ঠিক ভোটের মুখে আদবানির নীতিজ্ঞান; গত পাঁচ বছরে মুখ খুললেন না কেন?
গত ৪ এপ্রিল, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চল্লিশতম প্রতিষ্ঠা দিবসের দু'দিন আগে একটি ব্লগ লিখলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি।
গত ৪ এপ্রিল, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চল্লিশতম প্রতিষ্ঠা দিবসের দু'দিন আগে একটি ব্লগ লিখলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। এবং পাঁচশোর সামান্য কিছু বেশি শব্দের ওই ব্লগে তিনি পরোক্ষে আক্রমণ চালালেন বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে। বললেন, মতামত ব্যক্ত করার স্বাধীনতার কথা। বললেন, বিজেপির বিরুদ্ধ মত পোষণ যারা করে, তাদেরকে বিজেপি প্রতিপক্ষ বলে মনে করলেও শত্রু বলে মনে করেনি। বলেছেন তাঁর সারাজীবনের মন্ত্র ছিল: "সবার আগে দেশ, তারপরে দল এবং শেষে নিজে।" বিজেপির প্রতি সদস্যকে নিজের অন্তর্দৃষ্টিকে সজাগ করতে বলেছেন, জানিয়েছেন মননের কথা জানবার গুরুত্ব।
দলের প্রবীণতম নেতার কাছ থেকে এই শব্দবন্ধনী অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। দলের মার্গদর্শনের জন্যে বহু যুদ্ধের সৈনিক আদবানি তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কথা বর্তমান প্রজন্মকে শোনাতেই পারেন। এভাবেই তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মেধা-উদ্যোগ-জ্ঞান হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু আদবানির এই কথাগুলি শুনতে আরও বিশ্বাসযোগ্য লাগত যদি তিনি গত পাঁচ বছরে এগুলি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে উচ্চারিত করতেন। যখন নরেন্দ্র মোদী সরকার নানা বিষয়ে নানা সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, তখন আদবানিকে কোনও কথা বলতেই শোনা যায়নি -- কী বিরোধীদের উদ্দেশে, কী নিজের দলের প্রতি। চোদ্দ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে বসে পড়েন নব্বইয়ের ঘরে পা রাখা আদবানি।
কিন্তু আজকে, নিজের বহুদিনের কেন্দ্র গুজরাতের গান্ধীনগরে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়ার টিকিট না পেতেই তিনি প্রথমে ক্ষুণ্ণ হন, এবং তার পরে গর্জে ওঠেন। তাঁর প্রতি এবং তাঁর মতো বয়সী নেতাদের প্রতি দলের ব্যবহার মেনে নিতে পারেননি নাকি তিনি।
যদি দল নিজের আগে হয়, তবে আদবানি দলের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না কেন?
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি দলের নীতি থাকে যে ৭৫ বছরের বেশি বয়সী নেতাদের নির্বাচনে লড়ার টিকিট দেওয়া হবে না, তাহলে আদবানির উচিত ছিল তা মাথা পেতে মেনে নেওয়ার। গত পাঁচ বছরে উনি বিশেষ কথা সংসদে বলেননি আর এবারে জিতলেও যে তার খুব অন্যথা হত, তা নয়। তবে কেন তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন? নিজেই তো বলছেন স্ব-এর আগে দল; তাহলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না কেন?
দ্বিতীয় কথা, আদবানি যদি সত্যিই একজন স্টেটসম্যানের ভূমিকা পালন করতে চান এখন তাহলে তাঁর উচিত সবসময়েই সরকারের সামনে আয়না তুলে ধরে নৈতিকতার প্রহরীর কাজ করা। কিন্তু তিনি যে পথটি ধরলেন, তা সুবিধাবাদের। একজন বর্ষীয়ান নেতা হিসেবে গত পাঁচ বছরে "বিজেপির বিরুদ্ধ মত পোষণ করা মানে রাষ্ট্রদোহীতা নয়" কথাটি একটি বারও বললেন না। বললেন কখন? ঠিক নির্বাচনের আগে, যখন দেখলেন এতদিনের পাওয়া টিকিটটি আর তাঁর হাতে এসে পৌঁছয়নি। তাহলে, শেষ হিসেবে আদবানিও যে ওই নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতেই লালায়িত, সে কথা বললে কি অত্যুক্তি হয়?