এই বীর পুলিশ অফিসার মুখোশ খুলেছিলেন 'বাওয়ারিয়া' গ্যাং ডাকাতদের, জানুন সেই রুদ্ধশ্বাস কাহিনি
রাতের অন্ধকারে বাড়িতে আচমকা ঢুকে পড়ত কয়েকজনের ডাকাতদল। চলত নৃশংস অত্যাচার , খুন, রক্তক্ষয়। আর তারপর লুঠতরাজ।
রাতের অন্ধকারে বাড়িতে আচমকা ঢুকে পড়ত কয়েকজনের ডাকাতদল। চলত নৃশংস অত্যাচার , খুন, রক্তক্ষয়। আর তারপর লুঠতরাজ। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ,কর্ণাটকের হাইওয়ের নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে এভাবেই চলেছে একের পর এক ডাকাতি। সরকারি রেকর্ড বলছে ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ এই ডাকাতদের আতঙ্কে থমথমে হয়ে গিয়েছিল ওই এলাকা। তারপর এক রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে নামে তামিলনাড়ু পুলিশ, যার অন্যতম নায়ক ছিলেন ইন্সপেক্টর জেরানেল এস আর জাঙ্গিড়। তাঁর অসামান্য বীরত্বের কাহিনি উঠে আসে দক্ষিণী ছবি 'থিরান অধিগারম অন্দুরু'-তে। দেখে নেওয়া যাক, কেমন ছিল সেই কাহিনি ।
শুরুর ঘটনা
গোটা তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে তখন ডাকাতদের ভয়ে আতঙ্কে হাইওয়ের ধারে থাকা একাধিক গ্রাম। গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন বহু মানুষ। ডাকাতদের ভয়াবহ রূপ অনেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন করেছে। অনেকের প্রিয়জনের রক্তপাত দেখে আর নিজেরে ঠিক রাখতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে কিছুতেই পুলিশ ঠাওরাতে পারছে না কোন গ্যাং এমন নৃশংস খুন ও ডাকাতি করছে।
খুন রাজনৈতিক নেতা
প্রায় ১০ বছর টানা গ্রামের পর গ্রাম লুঠতরাজের পর রীতিমত চিন্তায় পড়ে প্রশাসন। এমন সময় সালেমের কংগ্রেস কমিটি প্রেসিডেন্ট থালামুথু নটরাজন ও ডিএমকে নেতা গজেন্দ্রনের বাড়িতেও ডাকাতি হয় । শুধু তাই নয় ডাকাতদের হাতে খুন হন তাঁরা। নড়েড়ে বসে প্রশাসন। প্রায় গোটা দক্ষিণ ভারত থেকে চিরুনি তল্লাশি করেও কোনও তথ্য পায়না পুলিশ। এরপর পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামেন ইন্সপেক্টর জেরানেল এস আর জাঙ্গিড়।
[আরও পড়ুন:গুলিবিদ্ধ হয়েও জঙ্গিদের খতম করেন শহিদ 'মেজর' কৌস্তভ, ফুল বিছানো পথে শেষবিদায়]
চলে তদন্ত
২০০৫ সালে শুরু হয় অপরেশন। পুলিশের কাছে তথ্য আসে , দক্ষিণ নয় ভারতের অন্য অংশ থেকে আসছে ডাকাতরা। শুরু হয় খোঁজ। টিম নিয়ে উত্তর ভারতের পথে রওনা হন ইন্সপেক্টর জেরানেল এস আর জাঙ্গিড়। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। যোগাযোগ হয় উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গে। খোঁজ আসে সেখানে কনৌজে এলাকার। প্রকাশ্যে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রুদ্ধশ্বাস লড়াই
পরিবার পরিজন ছেড়ে দিনের পর দিন তদন্তের স্বার্থে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা ডাকদের খোঁজে নেমে পড়েন ইন্সপেক্টর জেরানেল এস আর জাঙ্গিড়। এমন সময়ে তিনি জানতে পারেন বাওয়ারিয়া গ্যাং এর ডাকাতদের কথা। এরপর ইউপি টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে কনৌজে তল্লাশি অভিযানে যায় জাঙ্গিড়ের টিম। গ্রেফতার হয় সস্ত্রীক বাওয়ারি নামের ডাকাত। সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেফতার হয় তার সাগরেদরা। জানা যায়, লরি নিয়ে দক্ষিণভারত যেত তারা। সেখানে হাইওয়ের আশপাশের গ্রাম লুঠ করত এই গ্য়াং। ওদের ধারণা ছিল দক্ষিণ ভারতের মানুষ সোনা বেশি পরেন, তাই তাঁদের বাড়িতেও থাকবে অনেক সোনা। আর সেজন্যই সেখানে চলত রক্তাক্ত ডাকাতি।
সম্মানিত হন অফিসার জাঙ্গিড়
পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ মেডেলে ভূষিত হন অফিসার জাঙ্গিড়। পরবর্তীকালে তিনি ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পদে আসীন হন। এদিকে, ইন্সপেক্টর জেরানেল এস আর জাঙ্গিড়ের এই বীরত্বের কাহিনি অবলম্বনে তামিল ছবি 'থিরান অধিগারম অন্দুরু' নির্মিত হয়। ছবিতে নাম ভূমিকায় ছিলেন।