স্বাধীনতার জন্য গর্জে উঠেছিল কলম, ত্যাগ করেছিলেন নাইট উপাধি, ইলিশ ভাপার দুর্বলতা কাটাতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ
এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য এই সম্মান পেয়েছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একাধিকবার তাঁর কলম গর্জে উঠেছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করে নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়কে তিনি বার বার উৎসাহিত করতেন। তিনি কবিগুরু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াইয়ে তাঁর অবদান নতুন করে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তারপরেও তাঁর একটি বিশেষ পরিচয় ছিল। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ভোজন রসিক রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঠাকুর বাড়ির রন্ধনশালায় নানা ধরনের খাবারের সুগন্ধে ভরে উঠত। কথিত রয়েছে, বেশিরভাগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে। তিনি দেশে, বিদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতেন। সেখান থেকে একাধিক রান্নার প্রণালী শিখে আসতেন। ঠাকুর পরিবারের রন্ধনশালায় সেগুলো আয়োজন করা হতো। তবে রবি ঠাকুরের সব থেকে পছন্দের খাবারের তালিকায় ছিল দেশী খবার। ভাপা ইলিশ, পায়েস। ঠাকুর পরিবারের রন্ধনশালা কবিগুরুর নির্দেশে ক্রমেই পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছিল। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথের পছন্দের খাবারের তালিকায় চিতল মাছ, মুগ ডাল ও চিংড়ির মালাইকারী রয়েছে। এছাড়াও তিনি মিঠা কাবাব, হিন্দুস্তানী কাবাব, চিকেন নাসি কাবাব খেতে পছন্দ করতেন। শোনা যায়, তিনি সুক্তো দিয়ে খাবার শুরু করতেন। মিঠা পান দিয়ে সেই খাবার শেষ করতেন।
কবি সম্বর্ধনা বরফি
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ৫০ তম জন্মদিনের ভোজ সভায় নতুন একটি মিষ্টি তৈরি করা হয়েছিল। এই মিষ্টির নাম দেওয়া হয়েছিল 'কবি সম্বর্ধনা বরফি'। বিখ্যাত বিজ্ঞানী হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। সম্পর্কে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নী। অসাধারণ রান্না করতেন বলে সেই সময় প্রজ্ঞাসুন্দরীর খ্যাতি ছিল যথেষ্ঠ। তিনি এই কবি সম্বর্ধনা বরফি তৈরি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তো সেই মিষ্টি ভালো লেগেছিল। এছাড়াও নিমন্ত্রিতরা স্বাদে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী জানিয়েছিলেন, ফুলকপি দিয়ে তিনি এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন।
স্বাস্থ্য সচেতন রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ একদিকে যেমন সুস্বাদু খাবার খেতেন। তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্য এমন অনেক কিছু খেয়েছেন, যা এখনও সাধারণ মানুষ খেতে পারবেন না। কেউ একজন তাঁকে বলেছিলেন, কাঁচা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এরপরেই তিনি শুধু নুন আর মরিচগুড়ো দিয়ে কাঁচা ডিম খেতে শুরু করেছিলেন। তিনি কয়েকমাস প্রতিদিন প্রায় কাঁচা ডিম খেয়েছিলেন। তবে পরে কেউ তাঁকে এসে বোঝান, কাঁচা ডিম শরীরের জন্য উপকারী নয়। উপকারী সবজি। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ সুস্বাস্থ্যের জন্য নিম পাতার একটি বিশেষ সরবত তৈরি করেছিলেন। প্রতিদিন তিনি সেই সরবৎ খেতেন।