পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘে নয়া উদ্যোগ; সমর্থন জানাল না জাপান
পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গৃহীত হল নিরস্ত্রীকরণ প্রস্তাব; তীব্র প্রতিবাদ আমেরিকা সহ নিরাপত্তা পরিষদের চার সদস্যের; ভারত বিরত থাকল
দুনিয়াকে বিপজ্জনক পরমাণু অস্ত্র থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘ একটি নতুন চুক্তি বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে৷ গত বৃহস্পতিবার (অক্টোবর ২৭) রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার একটি কমিটিতে পরমাণু অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা লাগু করার মর্মে একটি ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়৷
অস্ট্রিয়া,আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের পক্ষ থেকে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ১২৩টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে পড়ে ৩৮টি ৷ ষোলোটি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে ৷ সংবাদসূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর দেশগুলি এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং রাষ্ট্রসংঘে যাতে এই উদ্যোগের বিপক্ষেই বেশি ভোট পড়ে, তার জন্যেও তারা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে৷
ভোটদানে বিরত থাকল ভারত, পাকিস্তান এবং চিন
বর্তমান দুনিয়াতে নয়টি পরমাণু শক্তিধর দেশ রয়েছে এবং তাদের মধ্যে চারটিই (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ৷ অন্যদিকে, চীন, ভারত এবং পাকিস্তান ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ৷ উল্লেখ্য, প্রতিবাদী চারটি দেশই রাষ্ট্রসংঘের চালিকা শক্তি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ৷
প্রস্তাবটির পক্ষে বলা হয়েছে যে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার উদ্দেশে এই নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হবে ৷ পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার মানবসভ্যতার পক্ষে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তার কথা মাথায় রেখেই এই নতুন চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷
কৌশলগত মিত্র ওয়াশিংটনকে খুশি করতেই টোকিওর বিরোধিতা?
তবে আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে সবচেয়ে বিস্মিত করেছে জাপানের এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া৷ জাপানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যে পরমাণু আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং বারবার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সওয়াল তুলে এসেছে ৷ সেই জাপানের এই ভিন্নাবস্থানে অনেকে অবাক হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, কৌশলগত মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতেই টোকিওর এই সিদ্ধান্ত ৷ পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার আরেক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দেয় ৷
পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে চিনের উপস্থিতি এবং উত্তর কোরিয়ার পরমাণু শক্তি হিসেবে উত্থানের ফলে আজ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেদের সুরক্ষিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন ৷ তাই রাষ্ট্রসংঘে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার চুক্তি সম্পাদনা করার থেকে তাদের আমেরিকাকে তুষ্ট রাখা অনেক বেশি দরকার ৷
ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু এবলিস নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বিট্রিস ফিন বলেন যে রাষ্ট্রসংঘের এই ভোটাভুটি দুনিয়াকে পরমাণু-শক্তি মুক্ত করার লক্ষ্যে এক বড় পদক্ষেপ, জানিয়েছে এএফপি সংবাদ সংস্থা ৷
তিনি বলেন যে যদিও এর ফলে দুনিয়া রাতারাতি বিপম্মুক্ত হবে না কিন্তু আশা করা যায় যে অন্তত পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সচেতনতা বাড়বে এবং নিরস্ত্রীকরণের পথে হাঁটবে বিভিন্ন দেশ, জানিয়েছে এএফপি ৷
নভেম্বর মাসের শেষাশেষি বা ডিসেম্বরের প্রথমদিকে এই প্রস্তাবটির উপরে সাধারণ সভায় একটি পুরোদস্তুর ভোটাভুটি হবে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি৷