ভারতের প্রথম বৃহন্নলা বিচারক বাংলারই বাসিন্দা, লড়াইয়ের কাহিনি গর্বিত করবে সব বাঙালিকে
জয়িতা মন্ডল ভারতের প্রথম বৃহন্নলা বিচারকের মর্যাদা পেয়েছেন।
জয়িতা মন্ডল। কলকাতায় জন্ম এই রূপান্তরকামী মানুষটি নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন। ভারতের প্রথম বৃহন্নলা বিচারকের মর্যাদা পেয়েছেন তিনি। বছর ২৯এর জয়িতার জন্ম কলকাতায়। জন্মের সময় নাম ছিল জয়ন্ত। তা থেকে জয়িতায় উত্তীর্ণ হওয়ার কাহিনি বড়ই অনন্য। এই কাহিনি প্রেরণা হতে পারে ছোট থেকে বড় সকলের।
বিচারক জয়িতা
জয়িতা কোনওদিনও ভাবেননি তিনি বিচারক হতে পারবেন। রাস্তায় একসময় ভিক্ষে করতে হয়েছে। তারপর সেখান থেকে জাতীয় লোক আদালত বেঞ্চ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে নির্বাচিত হন।
ছোটবেলায় বৈষম্য
জয়িতা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে যে বৈষম্য তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে তা আজও একইরকম রয়েছে। ট্র্যাডিশনাল হিন্দু পরিবারের জন্ম হয় তাঁর। কিন্নর হওয়ায় ছোট থেকেই কটূক্তি, গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে।
স্কুলে টিটকিরি
স্কুলে বাকী ছেলেদের গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিতে হয় জয়িতাকে। দশম শ্রেণিতে স্কুল ড্রপআউট হন তিনি। কারণ লিঙ্গ নিয়ে নিয়মবিধিতে তিনি আটকে যান। পরে ২০০৯ সালে একরাশ অভিমান নিয়ে বাড়ি ছেড়ে দেন জয়িতা।
দিনাজপুর যাত্রা
সেইসময়ে মা-কে জয়িতা বলেন, তিনি কাজের সূত্রে দিনাজপুরে যাচ্ছেন। যদি ভালো না লাগে তাহলে ফেরত চলে আসবেন। যদিও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে চলে আসার পরে আর কোনওদিন কলকাতামুখো হননি জয়িতা।
সংগ্রাম ও পরিশ্রমের কাহিনি
প্রথমদিকে পথে ভিক্ষে করেছেন, বাস স্ট্যান্ডে রাত কাটিয়েছেন। হিজড়ে হিসাবে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এসব করতে করতেই বৃহন্নলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই শুরু করেন। পাশাপাশি দূরশিক্ষার মাধ্যমে নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে আইনের ডিগ্রিও হাসিল করেন জয়িতা।
পরিচয় পাওয়া
২০১০ সালে উত্তর দিনাজপুরের প্রথম বৃহন্নলা মানুষ হিসাবে ভোটার আইডি হাতে পান জয়িতা। তারপর দিনাজপুর নতুন আলো সোসাইটি তৈরি করেন। এই মুহূর্তে সেই সোসাইটির বৃহন্নলা সদস্য সংখ্যা ২২০০জন।
বৃহন্নলা সমাজের উন্নয়নই লক্ষ্য
ইসলামপুর লোক আদালতের বিচারক হিসাবে এবছরের জুলাই মাসে কাজে যোগ দিয়েছেন জয়িতা। বৃহন্নলা সম্প্রদায় থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। আপাতত তাঁর লক্ষ্য যত বেশি সম্ভব বৃহন্নলা মানুষদের কাজের জগতে প্রবেশ করানো। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিু করতে পারলেই এদের জীবন বদলে যাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।