রাহুল-প্রশ্নেই দ্বিমত স্ট্যালিনের সঙ্গে! ধাক্কা খেল মমতার তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ
রাহুল-প্রশ্নেই দ্বিমত স্ট্যালিনের সঙ্গে! ধাক্কা খেল মমতার তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান কংগ্রেসকে ছাড়া অ-বিজেপি জোট গড়তে। সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলিকে জোটবদ্ধ করে তিনি নেতৃত্ব দিতে চান বিরোধী ঐক্যের। কিন্তু তাঁর সেই অভিষন্ধি বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের শিবসেনাকে কাছে পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানে সফল হননি। এবার তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কেও তিনি নিজের দিকে আনতে পারলেন না।
কংগ্রেসকে ছাড়া মমতার জোটে আস্থা নেই
অন্তত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে যে মিলন মেলার আয়োজন হয়েছিল, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে তৈরি হয়েছে সেই জল্পনা। তবে কি স্ট্যালিনেরও সায় নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিরোধী জোটে। তিনিও শিবসেনার মতো চান, কংগ্রেসকে রেখেই বিরোধী জোট গড়তে। কংগ্রেসকে ছাড়া মমতার জোটে তাঁদের আস্থা নেই।
কংগ্রেস-ডিএমকের জোট আরও সঙ্ঘবদ্ধ
কংগ্রেসের সঙ্গে এম কে স্ট্যালিনের মৈত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এম করুণানিধির সময় থেকেই ডিএমকের সঙ্গে কংগ্রেসের সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। তা আজও আগের মতোই অটুট। ডিএমকে সুপ্রিমো তো ২০১৯-এ লোকসভার আগে রাহুল গান্ধী আমার নেতা বলে সম্বোধন করেছিলেন। আর তারপর থেকে কংগ্রেস-ডিএমকের জোট আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে। কোনও চিড়ও ধরেনি বিগত তিন বছরে।
কংগ্রেসকে নিয়ে পথ চলা অটুট ডিএমকের
কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ডিএমকে ৩৯টির মধ্যে ৩৭টি আসন জিতেছিল। প্রায় ১০০ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছিল তারা। তারপর ২০২১-এ প্রভূত প্রাধান্য নিয়ে এআইএডিএমকে-কে সরিয়ে তামিলনাড়ুর ক্ষমতা দখল করেছে ডিএমকে। ডিএমকে-কংগ্রেসের একসঙ্গে পথচলায় কোনও সমস্যা হয়নি। তাঁরা কংগ্রেসকে নিয়ে পথ চলা অটুট রেখেছে। সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচনেও দেখা গিয়েছে দুই দল হাত ধরাধরি করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে।
বাংলার ভেঙে গিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলায় তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে যে ব্যবধান রচিত হয়েছিল, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ তামিলনাড়ুতে। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস-ডিএমকে জোটের পথ চলা দীর্ঘস্থায়ী। তা মসৃণ গতিতে চলেছে। বাংলার মতো হোঁচট খায়নি বারবার। ২০১১-তে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল ৩৪ বছরের শাসক বামফ্রন্টকে হারিয়েছিল। কিন্তু দু-বছরের মধ্যেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেঙে যায়।
মমতার তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ
তারপর থেকে কংগ্রেস রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতা বাড়ালেও জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-তৃণমূলের সখ্যতা বরাবর ছিল অটুট। কিন্তু বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের প্রতি খড়্গহস্ত। জাতীয় ক্ষেত্রেও কংগ্রেস বিরোধিতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি সরাসরি কংগ্রেসকে ছাড়া জোটের ডাক দিয়েছেন। আঞ্চলিক দলগুলিকে এক করে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার কথা জানিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিবাচক সাড়া পাননি
মমতার বিজেপি বিরোধিতার সঙ্গে বহু আঞ্চলিক দলের মিল হলেও কংগ্রেস বিরোধিতায় আবার অনেকেই বেঁকে বসছেন। ফলে মমতার নেতৃত্বের বিরোধী জোট জমছে না। ২০২৪-এর ভোট আর নিদেনপক্ষে দু-বছর বাকি। কিন্তু এখনও বিজেপি বিরোধী জোট বিশ বাঁও জলে। এনসিপি, শিবসেনার কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাব রেখেছিলেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাননি।
শিবসেনা-এনসিপি আমল দেয়নি মমতার প্রস্তাবে
শিবসেনা তো স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছিল, কংগ্রেসকে ছাড়া জোট চান না তাঁরা। শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত স্পষ্ট করে দেন, কংগ্রেসকে নিয়েই বিজেপি বিরোধিতা করতে হবে। কারণ কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোটের সে অর্থে কোনও গুরুত্ব নেই তাঁদের কাছে। এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারও মমতার প্রস্তাব সে অর্থে ততটা আমল দেননি।
মমতা-স্ট্যালিনে দ্বিমত কি তাহলে কংগ্রেসের প্রশ্নে
হালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটবদ্ধ লড়াই করতে উৎসাহী। সম্প্রতি রাজ্যপাল প্রসঙ্গে উভয়ের অবস্থান একই। বিজেপি বিরোধিতাতেও তাঁরা এরইসুরে কথা বলছেন। কিন্তু তাঁরা দ্বিমত কি তাহলে কংগ্রেসের প্রশ্নে। কংগ্রেসের মিত্র ডিএমকে। কিন্তু তৃণমূল এখন কংগ্রেসকে ছাড়া চলতে চাইছে। সেখানেই মতানৈক্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিরোধীদের মিলন মেলায় নেই মমতা, প্রশ্ন
তা না হলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধু স্ট্যালিনের আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে গেলেন না। যেখানে বিরোধী শিবিরের সব নেতাদের আগমনে নক্ষত্র সমাবেশ ঘটেছিল, সেখানে নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন তিনি আমন্ত্রিত নন, আর আমন্ত্রিত হলেও কেন তিনি গেলেন না, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। তিনি সম্প্রতি স্ট্যালিনের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার জোট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু বিরোধীদের মিলন মেলায় সেই মমতাকেই দেখা গেল না।
যাঁদের উপস্থিত, যাঁদের অনুপস্থিতিতে সংশয়
বিশেষজ্ঞমহল এমন প্রশ্নও তুলেছেন, তবে কি স্ট্যলিনের আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী মধ্যমণি হয়ে ছিলেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপস্থিত থাকলেন। নাকি রাহুল থাকবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হল না। অনুষ্ঠানে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জগনমোহন রেড্ডি অনুপস্থিত ছিলেন।
UP Election 2022: ফের উত্তর প্রদেশে যাচ্ছেন মমতা! এবার অখিলেশের সঙ্গে প্রচার বারাণসীতে