ঘূর্ণিঝড় সামলানোর নিখুঁত পরিকাঠামোই বারবার বাঁচিয়ে দিচ্ছে ওড়িশাকে
১৯৯৯ সালে ওড়িশার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল সুপার সাইক্লোন। আর সেই ঘূর্ণিঝড় প্রাণ নিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের। ২০০০ সালে যখন নবীন পট্টনায়েক ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তখন থেকেই তিনি প্রথম যে কাজটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শুরু করেছিলেন, তা হল - রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ঢেলে সাজানোর কাজ। যাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় রাজ্য সরকার সঠিক ভাবে মোকাবিলা করতে পারে। গত দেড় বছরে ওড়িশা পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় ফণী বাদ দিলে বাকি সবক'টি ক্ষেত্রেই ওড়িশায় প্রাণহানির সংখ্যা অত্যন্ত কম।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বাড়ি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। সবমিলিয়ে ১০টি জেলার ৮৯টি ব্লকের ১৫০০টি পঞ্চায়েতের প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে যতদিনে ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে এসেছে, ওড়িশা সরকার ততদিনে আগাম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল। মানুষকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে সমস্ত রকমের আগাম প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছিল। এবং যাতে একজন মানুষেরও মৃত্যু না হয় তা ওড়িশা সরকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।
আবহাওয়া দপ্তর সতর্কবাণী দেওয়ার পরই ওড়িশা সরকার ঘূর্ণিঝড় নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা হয়। তাদেরকে সাইক্লোন সেন্টারে এনে রাখা হয়। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং জাতীয় মোকাবিলা বাহিনী একসঙ্গে অনেকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ঝড়ের দিন সকালের মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে কয়েক লক্ষ মানুষকে সরিয়ে আনা হয়।
তবে সরকারের সামনে প্রতিকূলতাও অনেক ছিল। যে জায়গাগুলিকে আগে ঘূর্ণিঝড়ের আশ্রয়স্থল করে রাখা হতো সেই জায়গাগুলিতে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে তার মধ্যেও ওড়িশা সরকার পদক্ষেপ করে। বুধবার বিকেলে যখন ওড়িশা হয়ে ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে তার পরপরই ৮৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ ঠিক করে দেওয়া গিয়েছিল। এবং ঝড়ের পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ সরিয়ে ফেলা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীকে এই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানিয়েছেন ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব অসিত কুমার ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের দিক থেকে ওড়িশা দেশের মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা একটি রাজ্য। গত দেড় বছরে আমরা পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় সামলেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কথা হয়েছে তখন আমরা জানিয়েছি কীভাবে রাজ্যটিতে ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধকারী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।
এই বন্দোবস্ত দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ওড়িশা সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এমন সুন্দর ব্যবস্থা থাকার ফলেই ওড়িশায় বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। যেভাবে ওড়িশা সরকার মানুষকে উদ্ধার করেছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে এবং পরবর্তী ব্যবস্থাপনা চালিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য।
শুধু তাই নয় ওড়িশা সরকারের এই কাজ মানুষের জানা উচিত বলেও প্রধানমন্ত্রী মত প্রকাশ করেছেন। আগামিদিনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলাতে এই ওড়িশা মডেলকে দেশের সামনে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হবে। এবং তার একটি ডকুমেন্টেশন তৈরি করে অন্য রাজ্যগুলিকে দেওয়া হবে। যাতে তারা এই মডেল অনুসরণ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিজেদের রাজ্যকে রক্ষা করতে পারেন।