মমতা খোদ তাঁকে সরিয়ে সবার সামনে হেয় করেছিলেন। সেই যাত্রায় মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করেন মমতা কিন্তু জনমানসে তাঁর ভাবমূর্তি তাতে খাটোই হয়।
রাগারাগি এবং হঠকারী রাজনীতি করে মমতা আজ সাধারণ মানুষের নৈকট্য হারিয়েছেন। আর তাই রেগে যাচ্ছেন "জয় শ্রীরাম" স্লোগান শুনে। তেড়ে যাচ্ছেন বিজেপি সমর্থকদের দিকে যা একজন গণতান্ত্রিক নেত্রীর পক্ষে মোটেই শোভাব্যঞ্জক নয়। রাজনৈতিক আদর্শে ফারাক থাকা মানেই মারমুখী হয়ে ওঠা নয় তা মমতাকে কে বোঝাবে?
তিনি আছেন আপাতত তাঁর মধ্যেই।