'দেশ'-কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই, রূপকথা তৈরি করেছেন অদ্রিজা
অপেক্ষার পালা শেষ করে এবার মাতৃ বন্দনায় মেতে উঠতে চলেছে গোটা দেশ। মাতৃশক্তির আরাধনার পরতে পরতে মিশে থাকে নারী শক্তির প্রতি সম্মানের প্রতিশ্রুতি।
অপেক্ষার পালা শেষ করে এবার মাতৃ বন্দনায় মেতে উঠতে চলেছে গোটা দেশ। মাতৃশক্তির আরাধনার পরতে পরতে মিশে থাকে নারী শক্তির প্রতি সম্মানের প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতিকে কুর্নিশ জানায় 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা'। আর এমন ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা'-র 'জয়ং দেহি রূপং দেহি' বিভাগে আজ তুলে ধরা হচ্ছে অদ্রিজা সেনের এক অসমান্য লড়াইয়ের কাহিনি। যে কাহিনির প্রতিটি অধ্যায়ে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর ফাউন্ডেশন 'দেশ'। এদেশের বীর শহিদ জওয়ানদের পরিবারের সদস্যদের যন্ত্রণা কিছুটা ভাগ করে নেয় অদ্রিজাদের 'দেশ'। কতটা চড়াই উতরাই পেরিয়ে সাফল্যের সঙ্গে 'দেশ'কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অদ্রিজা, শুনে নেব তাঁর কাছ থেকেই...
এই যাত্রার শুরুটা কীভাবে হয়?
সালটা তখন ১৯৯৯। সেই সময়ে সংবাদপত্রে কার্গিল যুদ্ধে শহিদ কণাদ ভট্টাচার্যের কথা পড়ি। আমায় খুব ছুঁয়ে যায় তাঁর মৃত্যু। আমি তখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। সংবাদপত্রে প্রতিটা দিন সেই সময়ে শহিদদের কথা পড়তাম আর ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। দেশের সেবার স্বপ্ন দেখতাম।
তারপর কীভাবে চলে এই যাত্রাপথ?
আমি পরবর্তীকালে সেনায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েও সেটা আর শেষমেশ হয়নি। এরপর ২০০৪ সালে বি.টেক পাশ করে চাকরি, তারপর বিয়ে ... হঠাৎই এরপর একদিন আমার পুরনো বান্ধবী অনুসূয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়, যে অনসূয়ার (মিত্র) সঙ্গে টিউশনে পড়াকালীন স্কুল লাইফে কার্গিল যুদ্ধ তথা শহিদ পরিবারদের নিয়ে আলোচনা হত। ঠিক করলাম দেশ সেবার স্বপ্ন এত সহজে নষ্ট হতে দেব না। তখন থেকে শহিদদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করলাম আমরা।
এরপর কীভাবে এগিয়েছেন?
শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হতেই তাঁদের বাড়িতে যাওয়া যেমন শুরু করলাম আমি আর অনুসূয়া। গড়ে উঠল আত্মীয়তা। প্রচুর স্নেহ ভালোবাসা পেলাম। এরপর থেকেই 'দেশ' -এর মতো একটা ফাউন্ডেশন তৈরির পথে এগিয়ে যাই।
'দেশ' কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সফরটা কেমন ছিল?
এই আত্মীয়তা গড়ে উঠতে থাকায়, আমি আর অনুসূয়া ঠিক করি, শহিদ পরিবারের সদস্যদের যন্ত্রণাকে মানুষের কাছে তুলে ধরব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। বহু শহিদ পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা আমরা ফেসবুকে তুলে ধরি 'দেশ'প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
দেশকে কীভাবে ব্যখ্যা করবেন?
'দেশ' কিন্তু কোনও এনজিও নয়, এটা একটা পরিবার। যেখানে শহিদ পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন, আর সিভিলিয়নরাও রয়েছেন। এখানে দেশের বীর শহিদদের পরিবারের সদস্যদের ব্যথা, কষ্ট যেমন ভাগ করে নেওয়া হয়, তেমনই তাঁদের প্রয়োজনে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হয়। এছাড়াও সেনার অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সদস্য রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। এমনও অনেক সেনা আমাদের পরিবারের সদস্য , যাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়েছেন। এই সফর আমাদের সকলের ..
কেউ যদি 'দেশ'-এর সদস্য হতে চান, তাহলে কীভাবে এগোতে হবে?
