গৌরী লঙ্কেশের মতো আর কোন সমাজকর্মীদের খুন আলোড়ন ফেলেছে
অনৈতিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে খুন হওয়ার তালিকায় নতুন সংযোজন কর্ণাটকের সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশ।
সমাজের শোষণ-অত্যাচার ও কুশাসনের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অনেকের কণ্ঠ ও কলম গর্জে উঠেছে। অনেক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধেও অনেকে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক ও সমাজকর্মী হত্যা যেন এক নতুন ট্রেন্ড। সমালোচনা ও প্রতিবাদ করলেই প্রথমে শাঁসানি ও পরে খুন হতে হচ্ছে সাংবাদিক থেকে শুরু করে সমাজকর্মীদের। অনৈতিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠে খুন হওয়ার তালিকায় নতুন সংযোজন কর্ণাটকের সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশ। তবে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাক গত কয়েকবছরে এমনভাবে আর কাদের খুন হতে হয়েছে।
গৌরী লঙ্কেশ
সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশ নিজের বাড়িতে খুন হয়েছেন। গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকছিলেন, এমন সময় দুষ্কৃতীরা এসে গুলি করে তাঁকে খুন করে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজরাজেশ্বরী নগরে। কন্নড় ভাষায় লঙ্কেশ পত্রিকে নামে একটি সাপ্তাহিক চালাতেন তিনি। তার আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনাড়ু-তে কাজ করেছেন। বাবা পি লঙ্কেশের মতোই তিনিও সাংবাদিকতার পাশাপাশি সমাজসেবা করতেন। অতি হিন্দুত্ববাদদের কড়া সমালোচক ছিলেন গৌরী।
এমএম কালবুর্গি
বছর দুয়েক আগে ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সমাজকর্মী এমএম কালবুর্গি খুন হন। লিঙ্গায়ক সম্প্রদায়ের মানুষ কালবুর্গি বরাবর উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও কুসংষ্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে গিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে তিন সর্বাতম্ক প্রচারে নামেন। তবে তাঁকেও কর্ণাটকের ধারওয়াড়ে বাড়িতে ঢুকে খুন করে দুষ্কৃতীরা।
নরেন্দ্র ধবলকর
পেশায় চিকিৎসক হলেও দুনিয়া তাঁকে চেনে সমাজকর্মী হিসাবে। মহারাষ্ট্রের এই মানুষটি কুসংষ্কার, অন্ধবিশ্বাস ও কালাজাদুর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে ২০১৩ সালের ২০ অগাস্ট খুন হন। পরের বছর সমাজসেবায় অনবদ্য অবদানের জন্য তাঁকে মরণোত্তর পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়। এমনকী ধবলকরের মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যে কুসংষ্কার ও কালা জাদু সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্স পাশ করে মহারাষ্ট্র সরকার।
গোবিন্দ পানসারে
বামপন্থী মনোভাবাপন্ন গোবিন্দ পানসারে ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মারা হন। সেবছর ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা। তিনিও উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরোধিতায় সরব ছিলেন। নাথুরাম গডসের সমালোচনা যেমন করেছিলেন, তেমনই টোল ট্যাক্সেরও বিরোধিতা করেন পানসারে। ঘটনার দিন প্রাতঃভ্রমণ সেরে ফেরার সময়ে বাইকে চেপে দুজন দুষ্কৃতী গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান।
রামচন্দ্র ছত্রপতি
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী রামচন্দ্র ছত্রপতি ধর্ষক বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ঘটনা প্রথম সামনে আনেন তাঁর পত্রিকা 'পুরা সচ'-এ। সেখানে দুই সাধ্বীর গোপন জবানবন্দি ছাপেন তিনি। যার ভিত্তিতে পরে সাজা পেয়েছে ধর্ষক রাম রহিম। তবে সেই ঘটনার একমাসের মাথায় ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তিনি।