মেইন প্রশ্ন ৫: ডোনাল্ড ট্রাম্প-পরবর্তী মার্কিন নির্বাচনী রাজনীতিতে কি বদল আসন্ন?
এবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে বলা হচ্ছে বিতর্কিত, কদর্য। রিপাবলিকান প্রদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তো শুরু থেকেই একের পর এক বোমা ফাটাচ্ছিলেন নিজের দলের শিবিরকে ঘায়েল করেই, কিন্তু তাঁর সর্বশেষতম স্ক্যান্ডালটি সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করে ট্রাম্প এখন রিপাবলিকানদের মধ্যেও চরম বিভ্রান্তি তৈরী করেছে। নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে ট্রাম্পের এই পাহাড়প্রমাণ বিতর্কের পাশে যথেষ্ট স্বচ্ছ মনে হলেও তাঁর প্রার্থীত্ব নিয়েও যে অনেক মানুষই ক্ষুব্ধ, তা এখন আর অজানা নয়। আর বাকি যে দুই ছোট দলের প্রার্থী রয়েছেন লড়াইতে গ্রে জনসন এবং জিল স্টেন, তাঁরা যে ফলাফলে বিশেষ তফাৎ করতে পারবেন না সেটাও সবারই জানা।
তবে কি আমেরিকার ভবিষ্যৎ ট্রাম্প এবং হিলারির মধ্যেই আটকে যাবে? অনেককেই বিষয়টি রীতিমতো আতঙ্কিত করে তুলেছে। একদিকে 'বদ্ধ পাগল' ট্রাম্প, আরেকদিকে 'অসুস্থ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত' হিলারি বিশ্বের সবচেয়ে মহাশক্তিধর দেশের ভবিষ্যৎ নেতা এঁদের মধ্যেই একজন?
এই দুশ্চিন্তায় জন্ম দিয়েছে আরও একটি প্রশ্নের: তাহলে কি সময় হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদল রাজনৈতিক ব্যবস্থার আরও গণতন্ত্রীকরণ ঘটানো?
বর্তমান ব্যবস্থায় ভারসাম্যের এতটাই অভাব যে লিবার্টেরিয়ান এবং গ্রিন পার্টির মতো দলগুলিকে নেহাতই দুধ-ভাত মনে করে প্রধান দু'টি দলের সমর্থকরা। আর ছোট দু'টি দলের নেতৃত্ব মনে করেন বড় দল দু'টির মধ্যে আদৌ কোনও পার্থক্য নেই কিন্তু নিজেদের আধিপত্যের সুযোগ নিয়ে তারা ছোট দলগুলিকে ব্রাত্য করে রাখে।
আগামী মাসের 'মেইন প্রশ্ন ৫' খুব প্রাসঙ্গিক
এই প্রশ্নে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আগামী মাসে সেদেশের মেইন প্রদেশে হতে চলা ক্রমপর্যায়-নির্ভর নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর গণভোট (যাকে 'মেইন প্রশ্ন ৫' হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে)। 8ই নভেম্বর হতে চলা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং মাইনের অন্যান্য প্রাদেশিক নির্বাচনের সময়ই হবে এই গণভোট। এই ব্যবস্থা মাফিক, একাধিক প্রার্থীর ভোট গোনাগুনতি না করে ক্রমপর্যায়ে প্রার্থীরা কত ভোট পেয়েছেন তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পর্যায়ক্রমে প্রার্থী চয়ন নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়া বা আয়ারল্যান্ড বা মার্কিন মুলুকেরই অনেক স্থানীয় নির্বাচনে এই নিয়ম চালু রয়েছে। ট্রাম্প পরবর্তী সময়ে হয়তো মার্কিন রাজনীতির সর্বোচ্চ নির্বাচনেও শুরু হবে এই ব্যবস্থা।
কী এই ব্যবস্থা?
গণতন্ত্রের সংখ্যাগুরু নিয়ম বজায় রেখেও ভোটারদের দুই প্রার্থীর (বিশেষ করে দুই জনই যদি 'গ্রহণযোগ্য' না হন) মধ্যে আবদ্ধ না রাখাটাই এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। নিয়মটি সহজ। ভোটদানের সময়ে ভোটাররা তালিকাতে যে ক'জন প্রার্থী রয়েছেন লড়াইতে, তাঁদের নিজের নিজের পছন্দমতো ১,২,৩ এভাবে চয়ন করতে পারেন।
যদি কোনও একজন প্রার্থী সংখ্যাগুরু ভোটারদের প্রথম পছন্দ হন, তবে তো তিনি সোজাসুজি জয়ী ঘোষিত হবেন। কিন্তু যদি তা না হয়, তবে প্রক্রিয়াটি আরেকটু দীর্ঘায়িত হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম দুই স্থানাধিকারী প্রার্থীর মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার হবে। শেষ স্থানে থাকা প্রার্থী চলে যাবেন লড়াইয়ের বাইরে (এলিমিনেশন) এবং তাঁর পাওয়া ভোটগুলি চলে যাবে তাঁর আগের স্থানে থাকা প্রার্থীর ঝুলিতে।
এইভাবে কাটাকুটি চলতে থাকবে যতক্ষণ না প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শুধু দুইজন প্রার্থী থাকেন। এবং সাধারণভাবেই, যিনি জিতবেন তাঁর ঝুলিতে সংখ্যাগুরু ভোটই থাকবে। এই ব্যবস্থার ভালো দিকটি হলো যে বড় দলগুলির একাধিপত্য কিছুটা হলেও খর্ব হবে, বিশেষ করে যদি তাদের পক্ষে দাঁড়ায় ট্রাম্পের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রার্থী। আর ছোট দলগুলিও তার ফলে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে। গণতন্ত্রের মৌলিক নিয়মও বজায় রইল আবার সব দলই লড়াইয়ের সমানাধিকার পেল।
আর যেহেতু এই ব্যবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি হবে, তার কারণে বিভিন্ন দল এবং তাদের প্রার্থীদের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞান বাড়বে। ট্রাম্পের মতো প্রার্থীদের উত্থান কম হবে। মার্কিন গণতন্ত্র হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।