কোন প্রেক্ষাপটে শুরু হয় আন্দোলন! জানুন মে দিবসের সংগ্রামী ইতিহাসের খুঁটিনাটি
মহান মে দিবস আদতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পরিচিত। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ সরকারি ছুটির দিন।
মহান মে দিবস আদতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পরিচিত। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ সরকারি ছুটির দিন। শ্রমজীবী মানুষের কাছে আজ এই দিনটির আলাদা করে কোনও গুরুত্ব উপলব্ধি করা না গেলেও আজ থেকে ১৩২ বছর আগে এক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শিল্পাঞ্চল এলাকায় ধর্মঘট করেন। আট ঘণ্টার বেশি কাজ করানোর প্রতিবাদ করেন। এছাড়া আরও নানা দাবি ছিল।
আন্দোলের সূত্রপাত
শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে সেদিন বিশাল শ্রমিক জমায়েত হয়। বিক্ষোভে দেখালে গুলি চালায় পুলিশ। যার ফলে ১১-১২ জনের মৃত্যু হয়। এর থেকেই সারা বিশ্বে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ এক সুরে প্রতিবাদ জানান।
সরকার দাবি মেনে নেয়
অবশেষে ১৯০৪ সালে অ্যামস্টারড্যামে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মিছিল ও শোভাযাত্রা করে। বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষ পয়লা মে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রমজীবী মানুষের চাপে পড়ে সরকার আট ঘণ্টা কাজের দাবি মানতে শেষ অবধি বাধ্য হয়। পরে আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে মে মাসের প্রথম দিনটি শ্রমজীবী দিবস হিসাবে পালন শুরু হয়।
নানা দেশে মে দিবস পালন
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন, কিউবা-সহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দেশগুলিতে পয়লা মে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজনও করা হয়। ভারতে দুই একটি এমার্জেন্সি ক্ষেত্র ছাড়া সমস্ত শ্রমজীবী সেক্টর, অফিস মে দিবসে বন্ধ থাকে। আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমদিবস পালিত হয়।
শ্রমিকদের দুর্দশা
উনিশ শতকের প্রথম দিকে শ্রমিকদের প্রতি মুহূর্তে শোষিত হতে হতো মালিকপক্ষের কাছে। সপ্তাহে ছয় দিন দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করার পর জুটত সামান্য মজুরি। এছাড়া কাজ করানো হতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, যেখানে রোগ-ব্যাধি ও মৃত্যু লেগেই থাকত। তখন শ্রমিকদের কোনও সংগঠন ছিল না যারা শ্রমিকদের কথা মালিকপক্ষের কাছে বলবে।
অবশেষে সাফল্য
এরই পাশাপাশি সারা বিশ্বে তখন শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে সমাজতন্ত্র ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মালিক ও শাসক শ্রেণির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। তারপর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে মে দিবস পালন শুরু হয়।