শুধুমাত্র শহিদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করে, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে। যিনি চাইছেন সদস্য হতে, তাঁকে শুধু তাঁর বাড়ির আশেপাশে কোনও শহিদ পরিবার থাকলে , তাঁদের খোঁজ নেওয়া বা সঙ্গ দিতে হবে। ব্যাস! এটুকুই.. একটা ঘটনার কথা বলি.. উরি হামলায় শহিদ হন সিপাহি গঙ্গাধর দলুই, সিপাহি বিশ্বজিৎ ঘরাই। তাঁদের পরিবার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা।ওঁরা জানতেনও না যে ভারতীয় সেনার তরফে তাঁদের কী কী পরিষেবা পাওয়ার কথা। সেকথা জানতে পেরে আমরা এগিয়ে আসি। আমি নিজে তাঁদের কমান্ড হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছি একবার।
এই উদ্যোগে ভারতীয় সেনাকেও কি পাশে পান?
হ্যাঁ! নিশ্চয়ই। ওনারা অনেকেই বলেন , 'দেশ' তাঁদের পরিবারের সঙ্গে থাকায় তাঁরা নিশ্চিন্ত।
'দেশ'কে নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত লড়াইটা কেমন ছিল?
যখন ভারতীয় সেনায় যোগ দিতে গিয়ে সাফল্য পাইনি, তখন অনেকেই বলেছিল, 'আর না'..। এরপর 'সেফ কেরিয়ার'-এর দিকে ঝুঁকতে হয়। সেভাবে তখন উৎসাহ পাইনি নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এটাকে হয়তো একটা বাধা বলা যেতে পারে..
আর এখন যেভাবে সফল্য পাচ্ছেন তা নিয়ে কী বলবেন?
আমার মনে হয় সেনার শহিদ জওয়ানরাও বোধ হয় আমাদের সঙ্গে কোথাও না কোথাও রয়েছেন। অদ্ভুত এক শক্তি নিয়ে তাইই আমরা এগিয়ে যেতে পারছি। ধরুন,.. অনেকদিন ধরে কোনও শহিদ পরিবারকে আমরা খুঁজছি, ঠিক কোথাও না কোথাও গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।
আপনাদের এই পথ চলা.. 'দেশ'-এর এই পথ চলার প্রেরণা কে?
প্রেরণা এই শহিদ পরিবাররের সদস্যরাই। জানেন.. আমি পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি শুধুমাত্র 'দেশ'-কে আরও পোক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসাবে গড়ে তুলব বলে। আমাদের কিন্তু কোনও আয় নেই। যা করি , তা আন্তরিকভাবে করে থাকি। আমার বা আমাদের পাওনা বলতে... 'দেশ'-এর জন্য কাজ করে খুব শক্তি পাই,একটা অদ্ভুত মনের জোর পাই।
যাঁরা ধরুন আপনার মতো স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের কী বার্তা দেবেন?
একটাই কথা বলব, দেশকে ভালোবাসুন। তোমায় যে সেনায় যোগ দিতেই হবে, তা নয়। বিভিন্ন ভাবে দেশের সেবা করা যায়। শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের সেবা করা যায়।...(একটু থেমে) সেনা জওয়ানরা নিজের যাবতীয় স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের জন্য লড়ছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে থাকাটাও প্রাসঙ্গিক কম নয়। মনে রাখতে হবে আমার ছেলেমেয়ে আজ যে বাবার স্নেহ পাচ্ছে, কোথাও হয়তো কোনও বাচ্ছা একটা মেয়ে কিন্তু বাবার সেই স্নেহটুকুও হারিয়েছে, কারণ তার বাবা দেশ সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ভারতীয় সেনার সদস্য হিসাবে। সেই বাচ্ছা মেয়েটার পাশে দাঁড়ানোটাই তো জরুরি..
সামনেই দুর্গাপুজো , উৎসবের মেজাজ চারিদিকে, এরকম একটা সময়ে শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি আপনি কোন বার্তা দেবেন?
এমন পরিবারের কাছে নত মস্তকে হাত জোর করে বলব, তাঁদের পরিবারে বীর সদস্যের যে আত্মত্যাগ , তা তো আমাদেরই জন্য..সুতরাং আমরা চিরকৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে। আমরা সবসময়ে তাঁদের পাশে আছি।