সুপ্রিম কোর্টের এই রায়গুলি ২০১৭-কে চিরস্মরণীয় করে রাখবে
এবছরের সেরা আইনি নির্দেশগুলি কী কী ছিল তা এবার দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
২০১৭ সালটি ভারতীয় আইনের নিরিখে এক উল্লেখযোগ্য বছর। সমাজের একাধিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী রায় শুনিয়েছে। বিসিসিআইয়ের শীর্ষ পদে রদবদল থেকে শুরু করে তিন তালাক নিয়ে ঐতিহাসিক রায় শুনিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এবছরের সেরা আইনি নির্দেশগুলি কী কী ছিল তা এবার দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
অপসারিত অনুরাগ
জানুয়ারিতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি অনুরাগ ঠাকুরকে শপথভঙ্গ ও আদালতে মিথ্যা বচনের অভিযোগে বিসিসিআই পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। লোধা কমিটির সুপারিশ নিয়ে বেশ কিছুদিন বিতর্ক চলার পর বোর্ডের টালবাহনার পর এই পদক্ষেপ নেয় সর্বোচ্চ আদালত। বিনোদ রাইকে সভাপতি করে লোধা কমিটির সুপারিশ মেনে নতুন কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়। এবং জানানো হয়, সত্তরোর্ধ্ব কাউকে প্রশাসক পদে বসানো যাবে না।
[আরও পড়ুন:গুগলে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি কী ট্রেন্ড করেছে জানেন কি]
আধার নিয়ে রায়
আধার কার্ড নিয়ে শত বিরোধিতার মধ্যেও গত মার্চে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে, মোবাইল সংযোগ নিতে ও আয়কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এর আগে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারি নানা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালত শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের স্বপক্ষেই মত দান করে। এমনকী মনরেগা, গ্যাস ভর্তুকি, রেশন গণবণ্টন ও জনধন যোজনার মতো ক্ষেত্রে আধার কার্ডের ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানানো হয়।
দোষী সাব্যস্ত শশীকলা
আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন প্রয়াত জে জয়ললিতা ঘনিষ্ঠ শশীকলা নটরাজন। চার বছরের জন্য তাঁকে জেলে পাঠায় আদালত। বিচারপতি পিসি ঘোষ ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় শোনায়। সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত শশীকলাকে ১০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।
গ্রেফতার কারনান
আদালত অবমাননার জেরে এই প্রথম গ্রেফতার হয়ে ছয় মাসের জেল খাটলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিএস কারনান। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করে। এর আগে স্বাধীন ভারতে কর্মরত কোনও বিচারপতিকে এভাবে সাজা দেওয়া হয়নি।
নারদ তদন্তে সময় সিবিআইকে
নারদকাণ্ডে গত মার্চে সিবিআই তদন্তই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। খারিজ হয়ে যায় রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের আবেদন। শুধু তাই নয়, সিবিআই তদন্তের সময়সীমাও বাড়িয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্ট যেখানে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সময়সীমা দিয়েছিল তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য, সুপ্রিম কোর্ট তা বাড়িয়ে একমাস করে দেয়।
বাবরি কাণ্ডে আদবানিদের বিরুদ্ধে মামলা
বাবরি মসজিদ ধ্বংসে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চলবে বলে গত এপ্রিলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআইয়ের আবেদনেই সম্মতি দেয় শীর্ষ আদালত। জানানো হয়, ২ বছরের মধ্যে মামলার রায় দেওয়া হবে। ৮৯ বছরের আদবাণী, উমা ভারতী এবং মুরলী মনোহর যোশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১৯৯২ সালে তাঁদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী কর্মী ও করসেবকরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। রায়বরেলিতে এফআইআরে নাম রাখা হয়েছিল আডবাণী, জোশীদের।
নির্ভয়া কাণ্ডে রায়
মে মাসে নির্ভয়াকাণ্ডে ৪ দোষীর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। দিল্লিতে, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে নৃশংসভাবে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনায় পরে মারা যান নির্ভয়া। সুপ্রিমকোর্ট ঘটনাকে 'নৃশংস' বলে ব্যাখ্যা করে। যদিও দোষীদের এখনও ফাঁসি হয়নি।
তিন তালাক রায়
তিন তালাক প্রথাকে গত অগাস্ট মাসে রদ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রথাকে অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিনজন এই প্রথা অসাংবিধানিক বলে মত দেন। বলা হয়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তালাক দিলে মহিলারা আদালতে আবেদন করলে তা সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন আইন তৈরি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার
গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নিয়ে বড় রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। আধার সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে এই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আধারের বিষয়টিও ভালো করে খতিয়ে দেখতে বলে।
নাবালিকার সঙ্গে সহবাস ধর্ষণ
নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে তা এবার থেকে ধর্ষণ বলে গণ্য হবে বলে অক্টোবরে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের ফলে ১৮ বছরের কম বয়সী বিবাহিত মহিলাদের সঙ্গে সহবাস করা আইনত নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। শীর্ষ আদালত জানায়, সহবাসে সম্মতির বয়স কখনই ১৮ থেকে কমিয়ে ১৫ বছর করা যায় না। ১৮ বছরের কমে বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে তা ধর্ষণেরই সমতুল বলে বিবেচিত হবে।