জলপাইগুড়িতে ভোট ১৮ এপ্রিল: চা-শ্রমিকদের দুর্দশাই অস্ত্র বাম, কংগ্রেসের
আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা। সারা দেশের ৯১টি আসনে ওই দিন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দু'টি -- কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার।
আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা। সারা দেশের ৯১টি আসনে ওই দিন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দু'টি -- কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার। নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা, অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল এই রাজ্যের তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে -- জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং রায়গঞ্জ।
আজ দেখা যাক জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের পরিস্থিতি। প্রথমদিকে কংগ্রেসের দাপট থাকলেও ১৯৮০ থেকে ২০১৪ -- দীর্ঘ ৩৪ বছর জলপাইগুড়িতে ছড়ি ঘোরায় সিপিএম এবং গত লোকসভা নির্বাচনে বামেদের এই গড় থেকে তাদের উৎখাত করে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজয় চন্দ্র বর্মন প্রায় ৭০,০০০ ভোটে হারান ২০০৯-এর জয়ী প্রার্থী সিপিআইএম-এর মহেন্দ্র কুমার রায়কে। তৃতীয় স্থান দখল করে বিজেপির সত্যলাল সরকার, দু'লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়ে। প্রথম তিন থেকে ছিটকে যায় কংগ্রেস; তাদের প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা পান ৯০,০০০-এরও কম ভোট।
জলপাইগুড়িতে লড়াই চতুর্মুখী; তবে প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল-বিজেপি
জলপাইগুড়িতে এবারের লড়াইও সেই চতুর্মুখী। তৃণমূল এবারেও দাঁড় করিয়েছে বিদায়ী সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মনকে। গতবার বেশ ভালোভাবে জিতলেও বিজয়বাবু এবারে তাঁর মনোনয়নপত্র পেশ করেছেন পঞ্জিকা-তিথি-নক্ষত্র বিচার করেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একপেশে দাপটের সময়ে বিজয়বাবুকে ফের একবার ফেবারিট মনে হলেও বিজেপি যে এবারে ছেড়ে কথা বলবে না তা তারা বুঝিয়েছে বারেবারেই।
অতীতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারামন এবং গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলপাইগুড়িতে এসে প্রতিপক্ষে বার্তা দিয়ে যান যে বিজেপি এই কেন্দ্রটিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না। বিশেষ করে ধুঁকতে থাকা চা-শিল্পকে কেন্দ্র করে তারা শক্তিশালী করতে চাইছে মমতা-বিরোধিতা।
বিজেপি এবার দাঁড় করিয়েছে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জয়ন্ত রায়কে
বিজেপি এবার যাঁকে জলপাইগুড়ি থেকে প্রার্থী করেছে সেই জয়ন্ত রায়েরও স্থানীয় ভাবমূর্তি ইতিবাচক। পেশায় চিকিৎসক এবং সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ জয়ন্তবাবুর সঙ্গে বিজেপির সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও পরিবারের তরফ থেকেই তাঁর প্রার্থীত্বের পরামর্শ দেওয়া হয়।
যদিও বিজেপির একাংশের উদ্বেগ রয়েছে রাজনৈতিক কোনও ব্যক্তিত্বকে বিজয় চন্দ্রের বিরুদ্ধে না দাঁড় করানো নিয়ে, কিন্তু জয়ন্তবাবুর পরিষ্কার ভাবমূর্তি এবং রাজবংশী সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা ভোটবাক্সে ইতিবাচক প্রতিফলন ফেলবে বলেই দলের আরেক অংশের আশা। বিজয় চন্দ্রের সঙ্গে জয়ন্ত রায়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভালো হলেও তৃণমূল শেষোক্তজনকে ভোটের ময়দানে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
বামদের তাস তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলের বিরুদ্ধে চা-শিল্প নিয়ে ক্ষোভ
তবে আপাতদৃষ্টিতে তৃণমূল এবং বিজেপির লড়াই হিসেবে এবারের নির্বাচনকে দেখা হলেও বামেদের একদম অবজ্ঞা করাও হয়তো উচিত হবে না জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে। রাজ্যের এবং কেন্দ্রের শাসকদল হিসেবে তৃণমূল এবং বিজেপি -- এই দুই দলের বিরুদ্ধেই অসন্তোষ দানা বেঁধেছে চা শ্রমিকদের মধ্যে। এবং সেটাই অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাম এবং কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সুবিধা।
সিপিএম-এর শিক্ষক প্রার্থী ভগীরথ রায় ইতিমধ্যেই তৃণমূল এবং বিজেপিকে এই নিয়ে বিঁধেছেন। বলেছেন তিনি নিজে একজন গরিব কৃষক পরিবারের সন্তান হয়ে বোঝেন কী যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন চাষী-খেতমজুররা; তুলেছেন নারী সুরক্ষা নিয়েও। ২০১৪ সালে বামেরা জলপাইগুড়িতে হারলেও তাঁদের ভোট শতাংশ ছিল ৩২-এরও বেশি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জলপাইগুড়ির সাতটি কেন্দ্রের পাঁচটিতে বামেরা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। অতএব, এবারে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার উপরে নির্ভর করে বামেরা ভালো কিছু করার আশা করতেই পারে জলপাইগুড়িতে।
কংগ্রেসের তরফে জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়েছেন চা-বাগান শ্রমিকদের জাতীয় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মণি কুমার ডার্নাল এবং তিনিও তৃণমূল এবং বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন চা-শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে চেষ্টা না করায়। তবে জলপাইগুড়িতে তাদের নির্বাচনী অবস্থান যখন একই, তখন বাম-কংগ্রেসের জোট না হওয়ার ফলে ওই কেন্দ্রে তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।
[আরও পড়ুন:নিজের রাজ্যে মোদীকে আক্রমণে তৈরি ! মমতার সম্ভাব্য 'অস্ত্র' একনজরে]