জুহিকে নিয়ে দু’ভাগ রাজ্য বিজেপি, চন্দনার মুখে নেতা-নেত্রীর নামে অস্বস্তি চূড়ান্ত
জুহিকে নিয়ে দু’ভাগ রাজ্য বিজেপি। বিজেপির মহিলা মোর্চা নেত্রীর এই অজ্ঞাসবাস এক পক্ষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। অন্যপক্ষ চাইছে জুহি অজ্ঞাসবাসেই থাকুন।
জুহিকে নিয়ে দু'ভাগ রাজ্য বিজেপি। বিজেপির মহিলা মোর্চা নেত্রীর এই অজ্ঞাসবাস এক পক্ষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। অন্যপক্ষ চাইছে জুহি অজ্ঞাসবাসেই থাকুন। আরও একজন বিজেপি নেত্রী গ্রেফতার হোক চাইছেন না তাঁরা।[শিশুপাচারে সিআইডি নজরে বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলছেন দিলীপ]
বিজেপি-র এই বিভাজনে একদিকে সাংসদ-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। অন্যদিকে সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি শিশু পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তী সব দায় জুহির ঘাড়ে চাপানোর পরও বিজেপি রাজ্য সভাপতি তাঁর অবস্থান থেকে এক বিন্দুও সরতে রাজি নন।[চন্দনাদেবীকে নিয়ে পৃথক সংস্থা খুলে দত্তক ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী!]
তিনি সাফ জানিয়েছেন, জুহি যদি শিশুপাচারকাণ্ডে জড়িত হন, তবে কিছুতেই তাঁর পাশে থাকবে না দল। কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হতে হবে জুহি শিশুপাচারে জড়িত। কেননা রাজ্যে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনও ঘটনায় বিরোধী কোনও নেতা-নেত্রীর নাম উঠলেই তাঁকে আগে জেলে ভরার রাজনীতি চলছে। যে কোনওভাবে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের ফাঁসানোই রাজ্যের শাসকদলের মূল উদ্দেশ্য।[টার্গেট কুমারী মায়েরা, সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই বিক্রি হয়ে যেত চন্দনা চক্রবর্তীর 'আশ্রয়' থেকে!]
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, আইনের মুখোমুখি হতে গিয়ে অহেতুক জুহি জেলে যাক আমি চাই না। আমি অনুমতিও দেব না আত্মসমর্পণের। সেরকম হলে সঠিক সময়ে তাঁকে সিআইডির কাছে হাজির করা হবে বলে জানানো হয়েছে বিজেপি-র তরফে। দিলীপবাবুর কথায়, আমি চাই শিশু পাচারের তদন্ত নিরপেক্ষভাবে এগোক। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল তা চায় না।[স্টেশনের ভবঘুরে শিশুদের হোমে নিয়ে এসে সুযোগ বুঝে বিক্রি করে দেওয়া হত!]
জলপাইগুড়ি শিশু পাচারকাণ্ডে যিনি মূল অভিযুক্ত, তিনি এখন শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কোনও কারণে বিজেপি নেত্রীর কাছে সাহায্য চাইতে এলেন, তা বলে সেই নেত্রী জড়িয়ে গেলেন এ তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী নই। একজন অভিযুক্তের মুখে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের নাম উঠে আসছে। তা নিয়ে তো আগে তদন্ত করতে হবে। দোষী হলে তখন গ্রেফতারের ব্যাপার। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন চাইছে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীর নাম যখন উঠেছে, আগেই গ্রেফতার করতে।['আমি নিরাপরাধ, আসল অপরাধী জুহিরাই', শিশুপাচারকাণ্ডে বোমা ফাটালেন চন্দনা চক্রবর্তী]
শিশু পাচারকাণ্ডে জুহি চৌধুরীর নাম ওঠার পর থেকেই তাঁর কোনও খোঁজ মিলছে না। তিনি চলে গিয়েছেন অন্তরালে। এই অজ্ঞাতবাসকে সমর্থন করছেন না বলে জানান বিজেপির সাংসদ-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি চান অভিযোগ যখন উঠেছে, সামনাসামনি এসে আইনি পথেই মোকাবিলা করা উচিত। এভাবে নিজেকে অন্তরালে রেখে নিজের ও দলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন জুহি। এই আত্মগোপন করে থাকা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। এভাবে কোনও সমস্যার সমাধান হবে না। দিনের পর দিন সমস্যা বাড়বে।
জুহি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুগামী। তাঁর প্রতি দুর্বলতা রয়েছে রূপার। সেই হেতু তাঁর সমর্থন রয়েইছে জুহির এই আত্মগোপন করে থাকা নিয়ে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ এটাই যে বিজেপি রাজ্য সভাপতি স্বয়ং এই আত্মগোপন করে থাকাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন।
তিন নেতা-নেত্রী তাঁদের মত ব্যক্ত করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ রাজ্যে বিজেপির ছোট সংসারেও ফাটল দেখা দিয়েছে। তিন বিধায়ক ও দুই সাংসদের সংসারে এখন পরিকাঠামো ভেঙে খান খান।
এর আগে টেট মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। এবার জুহিকে শিশুপাচারকাণ্ডে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করার চক্রান্ত চলছে। বিজেপি চাইছে না, জুহিকে সিআইডি গ্রেফতার করুক। তাই তাঁর আত্মগোপনে বিজেপি-র একটা অংশের সায় রয়েছে। তলে তলে জুহি যাতে জামিন পেতে পারে সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। তাই মনে করা হচ্ছে, তার জামিন পাওয়ার পথ পরিষ্কার হয়ে গেলে তিনি হয়তো আত্মসমর্পণ করবেন। জুহি বর্তমান বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েই তিনি দু'বছরের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান।
বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত জুহি। সিআইডি-র সমস্ত দিকই খোঁজ নিচ্ছে। তাঁর সঙ্গে কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন সিআইডি আধিকারিকরা। সিআইডি জানতে পেরেছে জুহি তিন বছর চন্দনা চক্রবর্তীর সংস্থার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি এই সংস্থা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছিল বলেও জানিয়েছেন চন্দনা চক্রবর্তী। জুহির সঙ্গে এই বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই দিল্লি দরবার করছিলেন তিনি।
সেখানেই কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে জুহির সঙ্গে যান চন্দনাদেবী। চন্দনা দেবীর কথায়, তিনি কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হননি। পাশের ঘরে জুহিই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। জলপাইগুড়ি শিশুপাচারকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত চন্দনাদেবীর মুখে বিজেপি নেতানেত্রীদের নাম কিন্তু নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলতে চলেছে।